গৃহকর্মীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামির বিচার দাবি ৬ সংগঠনের
১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:১৬
শিশু গৃহকর্মীকে পুড়িয়ে হত্যার পর মামলার বাদীকেও গুমের মামলার আসামি রোকন এখন জনপ্রতিনিধি। চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে। ২০১৪ সালে নির্যাতনের পর কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে শিশু রুনা হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার ও মামলার পুনঃতদন্তের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে এই দাবি করে। এসময় একটি মানব বন্ধনে বক্তারা মামলার সঠিক বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা সংগঠনগুলো হলো- মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিশন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ আইন ও শালিস কেন্দ্র, লিগ্যাল এইড কমিটি, কাশফুল সোশ্যাল ডেভলাপমেন্ট সোসাইটি, নারী ও শিশু কল্যাণ ফাউন্ডেশন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনা ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বরের। ঘটনাস্থল নগরীর ১৩ নং আইস ফ্যাক্টরির টি এম টাওয়ার ৪র্থ তলায় আমিন আহমেদ রোকনের ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর কাজ করত শিশু রুনা (১৪)। গৃহকর্তা রোকন শিশু গৃহকর্মী রুনার উপর নানাভাবে বিভিন্ন সময় পাশবিক নির্যাতন চালাত। রুনার মা ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর মেয়েকে দেখতে আসলে রুনা তার উপর চলা গৃহকর্তা রোকনের অন্যায় আচরণের কথা জানালে আসামি রোকন ক্ষিপ্ত হয়ে রুনাকে লাথি মারে। মায়ের সামনে মেয়েকে নির্যাতনের পর রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে রুনার শরীরের অধিকাংশই পুড়ে যায়। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে দুই দিন চিকিৎসার পর সে মারা যায়। রুনার মা রোকেয়া বেগম সদরঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২৬ (১১) ২০১৪। একমাত্র আসামী চন্দনাইশের আবদুল জব্বারের ছেলে আমিন উদ্দিন আহমেদ রোকন। বর্তমান চন্দনাইশের জোয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। নিজেকে স্থানীয় এমপির ভাগনা পরিচয় দিয়ে তিনি অবৈধ ইটভাটা, জমি দখল, পাহাড় কাঠার মতো অপরাধ অবাধে করে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সেসময়কার জাতীয় পত্রপত্রিকায় রুনা হত্যাকাণ্ড অন্যতম প্রধান সংবাদ হিসেবে প্রচার পেলেও ধূর্ত রোকন গা ঢাকা দেন। তাকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েও গ্রেপ্তার করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মিডিয়ার ফলোআপ নিউজেও সদরঘাট থানা পুলিশ গ্রেপ্তারে নিজেদের অপারগতার কথা স্বীকার করে।
মানবাধিকার কর্মীরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একটি হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না এনে বাদিকে গুম করে মিথ্যা বাদি সাজিয়ে মামলা তুলে নেওয়া হয়। একটি অসহায় শিশুর নির্মম হত্যাকাণ্ড এভাবে ধামাচাপা দিলে ন্যায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নারী ও শিশু নির্যাতনের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোন পরিকল্পিত হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা যায় না। এমনকি এই মামলায় ঘটনার কোন সাক্ষীকে আদালতে আনা হয়নি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা মামলার কপি উপস্থাপন করে পুলিশের তদন্তের বিভিন্ন আইনগত অসংগতি তুলে ধরেন।
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ছয়টি মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে সেলিম হোসেন চৌধুরী, মো. রফিকুল ইসলাম, মনসুর উল আলম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিশন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ আইন ও শালিস কেন্দ্র, লিগ্যাল এইড কমিটি, কাশফুল সোশ্যাল ডেভলাপমেন্ট সোসাইটি, নারী ও শিশু কল্যাণ ফাউন্ডেশন এই সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেদের আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সুরক্ষার দায়বদ্ধতা থেকে এই মামলার অবিলম্বে পুনঃতদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে আসামি রোকনের যথোপযুক্ত শাস্তি চান বলে জানান।
সারাবাংলা/আইই