নিউ মার্কেটে আগুন: ভেজা-নষ্ট হওয়া মালপত্র নিয়ে রাস্তায় দোকানিরা
১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১১:১১
ঢাকা: ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) ভবনের দোতলার ২৪ নম্বর দোকান থেকে সব মালপত্র বের করে শাহনেওয়াজ হলের সামনে স্তূপ করে বসে আছেন ব্যবসায়ী মো. মনসুর কবীর। নির্বাক, হতভম্ব এ ব্যবসায়ী অপলক তাকিয়ে ছিলেন আগুনে পুড়তে থাকা মার্কেটটির দিকে। আশপাশে তার মতো অসংখ্য ব্যবসায়ী নিজ নিজ দোকানের মালপত্র বের করে এনে রাস্তায় স্তূপ করে রেখেছেন। চুরি যাওয়ার ভয়ে পাহারা দিচ্ছেন নিজেরাই।
মনের অবস্থা খারাপ জেনেও কাছে গিয়ে হালহকিকত জিজ্ঞেস করতেই মো. মনসুর কবীর এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সেহেরি খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। সকাল সাতটার দিকে আগুনের খবর পেয়ে মার্কেট আসি। লোকজন দিয়ে ধরাধরি করে মালপত্র নামিয়েছি। কিন্তু যাদের দোকান ওই সাইডে (উত্তর-পশ্চিম কোনে) তাদের মালপত্র পুড়ে গেছে।’
‘ঈদ সামনে রেখে সবাই দোকানভর্তি মালপত্র তুলেছিল। হঠাৎ করেই এই আগুন। গত ৩০/৪০ বছর ধরে নিউ মার্কেটে ব্যবসা করছি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আগে কখনও পড়িনি। এবার কি যে হল, বুঝতে পারছি না। বঙ্গবাজার পুড়ে ছাপ হয়ে গেল। আজ নিউমার্কেটে আগুন। এর কারণটা ঠিক বুঝতে পারছি না’— বলেন মো. মনসুর কবীর।
শান্ত মেজাজের মনসুর কবীর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে নিজের দুঃখ-কষ্টের কথাগুলো বলে গেলেও অন্যদের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। রীতিমতো আতঙ্ক এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে দোকানিদের মধ্যে। আগুন লাগা ভবন থেকে মালপত্র নামিয়ে রাস্তায় রাখছেন, এমন একজন দোকানির সঙ্গে কথা বলতে গেলে, তিনি রীতিমতো দুর্ব্যবহার শুরু করেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।
‘আপনাদের সঙ্গে এখন কী কথা বলব। আপনারা মন-মানসিকতা বোঝেন না? কী বলব, কী শুনতে আইছেন? আগুন লাগাইছে সরকারের লোক। আর কী শুনবেন?’— বলেন ক্ষুব্ধ ওই ব্যবসায়ী।
মালপত্র পাহারারত দোকানী পরিবারের দুই নারী সদস্য এই প্রতিবেদককে অনুরোধ জানালেন সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য।
ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্য থেকে মালপত্র বের করে অসুস্থতা বোধ করছিলেন এক দোকানি। গা ভর্তি ছাই-ভস্ম, কাদা-মাটি। পুরো শরীর ভেজা। এ অবস্থাতেই মালপত্রের স্তূপের ওপর শুয়ে রয়েছেন তিনি। ওদিকে ফায়ার সার্ভিস প্রান্ত থেকে বারবার অ্যানাউন্স করা হচ্ছিল, ‘টাকা-পয়সা, মালপত্রের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। কেউ মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকি নেবেন না।’
পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে যারা মালপত্র বের করেছেন, তারা অনেকেই খোলা ভ্যান-কাভার্ড ভ্যান ও রিকশায় করে মালপত্র অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের দোকান পর্যন্ত আগুন পৌঁছেনি বা পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই, তারা মালপত্র নিয়ে রাস্তায়ই বসে আছেন। পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠিক হলে ফের দোকানে মালপত্র তুলবেন।
আগুন লাগা মার্কেটের দোতলা থেকে মালপত্র বের করে আনা আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মালপত্র বের করে এনেছি। কিন্তু এগুলো ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। মার্কেটের বারান্দায় রেখে যাওয়া মালপত্র উৎসুক জনতা পায়ে পিষে নষ্ট করে দিয়েছে।’
এর আগে, শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ মার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলায় আগুন লাগে। এরপর তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ, সেনা, বিমান বাহিনী ও বিজিবির সদস্যরাও কাজ করছেন।
সারাবাংলা/এজেড/এমও