Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির রাজসিক বিদায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:২৯

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে রাজসীকি বিদায় জানালো বঙ্গভবন। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের বর্ণাঢ্য রাজসিক রাষ্ট্রীয় বিদায় অনুষ্ঠান দেখল দেশবাসী। টানা দুই মেয়াদে ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর বঙ্গভবন ছেড়ে রাজধানীর নিকুঞ্জের ‘রাষ্ট্রপতি লজে’র বাসিন্দা হলেন সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) বঙ্গভবনের দরবারে হলে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন আবদুল হামিদ। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি টানা দুই মেয়াদে ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে বঙ্গভবনের প্রধান ফটক পর্যন্ত ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে ও বিউগলের করুণ সুর বাজিয়ে রাজসিক বিদায় জানানো হয়। এরপর তার গাড়ি বহরের যাত্রা শুরু হয়। এ সময় তাকে এসকর্ট দেয় পুলিশের অশ্বারোহী দল।

মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সোমবার সকাল ১১টা পর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে শপথ গ্রহণ হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদে শপথ পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। শপথ গ্রহণ শেষে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নথিতে স্বাক্ষর করেন। শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ার বদল করেন। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সোমবার দুপুরে বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। আর সন্ধ্যায় নতুন রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভবনে উঠবেন।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যসহ কয়েক’শ বিশিষ্ট অতিথি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। নতুন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ও ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন.

এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সংসদ সদস্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতারা, তিন বাহিনী প্রধান, কূটনীতিক, সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ ও বিদায় উপলক্ষে সকাল ৯টার পর থেকে অতিথিরা আসতে শুরু করেন। এতে বঙ্গভবনের সামনে দীর্ঘ হতে থাকে অতিথিদের গাড়ির সারি। নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে অতিথিদের গাড়ি ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের গত ৫২ বছরের ইতিহাসে এর আগে বঙ্গভবনে এমন কোনো বিদায় অনুষ্ঠান হয়নি। কারণ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আগে এ ধরনের অনুষ্ঠান করার মতো মসৃণ পরিবেশ তৈরি ছিল না।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। পরে ২০১৩ সালের এপ্রিলে তিনি ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন।

সোমবার (আজ) সকাল ১১টায় বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে শপথ নেন নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে তিনি তার গুলশানের বাসায় যান। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল দিয়ে গুলশান থেকে রাত ৮টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে পরদিন নতুন রাষ্ট্রপতিকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হবে।

এদিকে শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই বিদায়ী রাষ্ট্রপতি হামিদ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিকুঞ্জে নিজ বাসভবনে চলে যান। আবদুল হামিদকে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) তত্ত্বাবধানে একটি মোটর শোভাযাত্রায় তার নিকুঞ্জের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) একটি চৌকস দল বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। বিদায় অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি ব্যান্ড দল অংশ নেয়।

দুই দলে বিভক্ত বঙ্গভবনের কর্মকর্তারা গাড়ির দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বঙ্গভবনের প্রধান ফটক থেকে বাহিরের গেটের ফোয়ারা পর্যন্ত খোলা জিপে ফুলের পাপড়ি ছুঁড়ে আবদুল হামিদকে বিদায় জানানো হয়। সেখান থেকে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে তাকে শেষবারের মতো মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিকুঞ্জের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।

মো. আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রফ্রন্ট ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আবদুল হামিদ নবম জাতীয় সংসদে স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য আবদুল হামিদ এর আগে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সাতবার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। আজ দুপুরের পর থেকে আবদুল হামিদ ও তার পরিবার তাদের নাগরিক জীবনে ফিরে গেলেন। এটিই হতে পারে পুরো মোটর শোভাযাত্রায় হামিদের শেষ যাত্রা এবং এরপর তাকে আবার ট্রাফিক লাইট এবং মোড়ে থামার অভ্যাস করতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্রলীগের রাজনীতি রাজনীতিবিদ থেকে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন। ৭৩ বছর বয়সী শাহাবুদ্দিন চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়াারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। পরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী হিসেবে মো. শাহাবুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করে নির্বাচন কমিশনে প্রদান করে।

সারাবাংলা/এনআর/ইআ

টপ নিউজ বঙ্গভবন রাজসিক বিদায় রাষ্ট্রপতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর