ভূমি উন্নয়ন কর সেবা দিতে মন্ত্রণালয়ের ৯ নির্দেশনা
১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৫৫
ঢাকা: ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর সফলভাবে কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তাদের ৯টি দিক নির্দোশনা দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে।
আলাদা দু’টি পরিপত্র জারি করা হয়। এরমধ্যে একটিতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কিত সাধারণ নির্দেশ এবং দ্বিতীয়টি ডিজিটাল ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা অপারেট করার ধাপ ও উপায় সম্পর্কিত নির্দেশ।
এরমধ্যে ভূমি মালিকগণও ‘অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ ও আদায় বিষয়ক নির্দেশনায় সরাসরি অংশীজন। এখানকার ৯টি অনুচ্ছেদ এবং সংশ্লিষ্ট উপঅনুচ্ছেদে প্রদত্ত নির্দেশনা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকলে ভূমি মালিক অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের সময় তার সেবা পাওয়ার অধিকারের বিষয়ে সচেতন থাকতে পারবেন। তারা আরও জানতে পারবেন ভূমি কর্মকর্তারা তাদের কি বিষয়ে সেবা দিবেন এবং সেবা দেওয়ার সময় কি বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন। এই নির্দেশনাগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১. অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে নাগরিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে করণীয়:
১.১ একজন ভূমি মালিক নাগরিক নিবন্ধন করে খতিয়ান যুক্ত করার সর্বোচ্চ ০৭ (সাত) কার্য দিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নিজ দাপ্তরিক আই.ডি. থেকে উক্ত হোল্ডিং যাচাই ও সমন্বয়পূর্বক অনুমোদন করবেন। এর ব্যত্যয় হলে তা অদক্ষতা হিসেবে গণ্য করা হবে।
১.২ নাবালক বা প্রবাসী ভূমি মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে তাদের নাগরিক নিবন্ধনে নাবালক বা প্রবাসীর জন্মনিবন্ধন বা পাসপোর্ট দিয়ে নাগরিক নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে। নাবালক বা প্রবাসীর আইনানুগ অভিভাবক বা প্রতিনিধির মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ব্যবস্থা করবেন।
১.৩ খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিকের নাম জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে মিল না থাকা এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে রেকর্ডে স্বামীর নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম ইত্যাদি কারণে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের আবেদন বাতিল করা যাবেনা।
২. মালিকের নামে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়:
২.১ শুধু হোল্ডিংধারী ভূমি মালিকের নামে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে হবে।
২.২ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধকারী বা ভাড়াটিয়ার নাম দাখিলায় যুক্ত করা যাবে না।
৩. ব্যক্তির ক্ষেত্রে আংশিক ভূমি উন্নয়ন কর আদায়:
যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে কোন একজন মালিক নিজ অংশের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে চাইলে নামজারির (মিউটেশন) মাধ্যমে আলাদা হোল্ডিং তৈরি করতে হবে।
8. জমির ব্যবহারভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর আদায়:
৪.১ গ্রামের বাড়িগুলো পাকা ভিটির না হলে কৃষিজমি হিসেবে গণ্য করে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে হবে। কিন্তু যদি রেকর্ডে বাড়ি উল্লেখ থাকে কিংবা বাস্তবে বাড়িটি পাকা ভিটির হয়, তাহলে আবাসিক হারে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারিত হবে।
৪.২ একই দাগের জমি আংশিক কৃষি ও আংশিক অকৃষি (শিল্প, বাণিজ্য ইত্যাদি) কাজে ব্যবহৃত হলে ব্যবহারের ধরণ অনুযায়ী হারাহারিভাবে ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণপূর্বক আদায় করতে হবে।
৫. অগ্রিম ভূমি উন্নয়ন কর আদায়:
৫.১ কোন ভূমি মালিক ইচ্ছে করলে বকেয়া ও হাল সনের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার পর পরবর্তী তিন বছরের ভূমি উন্নয়ন কর অগ্রিম প্রদান করতে পারবেন।
৫.২ পরিশোধিত অগ্রিমের মেয়াদের মধ্যে ভূমি ব্যবহারের ধরণে পরিবর্তন বা সরকারি নির্দেশনার কারণে ভূমি উন্নয়ন করের দাবি বেড়ে গেলে বর্ধিত হারে ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া হিসেবে আদায়যোগ্য হবে।
৫.৩ একই হোল্ডিং-এ হাল সন পর্যন্ত বা একাধিক বছরের অগ্রিম ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধিত থাকা অবস্থায় আংশিক হস্তান্তর বা উত্তরাধিকারসূত্রে নামজারি (মিউটেশন) হলে নতুন হোল্ডিংধারী হোল্ডিং গ্রহণের তারিখ থেকে নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করবেন।
৬. সংস্থার ক্ষেত্রে আংশিক ভূমি উন্নয়ন কর আদায়:
সংস্থার ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর বছরভিত্তিক আংশিক আদায় করা যাবে। আংশিক আদায়ের পর বকেয়া থাকলে ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেমে বকেয়া দাবি প্রদর্শিত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর কোনক্রমেই মাসভিত্তিক আদায় করা যাবে না।
৭. মওকুফ দাখিলা:
৭.১ ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির ক্ষেত্রে হোল্ডিং প্রতি ১০ দেশ) টাকার মওকুফ দাখিলা প্রতি বছর একবারই আদায়যোগ্য হবে। এক্ষেত্রে হোল্ডিং-এ একাধিক অংশীদার থাকলে প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে ১০ (দশ) টাকার মওকুফ দাখিলা সংগ্রহ করতে পারবেন।
৭.২ কৃষিজমির অবিভক্ত খতিয়ান বা হোল্ডিং ২৫ বিঘার ঊর্ধ্বে হওয়া সত্ত্বেও অংশীদারদের প্রত্যেকের অংশ আলাদা করে বিবেচনা করা যাবে না। কোন অংশীদার নিজের অংশ আলাদা করতে চাইলে স্বীয় নামে হোল্ডিং খুলে মওকুফ দাখিলা সংগ্রহ করবেন।
৭.৩ নিষ্কর ও ইকোনোমিক জোনের ভূমি উন্নয়ন কর বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এতৎসংক্রান্ত নির্দেশনাসমূহ যাচাইয়ের মাধ্যমে নিষ্কর এলাকা নির্ধারণ করবেন। নিষ্কর হোল্ডিং এর ক্ষেত্রে প্রতি বছর ১০ (দশ) টাকা দিয়ে মওকুফ দাখিলা নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনলাইন দাখিলায় ‘অনুমোদিত মওকুফ’ লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।
৮. পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (১৪ এপ্রিল ২০২৩) তারিখ হতে ০৭ (সাত) কার্য দিবসের মধ্যে সকল ভূমি অফিসে সংরক্ষিত অব্যবহৃত ও আংশিক ব্যবহৃত সকল দাখিলা বহি প্রত্যাহার করে কালেক্টর জেলা ট্রেজারিতে সংরক্ষণ করবেন এবং এর বিবরণী ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবেন।
৯. পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (১৪ এপ্রিল ২০২৩) থেকে শতভাগ অনলাইনে আদায়ের স্বার্থে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর সিস্টেমে ধাপ ও অঞ্চল নির্ধারণ করে প্রত্যেকটি হোন্ডিং-এর দাবি এবং মৌজাভিত্তিক দাবি শতভাগ অনলাইনে এন্ট্রি দিবেন।
উলেখ্য, ভূমি উন্নয়ন কর আদায় কার্যক্রমকে অধিকতর জনবান্ধব করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৯ মার্চ ২০২৩ তারিখ ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ভূমি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১লা বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ থেকে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ থেকে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা কার্যকর করার ব্যাপারে গত ১২ এপ্রিল এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। ফলে, গত ১লা বৈশাখ ১৪৩০, ১৪ এপ্রিল ২০২৩, থেকে বাংলাদেশে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনবান্ধব স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা স্থাপনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। একই সাথে আবহমান বাংলার ভূমি সংস্কারে যোগ হয়েছে নতুন এক অধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে land.gov.bd ওয়েব পোর্টালে নাগরিক নিবন্ধনপূর্বক ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে অনলাইনেই দাখিলা সংগ্রহ করা যাচ্ছে। ১৬১২২ নম্বরে কল করে (বিদেশ থেকে +৮৮০ ৯৬১২৩১৬১২২) অথবা সরাসরি www.facebook.com/land.gov.bd ফেসবুক পেজে মেসেজ পাঠিয়ে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর বিষয়ে কোনো কিছু জানার থাকলে প্রশ্ন করে বিস্তারিত জানা যাবে।
সারাবাংলা/জেআর/ইআ