Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়, বিক্ষোভ-ভাঙচুর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ এপ্রিল ২০২৩ ১০:২৪

ঢাকা: আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদযাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রথম তিনদিন প্রায় নির্বিঘ্নে যাত্রীরা ভ্রমণ করতে পারলেও চতুর্থ দিন আর সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) কমলাপুর রেল স্টেশনের পাশাপাশি রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। স্ট্যান্ডিং টিকেটের দাবিতে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন যাত্রীরা। একইসঙ্গে টিকেট না পেয়ে মহাসড়কও অবরোধ করে যাত্রীরা। একপর্যায়ে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের গেইটের তালা ভেঙে যাত্রীরা প্রবেশ করে ভেতরে।

বিজ্ঞাপন

পাশাপাশি বিমানবন্দর রেলগেটসংলগ্ন এলাকাতেও গেট ভেঙে যাত্রীরা প্রবেশ করে স্টেশনে। এতে আনসার, জিআরপি ও আরএনবির বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন রেলওয়ের কর্মকর্তাকে দেখা যায়, হাল ছেড়ে দিয়ে মোবাইলের ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করতে।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ৭টার পরে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। আগে থেকে বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা ছিল স্টেশন। বিনা টিকিটে কাউকে ঢুকতে দিতে চায়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ সময় যাত্রীরা অনলাইনে টিকিট চায়। কিন্তু রেলওয়ে কর্মকর্তারা সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত টিকিট দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে প্ল্যাটফরমের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে শত শত যাত্রী। অনেকে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের ছাদে উঠে পড়েন।

রেলওয়ে পুলিশসহ সেখানে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা স্টেশনের ভেতরে একবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেও সক্ষম হন। এ সময় স্টেশনের বাইরে হাজারও যাত্রীর স্লোগানে পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। রাত ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর সড়কে প্রায় ৩০ মিনিট সড়ক অবরোধ করেন যাত্রীরা। পরে পুলিশ তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এরপরেই মূলত যাত্রীরা বিমানবন্দর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় স্টেশনের কলাপসিকল গেট ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও চলন্ত ট্রেনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হলে রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি), রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে জনস্রোতের ভিড়ে সেই চেষ্টা বেশিক্ষণ টেকেনি।

বিজ্ঞাপন

স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, হামলায় অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি), রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজন আনসার সদস্য কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এসময় একাধিক যাত্রী জানান, ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য স্টেশনে আসার পরে কোনো ট্রেনের টিকিট পাননি। এমনকি স্টেশনে স্ট্যান্ডিং টিকিটও নেই। যার কারণে আন্দোলন করে স্টেশনে ঢুকেছেন তারা। টিকিট ছাড়া স্টেশন ছাড়বেন না। প্রয়োজনে বিনা টিকিটেই ট্রেনে করে বাড়ি যাবেন।

বিমানবন্দর স্টেশনের বুথ বন্ধ কেনো থাকবে? — এমন প্রশ্নও করেন অনেক যাত্রী।

অনলাইনে অগ্রিম টিকেট করা চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সোয়েব আলম বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট কেটে স্টেশনে এসেছি। কিন্তু কমলাপুর থেকেই ট্রেনভরে যাত্রীরা আসছে। এমন অবস্থায় ট্রেনে উঠতে পারব কি না, তা নিয়েই সন্দেহে আছি।’

বিমানবন্দরে কর্মরত রেলওয়ের মো. কাঞ্চন বলেন, ‘ঘরমুখো মানুষ ঢুকতে পারে নাই বলে মেইন গেট ভাঙচুর করছে। পরে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

রেলওয়ের পুলিশ পরিদর্শক মামুন বলেন, ‘সব গার্মেন্টসের লোকজন আজ ছুটি শেষে বাড়ি যাচ্ছে। স্টেশনে এসে তারা টিকিট না পেয়ে পাথর নিক্ষেপ করেছে। এরপর সবাইকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। কারণ পোলাপানের পাথর নিক্ষেপ বুলেটের চেয়ে বেশি ভয়ংকর।’

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সহকারী কমান্ড্যান্ট ফিরোজ আলী বলেন, ‘প্রথমে কয়েক বার গেট ভেঙে ঢুকেছিল। পরে আবার আমরা বের করে দিয়েছিলাম। তারপর আবার রেলওয়ের চারপাশ থেকে অ্যাটাক করছে যাত্রীরা।’

বিমানবন্দর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘একটি পক্ষ থাকে যারা বিনা টিকিটেই প্রতি বছর যাওয়ার পাঁয়তারা করে। আজকে গার্মেন্টস ছুটির পর শ্রমিকদের একটি গ্রুপ একই পাঁয়তারা করেছে। পরে বিমানবন্দর স্টেশনে হামলা চালিয়েছে। যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় আমাদের টিকিট অত্যন্ত কম। ১০০ পার্সেন্ট অনলাইন। আর ২৫ পার্সেন্ট সিট ছাড়া টিকিট দেওয়া হয়। কিন্তু তবুও আমাদের এ সিটও ছিল না। যার কারণে যাত্রীরা হামলা চালিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীদের চাপ কমলে আমরা স্টেশন পর্যবেক্ষণ করে কোথায় কী ক্ষতি হয়েছে, তা দেখব। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’

সারাবাংলা/এসবি/এমও

বিক্ষোভ-ভাঙচুর বিমানবন্দর রেলস্টেশন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর