সুনসান কমলাপুর, ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রায় খুশি যাত্রীরা
১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৩৪
ঢাকা: স্টেশনে ঢুকতেই একে একে চেক করা হচ্ছে, থেমে থাকা ট্রেনে উঠতেও নেই কোনো ধাক্কাধাক্কি। আর যাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে, তারাও গল্প করেই সময় পার করছেন। এ যেন চিরচেনা কমলাপুর রেল স্টেশনের ঠিক বিপরীত দৃশ্য। ঈদের সময় ঘরে ফেরা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে যে বিশৃঙ্খলার দৃশ্য প্রতিবছর দেখা যায় এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) সরেজমিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, লাইন ধরে টিকিটধারী যাত্রীরা প্লাটফর্মে প্রবেশ করছেন। যাদের টিকিট নেই, তাদের প্লাটফর্মে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এবারের ঈদযাত্রায় টিকিট ব্যবস্থা অনলাইনে করায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার কোনো ভোগান্তি নেই। তবে যারা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেননি, তাদের জন্য স্টেশনে স্ট্যান্ডিং টিকেট ক্রয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে সেখানেও নেই ভিড় বা কালোবাজারি। যাত্রীরা সহজেই টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারছেন।
প্লাটফর্মে প্রবেশ করলে দেখা যায়,অতিরিক্ত কোনো ভিড় বা হট্টগোল নেই। টিকিটধারী যাত্রীরা নির্ধারিত ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
রাজশাহীগামী ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেসের মাধ্যমে সকাল ৬ টা ২০ মিনিটে শুরু হয়েছে বাড়ি ফেরা মানুষের ঈদযাত্রা। প্রতি বছর এই যাত্রায় ভোগান্তি ও অভিযোগের চিত্র লক্ষ করাও গেলেও এবার তা অনেকটাই কম। স্বাচ্ছ্যন্দেই বাড়ি ফিরছেন ট্রেনযাত্রীরা। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ট্রেনের শিডিউলে তেমন কোনো বিপর্যয় ঘটেনি।
রাজশাহীগামী যাত্রী সজীব জানান, বিগত সময়ের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রা বেশ ভালো। আমি অনলাইনে দুইটি টিকিট কেটেছি। ফলে সারাদিন লাইনে দাঁড়াতে হয়নি কিংবা কালোবাজার থেকে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কিনতে হয়নি। এ ছাড়া এবার অতিরিক্ত মানুষেরও চাপ নেই।
চট্টগ্রামগামী যাত্রী ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট সিস্টেম করার ফলে আমাদের ভোগান্তি অনেক কমে গেছে। আগে সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট মিলত না। এখন ঘরে বসেই টিকিট কাটছি। আবার অনলাইনে যারা টিকিট কাটতে পারেনি তাদের জন্য স্ট্যান্ডিং টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে এবারের ট্রেনের সিস্টেম জনবান্ধব হয়েছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী যাত্রী ইব্রাহিম খলির বলেন, ‘আমি অনলাইনে টিকিট কাটতে পারিনি। প্রথমদিকে মন খারাপ হলেও পরে শুনলাম স্ট্যান্ডিং টিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। সরাসরি স্টেশনে এসে টিকিট কাটতে পেরেছি।’
সিলেটগামী যাত্রী বশির আহমেদও স্ট্যান্ডিং টিকেট কেটেছেন। টিকিট কাটতে কোনো ভোগান্তি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তেমন কোনো ভোগান্তি হয়নি। স্টেশনে এসে সহজেই টিকিট কাটতে পেরেছি। কোনো দালাল বা ব্ল্যাকের মাধ্যমে টিকিট কিনতে হয়নি।’
এবারের ঈদযাত্রায় টিকিট ছাড়া ট্রেনে ভ্রমণের কোনো সুযোগ নেই, এমনকি ট্রেনের ছাদে চড়েও এবার ভ্রমণে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
এ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার কমলাপুর স্টেশন থেকে জয়দেবপুর স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনের ছাদে যাত্রা প্রতিহত করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তৎপর।’
তিনি বলেন, ‘এবার ছাদে কোনো যাত্রী উঠতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমরা কড়াকড়ি নজর রাখছি। কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত আমরা নজর রাখছি। কেউই বিনা টিকিটে বা ছাদে যাতায়াত করতে পারবে না। যাত্রীরা যদি এই বিষয়ে সচেতন হন, আশা করছি এ বিষয়ে আমরা সফল হবো।’
উল্লেখ্য, এবার ঈদ উপলক্ষে মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সারাদেশে নয় জোড়া বিশেষ ট্রেন নয়টি রুটে দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/একে