হাওরের আগাম চাষের ধানে চিটা, লোকসানে দিশেহারা কৃষক
২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১২:১৫
নেত্রকোনা: নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চলে ধান কাটা শুরু হলেও আগাম ব্রি-২৮ ধান চাষে ধানে চিটা হয়েছে। যে কারণে দিশেহারা কৃষকরা। ধান চাষ করে লাভবান না হওয়ার কারণে তাদের লোকসান গুণতে হবে। তবে জেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ব্রি-২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষ করলে এমনটি হতো না বলে তাদের দাবি।
হাওরাঞ্চল ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা অকাল বন্যার হাত থেকে সারা বছরের একমাত্র ফসল রক্ষা এবং আগাম ফলনের আশায় জেলার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিলেন।
বেশিরভাগ জমির ধান চিটা হওয়ায় এবং শিলাবৃষ্টির কারণে ধান জমিতে ঝড়ে যাওয়ায় কপাল পুড়েছে। ফলে তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। এতে সারা বছরের খোরাকি এবং ঋণ পরিশোধ নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
আগের বছরও একই ধান চাষ করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও তাদের অসচেতনতা এবং কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে ফের ক্ষতির মুখে পড়েছে হাওরাঞ্চলের ধান উৎপাদন।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমি। বোরো ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ বছর বেশি চাষ করেছেন হাওর অঞ্চলে।
খালিয়াজুরী উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের সঞ্জিত সরকার বলেন, ‘আমি প্রায় ২৫ কাঠা জমিতে ব্রি-২৮ ধান করেছিলাম। আমার বেশিরভাগ জমির ধান চিটা হয়েছে।’
মেন্দীপুর গ্রামের কৃষক জানু চৌধুরী বলেন, ‘ব্রি-২৮ ধান চিটা হওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি শিলাবৃষ্টির কারণে ধান জমিতে ঝড়ে পড়েছে।’
মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া বলেন, ‘প্রতি কাঠা জমিতে আগে যেখানে ধান হতো ৭-৮ মণ, সেখানে ধান হয়েছে মাত্র ২-৩ মণ।’
চিটা হওয়ার পরও কেন ধান কাটছেন জানতে চাইলে কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, ‘গরুর খাবার সংগ্রহ করতেই ধান কাটছি।’
খালাসী পাড়ার কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমি আমার ধান শ্রমিকদের নিয়ে যেতে বলেছি। শুধু বলঠি খড় যেন আমাকে দিয়ে দেয়।’
কৃষিবিদ দিলীপ সেন বলেন, ‘ব্রি-২৮ ধান আবাদ না করতে যেরকম প্রচার-প্রচারণা করার দরকার ছিলম তা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ফলে কৃষকরা বারবার একই ভুল করে লোকসানের মুখে পড়েছেন।’
জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, ‘আমরা কাঁচা ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেতে চিটা হওয়ায় খোরাকি উঠবে না গোলায়। বার্ষিক শ্রমিকদের মজুরি ঋণ করে দিতে হবে। আর্থিক সহযোগিতা না পেলে পরিবারের সদস্যদের না খেয়ে থাকতে হবে সারা বছর।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘জেলার হাওরাঞ্চলে আগাম জাতের ব্রি-২৮ জাদের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। দ্রুততম সময়ে ধান কাটার জন্য ৭৩০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন প্রস্তুত রয়েছে। তবে হাওরে ব্রি-২৮ ধানে চিটা দেখা দিয়েছে।’
তিনি আরও জানান, মৌসুমের শুরুতেই বালাইনাশক প্রয়োগে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ধানের চাষাবাদ না করতেও কৃষকদের বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ব্রি-২৮ এর পরিবর্তে ব্রি ৮৮ জাতের ধান চাযাবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
সারাবাংলা/এমও