Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তি নিয়েই মেধাবীদের শঙ্কা


৭ মে ২০১৮ ১৮:৪১ | আপডেট: ৭ মে ২০১৮ ১৮:৫১

।। ইব্রাহীম মল্লিক সুজন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। তবে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা না থাকলেও ‘ভালো’ কলেজে সুযোগ পাওয়া নিয়েই রীতিমতো দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে এই পরীক্ষায় ভালো ফল করা পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে। মানসম্মত হিসেবে পরিচিত কলেজগুলোর সীমিত আসনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত কলেজটিতে তারা ভর্তি হতে পারবে কি না— তা নিয়েই উদ্বেগ তাদের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পর্যাপ্তসংখ্যক কলেজ থাকায় ভর্তির সুযোগ সব শিক্ষার্থীই পাবে। তবে আসনের স্বল্পতা থাকায় জিপিএ ৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীই পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠান না হলেও তুলনামূলকভাবে ভালো কলেজেই মেধাবীরা ভর্তির সুযোগ পাবে।

রোববার (৬ মে) প্রকাশিত হয় এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। এ বছর ১০ শিক্ষা বোর্ডে মোট পাস করেছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ শিক্ষার্থী, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। ফলাফলে দেখা যায়, আগের বছরের চেয়ে পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে মানসম্মত সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোতে আসন রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। এসএসসিতে কেবল জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাই এর দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে এসব কলেজে ভর্তি হতে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা হবে।

নেত্রকোনার একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মাসুদা আক্তার রবি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সন্তানের ভালো ফলে খুশি হয়েছি। আবার ভর্তি প্রক্রিয়া ও পছন্দের প্রতিষ্ঠান নিয়ে চিন্তাও হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: পছন্দের কলেজে ভর্তি হবেন যেভাবে

মাসুদার ছেলে দীপ্ত বিনজোবেরী এবারের এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। সে নেত্রকোনা সরকারি কলেজে পড়তে চায়। তার ভাষ্য, ‘যোগ্যতা অনুযায়ী সুযোগ পাব বলে বিশ্বাস করি। প্রতিযোগিতা রয়েছে, যদি না হয়, তাহলে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে।’

সিলেটের প্রিয়া গুপ্ত অ্যানি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার বড় ভাই তাকে বিবিয়ানা মডেল ডিগ্রি কলেজে পড়াতে চান। অ্যানির ভাই সৈকত গুপ্ত রকি বলেন, ‘ঢাকায় যেহেতু প্রতিযোগিতা খুব বেশি, তাই অ্যানিকে স্থানীয় কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর চেষ্টা করব।’ স্থানীয় ভালো প্রতিষ্ঠানে সুযোগ না পেলে কী করা হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।

ঢাকার ইয়াসিনুর রহমান ইমনের বাবা তারেক রহমানও ছেলের ভর্তি নিয়ে বেশ চিন্তিত। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভালো কলেজগুলো বিশেষ কিছু বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে গণিত ও ইংরেজিতে কম নম্বর পেলে এসব কলেজে ভর্তির সম্ভাবনা কমে যায়। জিপিএ ৫ পেয়েছে, কিন্তু গণিত-ইংরেজিতে ভালো করতে পারেননি— এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। তাই চিন্তা হচ্ছে।’

মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছরও শিক্ষার্থীদের কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে অনলাইনে। বোর্ড থেকেই কলেজ ঠিক করে দেওয়া হবে। এরপর ১৮৫ টাকা ফি দিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ওই কলেজে ভর্তির নিশ্চয়তার কথা জানাবেন, যা আগে কলেজকে করতে হতো। এর মধ্যে আসন খালি থাকাসাপেক্ষে শিক্ষার্থীরা পছন্দের তালিকায় থাকা অন্য কলেজে মাইগ্রেশনের সুযোগও পাবেন। আগামী ১৩ মে শুরু হবে এই অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া।

তবে এবারও রাজধানীর নটরডেম কলেজ, হলিক্রস কলেজ ও সেন্ট জোসেফ কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব পরীক্ষা ও বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করবেন। এক্ষেত্রে ভালো ফল করলেও এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বাড়তি যোগ্যতার প্রয়োজন হবে শিক্ষার্থীদের।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবারে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ঢাকা বোর্ডে ২১ হাজার ৮৭৪, রাজশাহী বোর্ডে ১৯ হাজার ৪৯৮, দিনাজপুর বোর্ডে ১০ হাজার ৭৫৫, যশোর বোর্ডে ৯ হাজার ৩৯৫, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮ হাজার ৯৪, কুমিল্লা বোর্ডে ৬ হাজার ৮৬৫, সিলেট বোর্ডে ৩ হাজার ১৯১ এবং মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে ৩ হাজার ৩৭১।

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, যশোর ও চট্টগ্রাম বোর্ড। মানসম্মত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আসনের বিপরীতে এসব বোর্ডে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে এসব বোর্ডেই শিক্ষার্থীদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা বেশি হবে।

মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকলেও মেধাবীদের ভর্তিতে সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য শেখ এনামুল কবির। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা ভালো ফলাফল করেছে, তাদের সবাই ভর্তি হতে পারবে। তবে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বেগ পেতে হতে পারে।’

জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও দেশে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সেভাবে বাড়ছে না। এজন্য ভালো ফল করলেও কলেজে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের মান যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে সেসব বিষয়ে বিস্তর ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার ও সহযোগী সংস্থাসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ভালো ফল করা একজন শিক্ষার্থী নিঃসন্দেহে প্রতিভাবান। কিন্তু আমাদের যে শিক্ষার সংস্কৃতি, তাতে শেষ পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর প্রতিভা দেশের কল্যাণে কাজে আসছে না।’

ভালো প্রতিষ্ঠান বা ভালো মানের শিক্ষার জন্য শিক্ষানীতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন উল্লেখ করে এই ঢাবি অধ্যাপক আরো বলেন, ‘শিক্ষানীতির বিভিন্ন বিষয়ের সংস্কার দরকার। কারণ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। নানামুখী শিক্ষা দেশের উচ্চ শিক্ষা ও সামগ্রিক শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’ প্রতিষ্ঠানের মান বাড়ানোর জন্য স্থানীয় ধনী ব্যক্তিরাও ভূমিকা রাখতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সারাবাংলা/এমআইএস/টিআর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর