Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবি সেলিনা শেলীর পাশে নাগরিক সমাজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ এপ্রিল ২০২৩ ২০:৩৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো : কবি-শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক সেলিনা আক্তার শেলীকে ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর হুমকিধমকি ও হেনস্থা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। মৌলবাদীদের হুমকির মুখে চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সেলিনা শেলী ইস্যুতে বিশিষ্টজনেরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

এদিকে ‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটায় নগরীর চেরাগি পাহাড় চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। সেলিনা শেলীকে স্বপদে বহাল এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বুধবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।

চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেলিনা আক্তার শেলী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কবি এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে তিনি সুপরিচিত।

পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে আইনজীবীর নোটিশ, হাইকোর্টে রিটসহ নানা প্রেক্ষাপটে তিনি সম্প্রতি ফেসবুকে নিজের অবস্থান তুলে ধরে মঙ্গল শব্দকে ‘হিন্দুয়ানি’ হিসেবে উল্লেখ করার বিরোধিতা করেন। একই প্রসঙ্গে তিনি ‘রামাদান’ শব্দটি উল্লেখ করে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন। এরপর থেকে সেলিনা আক্তার শেলীকে ওই পোস্টে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি বিকৃত করে আক্রমণাত্মক পোস্ট দেওয়া শুরু হয়। একাধিক পোস্টে তাকে শারীরিকভাবে আঘাতের হুমকিও দেওয়া হয়।

ফেসবুক পোস্টের জেরে গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিনুর রশিদ তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন। এ অবস্থায় জীবন নিয়ে শঙ্কায় থাকা সেলিনা আক্তার শেলী কার্যত এখন আত্মগোপনে আছেন।

চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা কবি সেলিনা শেলীর জন্য দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘বাঙালি মুসলমান চিরকাল পবিত্র রমজান মাসকে ‘মাহে রমজান’বা ‘রমজানুল মোবারক’ বলতে অভ্যস্ত। ইদানিং ‘রামাদান’শব্দটির ব্যবহার সেলিনা শেলীর কাছে আরোপিত মনে হওয়ায় তিনি এ বিষয়ে ফেসবুকে একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করেন। কিন্তু সহজ, সরল বিশ্বাসে দেওয়া এই বক্তব্যকে বিকৃত ও অতিরঞ্জিত করে সুযোগসন্ধানী মৌলবাদী গোষ্ঠী অহেতুক পরিস্থিতিকে জটিল করার চেষ্টা করছে।’

‘কুশপুত্তলিকা দাহসহ মিছিল-সমাবেশ করে মৌলবাদী গোষ্ঠী তাকে নানাভাবে হুমকিধমকি দিতে থাকে। নিরাপত্তাহীনতায় কবি সেলিনা শেলী ফেসবুকে দেয়া তার পোস্টটি পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু এরপরও এই গোষ্ঠী তাকে হুমকিধমকিসহ নানাভাবে হেনস্থা অব্যাহত রেখেছে। আরও দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সমগ্র বিষয়টি যাচাইবাছাই ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সেলিনা আক্তার শেলীকে তাঁর কর্মক্ষেত্র থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং বিভাগীয় মামলা দায়ের করে।’

বিবৃতিতে বিশিষ্টজনদের উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, কবি সেলিনা শেলী ফেসবুকে দেয়া পোস্টের মাধ্যমে কোনোভাবেই ইসলাম ধর্মের অবমাননা করেননি, পবিত্র রমজান মাসের বিরুদ্ধেও তার কোনো বক্তব্য সেই পোস্টে ছিল না কিংবা ধর্মীয় মনীষীদের নিয়েও কোনো কটূক্তি তিনি করেননি। এরপরও তিনি যেভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, এটি একজন নাগরিকের ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি চরম অন্যায় আচরণ বলে আমরা মনে করি।’

বিশিষ্ট নাগরিকেরা কবি সেলিনা শেলীকে হুমকি দেওয়া মৌলবাদী চক্রের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিদাতারা হলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মফিজুর রহমান, নূরজাহান খান, অধ্যাপিকা আনোয়ারা আলম, অধ্যাপক ফেরদৌস আরা আলীম, শিশির দত্ত, ডা. চন্দন দাশ, অ্যাডভোকেট আকতার কবীর চৌধুরী, কামরুল হাসান বাদল, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ওমর কায়সার, কুন্তল বড়ুয়া, হোসাইন কবির, ফারুক ইকবাল, এজাজ ইউসুফী, রাজীব নূর, লতিফা কবীর, শরীফ চৌহান, রাশেদ হাসান, স্বপন মজুমদার, আহমেদ মুনির, মুহাম্মদ শামসুল হক, সুমন টিংকু, আসমা বীথি, রিমঝিম আহমেদ এবং ফারহানা আনন্দময়ী।

এছাড়া সম্মিলিত আবৃত্তি পরিষদ, উদীচী, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, কণ্ঠনীড়, নির্মাণ আবৃত্তি সংগঠন, বিভাষ, চট্টগ্রাম আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র সাংগঠনিকভাবে এই বিবৃতির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

কবি সেলিনা শেলীকে হেনস্থা এবং কলেজ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আরও বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ইমরান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক টিকলু কুমার দে এবং জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ চৌধুরী।

সারাবাংলা/আরডি/একে

কবি টপ নিউজ সেলিনা শেলী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর