৮ বারেও পূরণ হয়নি কোটা, হজযাত্রী নিবন্ধনে এবার ‘বিশেষ সুযোগ’
২১ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:১৬
ঢাকা: চলতি বছরের হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় শেষ হয়েছিল রোববার (৯ এপ্রিল)। এরপর ৮ বার সময় বাড়িয়েও পূরণ হয়নি বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ করা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৭ হজ কোটা। কোটা পূরণে এখনও চার হাজারের বেশি নিবন্ধন বাকি। অর্থাৎ চলতি বছর এখন পর্যন্ত হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আট দফা বাড়ানো হলেও পূরণ করা সম্ভব হয়নি নির্ধারিত কোটা। এমন অবস্থায় কোটা পূরণ করতে আগামী ২৫ এপ্রিল ‘একদিন বিশেষ সুযোগ’ দিচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ওই দিন হজের নিবন্ধনে সার্ভার খুলে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হজযাত্রী ও এজেন্সিগুলোর অনুরোধে চলতি বছর হজে যেতে আরও একদিন হজযাত্রী নিবন্ধন চলবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর গত ১৬ এপ্রিলের পত্র ও সম্মানিত হজযাত্রীদের বিশেষ অনুরোধে সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধন সার্ভার আগামী ২৫ এপ্রিল একদিনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আরও বলা হয়, নিবন্ধনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক উন্মুক্ত রয়েছে এবং উভয় ব্যবস্থাপনায় নতুন করে প্রাক-নিবন্ধন করে হজে যাওয়ার সুযোগ আছে। কোটা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। কোনোক্রমেই আর সময় বাড়ানো যাবে না।
এদিকে গত ১৬ এপ্রিল থেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন এমন হজযাত্রীদের ভিসার জন্য বায়োমেট্রিক শুরু হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের সকল জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়, ঢাকায় অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগারগাঁও, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমপ্লেক্স, ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা এবং হজ অফিস, আশকোনা, ঢাকায় বায়োমেট্রিক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীরা যেখানে বায়োমেট্রিক ভিসার জন্য আবেদন করবেন সেখানে তাদের পাসপোর্ট জমা দেবেন এবং রশিদ গ্রহণ করবেন।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা স্ব স্ব এজেন্সির মাধ্যমে এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) অফিসে বায়োমেট্রিক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বায়োমেট্রিক ভিসা আবেদনের পর পাসপোর্ট স্ব স্ব এজেন্সির নিকট জমা দিয়ে রশিদ নেবেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে কতজন হজ করতে যাবেন সৌদি সরকারকে আগামী ৯ মে মধ্যে জানাতে হবে। এজন্য শেষ নিবন্ধনের শেষ সুযোগটুকু দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, চলতি বছর সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ আছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন। অর্থাৎ নিবন্ধনের বাকি আছে ৭ হাজার ৫০৩ জনের। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের মতো কোটা সরকারি এবং বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনা টিম সদস্যদের দিয়ে পূরণ হবে। সে হিসাবে নিবন্ধনের জন্য প্রকৃত কোটা বাকি আছে ৪ হাজারের কিছু বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার হজের খরচ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় নিবন্ধনে ভাটা পড়েছে। এর আগে সাত দফা সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ করা যায়নি। সৌদি আরবে সেবা মূল্য কমার কারণে চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজ পালনে খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানোও হয়েছে। কিন্তু এরপরও সাড়া মেলেনি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে। খরচ কমানোর পর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ টাকা লাগবে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা থেকে কমিয়ে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করলেও তা কমায়নি সরকার।
চলতি বছর হজে যেতে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। তবে কোটার বিপরীতে খুবই কম সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হন। পরে নিবন্ধনের সময় ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই সময়েও কোটার অর্ধেকেরও কম হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়।
সর্বশেষ নিবন্ধনের সময় ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই নিবন্ধনের সময় ২১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে সময় আরেক দফা বেড়ে হয় ৩০ মার্চ পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে কোটা পূরণ না হলে শেষে নিবন্ধনের সময় ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে আরও দুই দফা সময় বাড়ানো হয়।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের নিয়ম রাখা হয়েছে। এ বছর সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ নির্ধারণ করা হয় ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। অন্যদিকে, বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয় ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে কোরবানির খরচ।
গত ২ এপ্রিল রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরামের (আরআরএফ) উদ্যোগে ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩ ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনার ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘সরকারি ক্ষেত্রে কিছু খালি আছে। সরকারি ক্ষেত্রে খালি থাকার কারণ হলো- ডিফেন্সের যারা যান, তাদেরটা যুক্ত হবে। আরও নানান জায়গা থেকে যুক্ত হবে। এতে আমরা সংকুলান করতে পারব বলে আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘বেসরকারিভাবে হজযাত্রীও পূরণ হয়ে যাবে। আগে হজযাত্রী যাওয়া, না যাওয়া নিয়ে আগে যে একটা চিন্তা-ভাবনা ছিল কেমন যায় না যায়। হজযাত্রী যেতে পারবে না, সেই চিন্তা করার অবকাশ ইনশাআল্লাহ নেই।’
সারাবাংলা/এসবি/এমও