Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বনানীতে অটিজম বিষয়ক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০১:১৮

ঢাকা: ‘এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে আয়োজিত হলো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, বিশেষত অটিস্টিক শিশু ও তাদের পরিবারের উদ্দেশে অটিজম বিষয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত ডুফা ক্লাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশে কীভাবে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা যায় সে বিষয়ে অনুষ্ঠানটিতে বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদার ব্যক্তিরা আলোকপাত করেন।

আয়োজনটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে শিশু ও মায়েদের জন্য চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও গবেষক মো. মিজানুর রহমান কাউন্সেলিং সেশন করেন। দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ সরকারে কর্মরত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, গবেষক, বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশের বাইরের প্রথিতযশা গবেষক, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এই পর্বে তারা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত, নির্দেশনা ও গবেষণাধর্মী তথ্য, উপাত্ত তুলে ধরেন। এই পর্বের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ছিল শিশুদের মাঝে ঈদের পোশাক, খেলনা এবং বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ।

পরে উপস্থিত সকল শিশু, তাদের অভিভাবক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা ইফতারে অংশ নেন।

সবশেষে অর্থাৎ, তৃতীয় পর্বে ছিল ‘এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন’ এর ফাউন্ডারদের সঙ্গে উপস্থিত স্কলারদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের চলমান কার্যক্রম ‘রাউন্ড টেবিল সেশন উইথ ফাউন্ডার্স রো’ ও ভবিষ্যত কর্মসূচি এবং শিশুদের উন্নয়ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব।

অনুষ্ঠানটিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি অনলাইনে চারজন বিশেষজ্ঞ অতিথি যোগ দেন। এদের মধ্যে দাতা প্রতিষ্ঠান জেন ইনিশিয়েটিভ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মালাক সাব বলেন, যেহেতু অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে, সেহেতু মায়েদের নিজেদের প্রত্যাশার প্রতি যত্নবান হতে হবে। কীভাবে চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে সে বিষয়েও সচেতন হতে হবে।

তিনি ভবিষ্যতে ‘এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন’এর এ ধরনের আরও আয়োজনকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

বেইট আলফার সিইও ড. রোমেল মোর্শেদ বলেন, সমাজে অটিজম নিয়ে যত ধরনের বিভ্রান্তি, অপবাদ ও বৈষম্যের চর্চা রয়েছে সেগুলো থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।

সেই সঙ্গে তিনি অটিস্টিক শিশুদের স্বাভাবিক ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

জর্জ ওয়াশিংটন কারভার একাডেমির এডুকেটর ফারজানা শারমিন অনলাইনে সরাসরি তার অটিজম স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার করা শিক্ষা উপকরণ ও সেগুলোর ব্যবহার প্রক্রিয়া এবং উপকারিতা তুলে ধরেন।

ভারত থেকে সিনিয়র ওরাকল ডাটাবেইজ এডমিনিস্ট্রেটর বাশীরুদ্দিন মোহাম্মদ ২১ শতকের প্রযুক্তি কীভাবে অটিস্টিক বিশ্বে সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে সে বিষয়গুলো তুলে ধরেন।  সোশাল মিডিয়া, টেলিহেলথ, সহায়ক প্রযুক্তি যেমন, Proloquo2Go, Touch Chat এর মতো অ্যাপসের ব্যবহার, পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি যেমন, স্মার্ট ঘড়ি, ফিটনেস ট্রাকার অটিস্টিক মানুষের দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়গুলি তুলে ধরেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মান্নান হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মাদ মাহমুদুর রহমান, মনোয়ারা অটিস্টিক এন্ড ডিজেবল রেসিডেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আজমা সুলতানা, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং আইসিডিডিআর, বি‘র সাবেক বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আইসিডিডিআর, বি‘র সাবেক ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর ডা. সমিনা সুলতানা, আইসিডিডিআর, বি‘র সহকারী বিজ্ঞানী সৈয়দা মাহে মুনীর, এ মিরাকল প্রজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন এর চিফ অপারেটিং অফিসার মিসেস আরমিন সুলতানাসহ অন্যান্যরা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও গবেষক মো. মিজানুর রহমান এবং উপস্থাপনা করেন নমিরা আহমেদ।

অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা উপযুক্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাবে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হন সেগুলোর টেকসই সমাধান করে তাদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।

তিনি পরিবার, কমিউনিটি এবং সমাজের উপর অটিজমের প্রভাব নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন এবং ‘এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন’-যেসব শিশুদের নিয়ে কাজ করে তাদের পাশে থেকে সাহায্য করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

অধ্যাপক মুহাম্মাদ মাহমুদুর রহমান অটিজম ও অটিস্টিক শিশু বিষয়ে গবেষণাধর্মী কাজের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উদ্যোগে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাধি সম্পর্কে বোঝাপড়ার উন্নতি করার উপর জোর দেন।

তিনি বলেন, গবেষণামূলক কাজের মাধ্যমে অটিজমের কারণ, ঝুঁকির কারণ, এবং কার্যকরী চিকিৎসাগুলো সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের জন্য উন্নত ফলাফল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সৈয়দা মাহে মুনীর বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রচারাভিযানগুলো অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগগুলোকে উন্নত করতে পারে। অভিভাবক, শিক্ষাবিদ এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের লক্ষ্য করে করে আমরা ব্যাধি সম্পর্কে আগেভাগে বুঝতে ও চিকিৎসা গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারি।অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারাভিযানে অটিজমের লক্ষণ ও উপসর্গ কীভাবে তাড়াতাড়ি সন্ধান করা যায় সে সম্পর্কে তারা জানতে ও ব্যবস্থা নিতে কাজ করতে পারবেন। শিক্ষকরা শিখাতে পারেন কিভাবে শ্রেনিকক্ষে অটিস্টিক শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করা যায় এবং তাদের সহায়তা করা যায় এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে তাদের নিরাপদ রাখা যায়।

অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রতিনিয়তই নেতিবাচক মনোভাব ও বৈষম্যের শিকার হয় যা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্ম সংস্থানে প্রবেশে বাধা দেয়। এ কারণে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, আত্মসম্মানবোধ এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয় যা তাদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা ও সহজাত বিচরণকে বাধাগ্রস্ত করে।

এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি ‘এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন’ এর ই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার অনুরোধ জানান।

ডা. সামিনা সুলতানা বলেন, অটিস্টিক শিশুদের জন্য আচরণ পরিবর্তনের চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতে নতুন দক্ষতা এবং আচরণসহ ব্যক্তিদের শেখানোর জন্য পজিটিভ বলবর্ধক (পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট) ব্যবহার করা হয়।

তিনি জানান, আচরণ পরিবর্তনের চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন, প্রয়োগকৃত আচরণ বিশ্লেষণ (ABA-Applied Behvioral Analysis) অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে কাজগুলোকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করতে শেখানো হয় এবং সেগুলো সম্পন্ন করলে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। পাইভোটাল রেসপন্স ট্রিটমেন্ট (PRT) এ সামাজিক-পারস্পরিক যোগাযোগ শুরু করা ও তাতে সাড়া দেওয়ার পদ্ধতিগুলো শেখানো হয়।

স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে বাচ্চাদের ভাষাগত দক্ষতা, কথা বলা ও যোগাযোগের দক্ষতাকে বাড়ানো হয়। অকুপেশনাল থেরাপিস্ট প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপগুলো সম্পাদন ও তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশের জন্য নিজের পোশাক পড়া, খাওয়া-দাওয়া, দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি কাজ শেখানো যায়।

বক্তব্য উপস্থাপন শেষে শিশুদের মাঝে ঈদের পোশাক, গুটি ব্যাগ, খেলনা এবং বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ ও ইফতার প্রদান করা হয়। সবশেষে, ‘এ মিরাকল প্রোজেক্ট অটিস্টিক ফাউন্ডেশন’ এর ফাউন্ডারদের সঙ্গে উপস্থিত পেশাজীবীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির চলমান কার্যক্রম, ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা, একটি অটিজম স্কুল প্রতিষ্ঠা ও অটিস্টিক শিশুদের জন্য একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা বিষয়ে ‘রাউন্ড টেবিল সেশন উয়িথ ফাউন্ডার্স রো’ বিষয়ক প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সারাবাংলা/আইই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর