লাঙ্গলবন্দ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, বারবার বাড়ছে মেয়াদ
২০ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৪৪ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০৬
ঢাকা: সাত শর্তে মেয়াদ বাড়ছে ‘লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পূণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পে। কোভিড মহামরিসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরাজ করছে ধীরগতি। আড়াই বছরে এটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে বারবার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন ফের তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করা হচ্ছে।
তবে এবার শর্ত সাপেক্ষে মেয়াদ বড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। শুধু মেয়াদই নয়, দেরি হওয়ার কারণে বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদও। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায়। ওই সভায় এসব শর্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
শর্তগুলো হলো- প্রকল্পটি আবশ্যিকভাবে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে। সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত নতুন কার্যক্রমগুলোর ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া ঘাট নির্মাণ বা প্রশস্তকরণের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র অনুপত্তি দেওয়া ১৩টি ঘাটের যে পরিমাণ দেওয়া হয়েছিল সে অনুযায়ী কাজ করার সংস্থান রাখতে হবে। মূল ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী ১৫টি গণশৌচাগার নির্মাণ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ক্রয় পরিকল্পনা পিপিআর অনুযায়ী হতে হবে। সেই সঙ্গে নিদিষ্ট কোনো প্যাকেজের বিপরীতে একাধক ক্রয় পদ্ধতি উল্লেখ না করে একটি সুনির্দিষ্ট ক্রয় পদ্ধতি উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি ক্রয় পরিকল্পনায় ‘ওটিএম’ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
পরিকল্পনা বিভাগের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আরডিপিপি (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করতে হবে। এছাড়া চলমান পূর্ত কাজের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পিএসসি এবং পিআইসিতে উপস্থাপন করতে হবে। এসব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশি দিয়েছে পিইসি।
পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথম সংশোধন প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ১৩৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ধরা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হলে গত বছরের ২৮ নভেম্বর প্রকল্পটির উপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাস্তবতার নিরিখে ও লাঙ্গলবন্দ তীর্থস্থান পরিচালনা কমিটির অনুরোধের জন্য প্রকল্পটি ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পুনরায় পাঠানো হয়েছে।
ওই সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পল্লী প্রতিষ্ঠান অনুবিভাগের যুগ্মপ্রধান ড. অঞ্জন কুমার দেব রায় বলেন, ‘লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পূণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি ১২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২০ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এরপর কোভিড পরিস্থিতিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত পুনর্নির্ধারণ করা হয়। আইএমইডি ও পরিকল্পনা কমিশনের সম্মাতিতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে গত বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল।’
সভায় কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০১৭ তে শুরু হলেও এখনও প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়নি। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পুণ্যস্মান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পুণ্যস্নান উৎসব নিরাপদকরণ ও যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও সবার জন্য সারাবছর ব্যবহার উপযোগী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। এখনও শেষ হয়নি তাই প্রকল্পটি পূর্ত কাজ শেষ করা প্রয়োজন। সেহেতু সময় বৃদ্ধির বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘এ প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ দিন ধরে চলছে, ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬০ শতাংশ এবং মেয়াদ রয়েছে ৩ মাস।’
এ প্রেক্ষিতে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘কিচেন, ফায়ার ব্রিগেড শেড, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত স্নানাগার ও শৌচাগার, মেডিক্যাল ক্যাম্প, ল্যান্ডস্কেপিং বাউন্ডারি ওয়াল, ফেন্সিং, বেঞ্চ, ডাস্টবিন, চত্বর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাই ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।’ প্রধান প্রকৌশলী নতুন অঙ্গগুলো অন্তর্ভুক্ত করে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার জন্য মতামত দেন।
অর্থবিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এখনও সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘসূত্রিতার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে মধ্যে সমাপ্ত করার শর্তে অনুমোদন করা যেতে পারে।’
সারাবাংলা/জেজে/এমও
লাঙ্গলবন্দ লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পূণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়ন