মার্কেটে আগুন নাশকতা কি না খতিয়ে দেখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৩৫
ঢাকা: বিভিন্ন মার্কেটে আগুনের ঘটনা ষড়যন্ত্র বা নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়টি জড়িত আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখতে হবে। তারা অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটগুলোতে নজরদারিতে বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়টি জড়িত আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখতে হবে। তারা অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
সবাইকে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে, নিজস্ব উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানোর সময় অযথা ভিড় করা যাবে না।’ কোনপ্রকার বাধা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও অবহিত করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুলে যাবেন না বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের কথা। কেউ যেন ভুলে না যায় তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ভিন্ন রূপে বিরাজমান কিনা; ভিন্নরূপে তারা এ ধরনের কিছু করছে কিনা- এটা সবাইকে একটু নজরদারিতে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সেই অগ্নি সন্ত্রাসীরা এখন ভিন্ন পথ ধরল কিনা- এটা আমাদের দেখতে হবে। আগে তারা সাধারণ মানুষ পুড়িয়েছে, এখন তারা অর্থনীতি পঙ্গু করার পথে পা দিচ্ছে কিনা- সেই রহস্যটা বের করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু রাজনৈতিক দল বলে ঈদের পর আন্দোলন করবে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবে। অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে সরকারকে উৎখাত করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষগুলো কী অপরাধ করল? সাধারণ ব্যবসায়ীরা কী অপরাধ করল? সাধারণ ক্রেতারা কী অপরাধ করল?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেখানে কেনা-বেচা করেন সেই জায়গাগুলো পুড়িয়ে দেওয়া, সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ঠিক নয়। আর ব্যবসায়ীরা সারাবছর আকাঙ্ক্ষা করে বসে থাকেন এ সময় ব্যবসা করবেন। এগুলো আমার মনে হয় সহজে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।’
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির সেই একটানা অগ্নিসন্ত্রাসে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়ি, ২৯ টা ট্রেন, প্রায় আট নয়টা লঞ্চ, ৫০০ স্কুল, ৭০টা সরকারি অফিস, ছয়টা ভূমি অফিস তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল। ৩ হাজার ২০০ মানুষকে তারা পুড়িয়েছে, পাঁচশ’র উপরে মৃত্যুবরণ করেছে। এখনো সেই পোড়া মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।’
পর পর আগুন লাগা সন্দেহের কারণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঠিক ছয়টার পর আগুনটা লেগেছে। এটার ওপর নজরদারিটা বাড়াতে হবে, অন্যান্য মার্কেটগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। যদিও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রতিটি মার্কেটকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু পর পর চারটা দুর্ঘটনা যদি আমরা দেখি তাহলে এটা কি আসলেই কোনো দুর্ঘটনা! নাকি এর পেছনে কোনো কারসাজি আছে?’
সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শুধু ঢাকা শহরে না সারাদেশের সবাইকে সতর্ক করছি। আগামীতে কেউ যাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে, সবাই সতর্ক থাকেন।’
মার্কেটগুলোতে পাহারা জোরদার এবং নিজস্ব আগুন নেভানোর ব্যবস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে দোকান মালিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় আগুন লাগছে। ওই সময়টা তাদের পাহারার ব্যবস্থা করা উচিত। প্রতিটি দোকানে নিজস্ব লোক রাখা দরকার, তাদের সতর্ক থাকা দরকার। আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস যায়, তবে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনাও থাকতে হবে।’
কোথাও আগুন লাগলে সেখানে অহেতুক ভিড় করে কাজে বাধা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগুন লাগলে দেখার জন্য মানুষের ভিড় কমাতে হবে। দাঁড়িয়ে না দেখে সবাই যদি এক বালতি করে পানি নিয়ে আসে তাও তো আগুনটা নেভাতে সাহায্য হয়। সেটা না করে সবাই দেখতে আসে, সেলফি তোলে, ফটো তোলে, এটা কি ধরনের কাজ!’
যারা কাজে বাধা দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে যারা কাজ করবে, কাজে যেন কেউ বাধা দিতে না পারে। আর যারা বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ফায়ার সার্ভিসের কাজে যারা বাধা সৃষ্টি করে তাদের সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর যারা ফায়ার সার্ভিস ভেঙেছে, যারা বাধা দিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের শাস্তি দেওয়া হবে।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হয়। সভায় গাজীপুর সিলেট রাজশাহী খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নসহ কয়েকটি পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মেয়র ও চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।
সভা শুরুর আগে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতারা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
সারাবাংলা/এনআর/এমও/পিটিএম