Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪৫ ঘণ্টায়ও শেষ হয়নি ‘সোনার বাংলা’ ট্রেন ইঞ্জিনের উদ্ধার কাজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩২

কুমিল্লা থেকে: নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলস্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার প্রায় ৪৫ ঘণ্টা পরও শেষ হয়নি উদ্ধার কাজ। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় স্টেশনের তিন ও চার নম্বর (লুফ) লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মূল দুইটি লাইনের ক্ষতি না হওয়ায় রেল চলাচল স্বাভাবিক আছে বর্তমানে। দ্রুতই ইঞ্জিন উদ্ধার কাজ শেষ করে বাকি দুই লাইনও চলাচল উপযোগী করে তোলা হবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলস্টেশনে দুর্ঘটনায় পড়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন। স্টেশনটিতে আগে থেকেই থেমে থাকা একটি কনটেইনারবাহী ট্রেনকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন ও ছয়টি কোচ লাইনচ্যুত হয়।

এরপর রাত দেড়টার দিকে লাকসাম রেলওয়ে জংশন থেকে একটি উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে আলোক স্বল্পতার কারণে রাতে উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায় নি।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে আরও একটি রিলিফ ট্রেন আসলে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে একসঙ্গে উদ্ধার কাজে শুরু হয়।

এদিন সরেজমিনে দেখা যায়, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বগিগুলো তিন ও চার নম্বর রেল লাইনসহ পাশের খালি মাঠে পড়ে ছিল। দুর্ঘটনায় শুধু ইঞ্জিনসহ বগিই নয়, প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ মিটার লাইনও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. আবিদুর রহমান দুর্ঘটনার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনা তদন্তে কমিটির সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। আশা করি, সন্ধ্যার মধ্যে সকল বগি উদ্ধার এবং রেললাইন মেরামত করে দুই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।

তবে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে দেখা যায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের পাশাপাশি সর্বশেষ একটি বগি উদ্ধারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে রিলিফ ট্রেন।

এদিন উদ্ধার কাজে যোগ দেয় চট্টগ্রাম থেকে আসা আরও একটি রিলিফ ট্রেন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সকালে উদ্ধার কাজে নেতৃত্বদানকারী রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া উদ্ধার অভিযানে এখন পর্যন্ত ৯টি বগি উদ্ধার করা হয়েছে। সোনার বাংলা ট্রেনের ইঞ্জিন ও মালবাহী ট্রেনের একটি বগি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’

কখন নাগাদ পুরো উদ্ধার কাজ শেষ করা সম্ভব হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আজকের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’

এতে কতক্ষণ সময় লাগবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি আবিদুর রহমান।

দায়িত্বে অবহেলায় সাময়িক বরখাস্ত চারজন

নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলস্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার দায়ে চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে বিভাগ। এরা হলেন-সোনার বাংলা ট্রেনের লোকো মাস্টার মো. জসিম উদ্দিন (ঢাকা হেডকোয়ার্টার), সহকারী লোকো মাস্টার মো. মহসিন (ঢাকা হেডকোয়ার্টার), ট্রেনের গার্ড আব্দুল কাদের (চট্টগ্রাম ডিভিশন) এবং হাসানপুর স্টেশনের মেইনটেইনার সিগন্যাল ওয়াহিদ।

এছাড়াও রেল দুর্ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এরমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ও রেলওয়ের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোশারফ হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান মেহবুব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খন্দকার আশফাকুজ্জামান, লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দিন চৌধুরী ও স্টেশন মাস্টার জামাল আহমেদ।

কমিটিকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন যখন হাসানপুর স্টেশন এলাকায় পৌঁছায়, তখন তা মূল লাইন দিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। মূল লাইন প্রস্তুত করতে সময় দরকার ছিল। তাই ট্রেন থামার সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু চালক ট্রেন চালিয়ে যান এবং লুপ লাইনে থাকা ট্রেনকে ধাক্কা দেন।

তিনি বলেন, সংকেত অমান্যর বিষয়টি প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে। গাফিলতির কারণে চালকসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্তে বিস্তারিত কারণ বের হয়ে আসবে।

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর থেকেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে ফেলা হয়েছে। আজকেও ট্রেন চলছে স্বাভাবিকভাবে। আশা করছি ইঞ্জিন উদ্ধারের কাজও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।

এর আগে, রোববার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মালবাহী ট্রেনের পেছনের কন্টেইনার। সোনার বাংলা ট্রেনের চালকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেন।

সারাবাংলা/এসবি/একে

কুমিল্লা ট্রেন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর