চুক্তির ২ লাখ ২৫ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া এখনও বাকি
১৬ এপ্রিল ২০২৩ ১০:০৩
ঢাকা: বারবার চিঠি চালাচালি আর দফায় দফায় আলোচনার পর গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া শুরু করে মালয়েশিয়া। ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯২ জন বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদনের বিপরীতে গত আট মাসে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৫ জন কর্মী মালয়েশিয়া পৌঁছেছেন। বাকি প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার বাংলাদেশী কর্মীর যাওয়ার বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন।
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সংখ্যক কর্মীর মধ্যে যারা এখনও কাজ পাননি তাদের কাজ পেতে সহযোগিতা করা হবে। গতকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) হাই কমিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু করতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে দুই দেশ। এই চুক্তির পর ২০২২ সালের ২ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়। এরপর ওই বছরেরই আগস্টে বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কর্মী নেওয়া শুরু করে মালয়েশিয়া।
দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে লেবার ডিপার্টমেন্ট ৮ হাজার ৭২৭টি নিয়োগের ডিমান্ডের বিপরীতে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯২ জন বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দেয়। গত আট মাসে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৫ জন নতুন কর্মী মালয়েশিয়া যায়। বাকি প্রায় ২ লাখ ২৫,০০০ বাংলাদেশী কর্মী যাওয়ার অপেক্ষায়। হাইকমিশন আশা করছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২/৩ বছরে মধ্যে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক মোট পাঁচ লাখ নতুন বাংলাদেশী কর্মীর কর্মসংস্থান হবে।
কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় আসার পর কিছু সংখ্যক বিদেশি কর্মী সঠিক কাজ পাচ্ছে না বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিগত সোর্স থেকে জানা গেছে। তার মধ্যে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশী কর্মী সমস্যায় পড়েছেন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবহিত হয়েছে। এ বিষয়ে, হাই কমিশন নিজস্ব উদ্যোগে এবং মালয়েশিয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়ে কর্মীদের কাজ দিতে নিয়োগকর্তাকে বাধ্য করতে সমর্থ হয়েছে। বাকিদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়া সরকারের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে একজন কর্মীও কর্মহীন হবার কথা নয়। কারণ, মালয়েশিয়ায় সারা দেশব্যাপী লেবার ডিপার্টমেন্টের শাখা-প্রশাখা রয়েছে। একমাত্র তারা যদি সঠিক যাচাইবাছাই করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন অনুমোদন করেন তাহলেই বিদেশি কর্মীদের সঠিক চাকরি, কর্মপরিবেশ, আবাসন ও মজুরি নিশ্চিত হবে।
এছাড়াও, মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী দেশি-বিদেশি সব কর্মীর আইনগত সকল অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্ব লেবার ডিপার্টমেন্টের উপর এবং সে লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানকে সাংগঠনিক ও আইনগত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোন দেশের দূতাবাসের পক্ষেই শতভাগ যাচাইবাছাই করে কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে, দূতাবাসকে আবশ্যিকভাবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের উপর নির্ভর করতে হবে। এটা বাংলাদেশসহ সব সোর্সিং কান্ট্রির দূতাবাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
তবে, এক্ষেত্রে ডিমান্ড সংগ্রহকারী বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো তাদের মালয়েশিয়ার সহযোগী এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগকর্তার সঠিকতা এবং বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই করার পর শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম নিলে শ্রমিকদের কর্মহীনতার ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
আরও বলা হয়, মালয়েশিয় সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে সতর্ক করেছে যাতে দূতাবাস কোন প্রজেক্ট সাইট/কোম্পানি সরেজমিনে যাচাই করতে না যায়। সেই কূটনৈতিক পত্রে তারা জানিয়েছেন যে, মালয়েশিয়ার যে কোনো কোম্পানি পরিদর্শনের একমাত্র এখতিয়ার মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের।
এমনকি সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সভায়ও বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে এবং কর্মী নিয়োগের ডিমান্ডের যথার্থতা নিশ্চিতের দায়িত্ব মালয়েশিয়ার সরকারের বলে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনকে কোম্পানি ভিজিট থেকে বিরত থাকার জন্য পুনরায় বলেছে।
মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার বাস্তবতার বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা অবহিত আছেন উল্লেখ করে বলা হয়, মালয়েশিয়ার নতুন সরকার এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশকে অবহিত করেছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন এই কাজ আন্তরিকতা ও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সাথে শেষ করতে বদ্ধপরিকর, যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর নিরাপদ অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে।
এক্ষেত্রে, কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সবপ্রকার চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় রেখে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন শ্রমিক নিয়োগের ডিমান্ড সমূহের অনুমোদনের সত্যতা এবং নিয়োগকারীর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু কোম্পানি সরেজমিনে তদন্তের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ কার্যক্রম পরিচালনায় হাইকমিশনের অভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনায় কোন প্রকার শিথিলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না।
এ কাজে সচেতন মহল এবং সকল অংশীজনের যথাযথ দায়িত্ববোধ, পূর্ণ আন্তরিকতা ও সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
সারাবাংলা/জেআর/এমও