Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড হলেও যে কারণে লোডশেডিং

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:৪০

ঢাকা: দেশ জুড়ে চলমান তীব্র তাপ প্রবাহের মাঝে বিদ্যুৎ উৎপাদনে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এপ্রিল মাসে পরপর তিন দফা বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুযায়ী, সবশেষ ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাত ৯টায় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এর আগে ১৭ এপ্রিল রাত ৯টায় দেশের সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ১৩ এপ্রিল রাত ৯টায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট।

একের পর এক রেকর্ড গড়লেও বাস্তবতা হলো, এতো বেশি উৎপাদনের পরও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। সারাদেশেই চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। অনেক জেলায় পরিস্থিতি অনেকটাই ভয়াবহ।

বিদ্যুতের রেকর্ড উৎপাদনের পরও সারা দেশে লোডশেডিং হওয়ায় এরই মধ্যে দুঃখ প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

১৮ এপ্রিল দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

ফেসবুকে নসরুল হামিদ লেখেন, ‘সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দ, এ বছর গ্রীষ্ম, সেচ মৌসুম এবং রোজা একসঙ্গে হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে সেটা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের পূর্বপ্রস্তুতির স্বাক্ষরও রেখেছি। কিন্তু গত ৫০ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে বর্তমানে যে নজিরবিহীন দাবদাহ চলছে, তাতে ধারণার চেয়েও বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে গেছে।’

এপ্রিল মাসে পরপর তিন দফা বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। তবুও প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচণ্ড তাপদাহ বিদ্যুতের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে, ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহে ঘাটতি বাড়ছে। তাপদাহ কমলে কমবে বিদ্যুতের চাহিদা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুযায়ী, গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে ওঠা-নামা করছে। এর বিপরীতে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট। সে হিসাবে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ৫০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যদিও বাস্তবে এ ঘাটতি আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় তুলনামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ বেশি হলেও কোনো কোনো এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। কিন্তু জেলা ও মফস্বলে দিনের একটা বড় সময় বিদ্যুৎ থাকে না বলে খবর পাওয়া গেছে। ফলে এই প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি সংকটের বিষয়টিতো রয়েছেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে এয়ার কন্ডিশনের (এসি) ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। যার চাপ পড়েছে বিদ্যুতের ওপর। সারাদেশে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেক বেড়ে যাওয়ার এটাও একটি কারণ।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। গত তিন দিন ধরে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

এদিকে, কারিগরি ত্রুটির কারণে রামপাল আশুগঞ্জ নর্থ-ইস্ট মিলিয়ে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে এই কেন্দ্রগুলো থেকে ১ হাজার ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যে গ্রিডে যোগ হতো তা হচ্ছে না।

এদিকে এবার রমজান ও সেচ নিয়ে এসেছে গ্রীষ্মকাল। ফলে সরকারের আগাম প্রস্তুতিও ছিলো। তখন ধারণা করা হয়েছিলো এবার বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৬ হাজার মেগাওয়াটে। কিন্তু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এ হিসাব পাল্টে দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেক চ্যালেঞ্জের হবে। কারণ এবার রোজা, গ্রীষ্মের গরম আর সেচ এই তিন বিষয় একসঙ্গে সামনে এসেছে। তাই এই তিন বিষয়কে সামনে রেখে আমরা চাহিদা ধরেছিলাম ১৬ হাজার মেগাওয়াট। সে ভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সে টার্গেট সামনে রেখে ১৫ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট উৎপাদনে পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, রোজার শুরু থেকে পরিস্থিতি ঠিক থাকলেও সমস্যাটা দেখা দিয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। প্রতিদিন তাপ প্রবাহ বাড়ছে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে আমাদের ধারণা ছাড়িয়ে গেছে। যে জন্য আমাদের লোডশেডিং বেশি করতে হচ্ছে।

অনাকাঙ্খিত এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ বিভাগ কাজ করছে জানিয়ে বিদ্যুৎপ্রতিমন্ত্রী বলেন, আশা করছি খুব শিগগির আবারও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ ফিরে আসবে। ধৈর্য ধারণের জন্য গ্রাহকদের ধন্যবাদ জানাই।

উল্লেখ্য, বর্তমানে নিজস্ব উৎপাদনের বাইরে ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে পিক আওয়ারে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। আর অফ পিকে যোগ হচ্ছে ৪শ থেকে ৫শ মেগাওয়াট। এর বাইরে নিয়মিত আমদানি হচ্ছে ১১৬০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন রামপাল, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্ত্রগুলো দ্রুতই চালু হয়ে যাবে। তখন এই ঘাটতির পরিমাণ আরও কমে আসবে। পাশাপাশি তাপপ্রবাহ কমে আবহাওয়াও উন্নতি হলে বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসবে ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাবাংলা/ জেআর/এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর