Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তারা শাস্তি পাবে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:৪৩

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অন্যায় যারা করেছে, তারা কিন্তু শাস্তি পাবে। শাস্তি পেয়েছে, পাচ্ছে, পাবে। আরও যারা বাকি আছে সেটা সেটা (বিচার) আমরা অবশ্যই করব। মানুষ যখন একটু ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে, সেই সময় আবার এই অগ্নিসন্ত্রাস বা মার্কেটে আগুন নানাভাবে মানুষকে ক্ষতি করা; এটা যারা করে তাদের প্রতি জাতির ঘৃণা। আমার মনে হয় আল্লাহও সহ্য করবে না। এরা যে অপরাধ করেছে তার বিচার হবেই।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে গণভবনে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের সঙ্গে সাক্ষাত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সশস্ত্র বাহিনীতে বিনা বিচারে গণহত্যার শিকার পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও তো আপনাদের মতো একজন। আমিও তো একদিনে শুনলাম আমার কেউ নাই। আমরা দুইটা বোন, বিদেশে এতিমে হয়ে গেলাম। কি বর্বরভাবে আমার বাবা-মা, আমার তিন ভাইকে হত্যা করেছে। এখানে আইয়ুব বসে আছে তার বাবাও কি অপরাধ করেছিল?’

বাংলাদেশে ফিরে আসার পর জিয়াউর রহমানের শাসনামল ১৯৭৭ সাল থেকে এয়ারফোর্স, আর্মি অফিসার তথা সশস্ত্র বাহিনীর যাদেরকে বিনা বিচারে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, সেই পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমার গ্রামে একজন লুৎফাকে পেয়েছিলাম। আমি তার ছেলে মেয়েদেরকে দেখতাম। তারপর থেকে অনেক চেষ্টা করেছিলাম এরকম সবার নাম জোগাড় করতে। স্বাভাবিকভাবে শুরুতে তারা খুব কষ্ট পাচ্ছিল। পরে আস্তে আস্তে আমরা নামগুলি পাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কী বর্বরবতা ১৯৭৫ সালের পর। প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, আমার ভাই, আত্মীয় স্বজনকে মারলো, এরপর জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করল। এরপর থেকে বার বার সেনাবাহিনীতে- মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করল। শুধু তাই নয়, আমাদের আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে হত্যা করল। যখন আমি অপজিশনে ছিলাম এমন দিন নেই, যেদিন লাশ টানতে হয়নি। আমাদের এত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, তারপরও কী করে এদের পাশে লোক থাকে?’

বিজ্ঞাপন

এরপরও কি করে এদের পাশে লোক থাকে, আমি এটা বুঝে উঠতে পারি না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন টানা মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারপ্রধান।

অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে জীবন্ত মানুষকে কিভাবে পোড়ানো যায় এ রকম প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের কোনো অপরাধ নাই। হ্যাঁ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারছে। যারা পলিটিক্স করছে তাদের মারছে কিন্তু সাধারণ মানুষের উপর যে জুলুম অত্যাচার আবার এখন আপনারা দেখেন মার্কেটে আগুন হঠাৎ করে যেন আগুন লাগাটা বেড়ে গেল? তারপরও আমার মনে হঠাৎ সন্দেহ হলো এটাও কি সেই নাশকতা নাকি? যারা জীবন্ত মানুষকে গাড়িতে আগুন দিয়ে, বাসে আগুন দিয়ে রিকশায় আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াতে পারে, এরা মানুষের ক্ষতি করাটাই জানে? ঈদের সময় হয়ত মানুষ একটু ব্যবসা বাণিজ্য করবে, হয়ত সেই পথটাও বন্ধ করে দিতে চায়। আমার তো মনে হয় এখানেও কোনো একটা ঘটনা আছে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এইটুকুই বলতে পারি, যারা এই আপনজন হারিয়ে কষ্ট করে বড় হচ্ছেন, আপনাদের স্বান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নাই। কিন্তু আমিও আপনাদের মতো একজন। বিদেশে অসহায় বোনকে নিয়ে, বাচ্চাদের নিয়ে। হঠাৎ একদিন দেখলাম আমার কেউ নাই। ছয় বছর বিদেশে রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে আমাদেরকে, আমরা আপনাদের কষ্টটা বুঝি।

সামনে ঈদ আমি মনে করলাম যে আসলে আমি তো একজন একাই। কাজেই যারা আমার মতো স্বজন হারার বেদনা নিয়ে আছে তাদের সঙ্গেই মত বিনমিয় করবো সে জন্যই আপনাদের কষ্ট দিয়ে ডেকে নিয়ে আসছি, আপনারা এসেছেন। এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিনের পর দিন ফাঁসির কাহিনী এটা আমরা বিদেশে থেকেই এই খবরগুলি শুনতাম। কেন্দ্রীয় কারাগারে নেতাদের পর্যন্ত হত্যা করল। কোনো অপরাধ নেই, জানেও না কার কি অপরাধ। ধরে নিয়ে নিয়ে ফাঁসি দেওয়া। সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন বর্বরতা চালিয়েছিল। এই বিএনপি জামায়াতও ঠিক একই বর্বরতা চালিয়েছে। জিয়াউর রহমান হাসতে হাসতে নাকি মানুষের ফাঁসির রায় লিখত এবং কোনো বিচার নাই। ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বিচারের রায় বের হয়েছে পরে।

কি জুলুম, কি অত্যাচার, কি অন্যায়? ৩৫ বছর লেগেছে আমার বাবা-মার হত্যার বিচার করতে। কারণ আইন করে দিয়েছিল। আমি দেশে ফিরে এসেছি, আমার কোনো অধিকার নেই আমি মামলা করতে পারব না, বিচার করতে পারব না। খুনিদেরকে এভাবে রেহাই দেওয়া হয়েছে। আমরা সরকারে সেই ইমডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে তারপর বিচার করতে গেছি সেখানেও তো কত বাধা। জজ সাহেবরা রায় দিতে যেতে পারে না বোমা মারে, হরতাল ডাকে। অনেক জজ সাহেবরা বিব্রত বোধ করে। এটাও আমাকে দেখতে হয়েছে।’

যেখানে এতগুলো মানুষ হত্যা হলো। তার বিচারের রায়টা দিতেও তারা লজ্জাবোধ করে বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি আপনাদের কষ্ট বুঝি। কারণ আমি তো একই কষ্ট পেয়েছি। যতটুকু পারি, আমার তরফ থেকে আমি করে যাব। আর অন্তত এখন এই জিনিসতো হারিয়ে যাচ্ছিল। ১৯৭৭ সালে যাদেরকে হত্যা করল বা ৭৫ সালের পর থেকে যাদেরকে হত্যা করেছে, এটা তো মানুষ ভুলেই গিয়েছিল। এটা যে আজকে মানুষের সামনে আসছে, জিয়াউর রহমান কি অপরাধ করে গেছে। জিয়াও যেমন করল। তার বউও করল তারপরে আর ছেলেরা মিলে অগ্নিসন্ত্রাস। তারা তো এ দেশের কোনো মঙ্গল চায় না। এ দেশের কোনো ভালো ওরা চায় না। মানুষের ভাল চায় না। এটা হল বাস্তবতা।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে গেছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে সেই কাজটাই আমার কাজ হিসেবে নিয়েছি। আর সেই সঙ্গে যারা এভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, আমি আমার সাধ্যমত তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আছি আপনাদের পাশে। আপনারও তো আমার সমব্যাথায় ব্যাথী এইটুকু বলতে পারি।’

অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ড এবং বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে আলাদা দু’টি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর গণহত্যার শিকার পরিবারের সদস্য ও বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাসে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার এবং আহত ব্যক্তিরা অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

সারাবাংলা/এনআর/ইআ

অগ্নিসন্ত্রাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর