উপমন্ত্রীর দেহরক্ষীর ধাক্কায় আহত ওসি, সিএমপিতে তোলপাড়
২১ এপ্রিল ২০২৩ ২০:৫২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেহরক্ষী কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবীরকে আহত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দেহরক্ষী সন্তু শীল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিশেষ শাখায় উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত আছেন। এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্য হয়ে একজন ওসিকে ধাক্কা দিয়ে আহত করার ঘটনা নিয়ে সিএমপিতে তোলপাড় চলছে।
নগরীর পাথরঘাটা ওয়ার্ডে একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে উপমন্ত্রী নওফেলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। উপমন্ত্রী ওসি জাহিদুল কবীরের কাছ থেকে ঘটনা শুনে এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনারকে অভিযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম-৮ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই এএসআই সন্তু শীল তার দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্ত আছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নগরীর লালদিঘী ময়দানে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাফর আলমের জানাজায় যোগ দেন। সেখানে থেকে তিনি নির্বাচনি এলাকা পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীরের ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
উপমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ির সামনে ছিল প্রটোকলের গাড়ি। এর আগে ছিল ওসি জাহিদুল কবীরের গাড়ি। পাথরঘাটার নজু মিয়া লেইনের মুখে গাড়ি থামার পর নেমে হেঁটে অনুষ্ঠানস্থলে যাচ্ছিলেন নওফেল। পেছনে ছিলেন দেহরক্ষী সন্তু। নওফেলের পাশে ছিলেন ওসি।
হঠাৎ এএসআই সন্তু পেছন থেকে এগিয়ে বাম হাতের কনুই দিয়ে ওসিকে ধাক্কা দিয়ে নওফেলের পাশ থেকে চলে যেতে বলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওসি জাহিদুল দাঁড়িয়ে যান। তিনি উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। তখন ওসি জাহিদুল ও এএসআইয়ের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয়। তখন নওফেল ওসিকে মঞ্চে যেতে বলেন।
উপমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার পর ওসি জাহিদুল সেখানে গিয়ে তাকে বিষয়টি খুলে বলেন। কনুইয়ের ধাক্কায় আঘাত পাওয়া হাতটিও তাকে দেখান ওসি। উপমন্ত্রী এ সময় ওসিকে এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিতে বলেন।
অনুষ্ঠান শেষে ওসি জাহিদুল কবীর চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এরপর থানায় গিয়ে এএসআই সন্তু শীলের বিরুদ্ধে অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে নথিভুক্ত হওয়া জিডিতে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে এএসআই সন্তু শীলের ধাক্কায় আহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন ওসি।
এরপর ওসি জাহিদুল কবীর সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের কপি দেওয়া হয়েছে সিএমপির বিশেষ শাখা ও প্রশাসনিক শাখার দুই উপ কমিশনারকেও।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমি উপমন্ত্রী স্যারকে অবহিত করে কমিশনার স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগের অনুলিপি ডিসি হেডকোয়ার্টার এবং ডিসি সিটিএসবি স্যারকেও দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির উপ-কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারীশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটেছে আমি মৌখিকভাবে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পাইনি। হয়তো ঈদের ছুটির কারণে টেবিলে আসেনি। সোমবার অফিস খোলার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই সন্তু শীল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ধাক্কা দেব কেন? এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলে সবকিছু পরিষ্কার হবে। অহেতুক একটি ইস্যু তৈরি করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা। তবে জানতে চাইলে পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি মঞ্চে ছিলাম। বাইরে কি হয়েছে আমি কিছু জানি না।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম