Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফুলঝাড়ু ডালা-কুলোর বৈশাখী মেলা শুরু, বলিখেলা মঙ্গলবার

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:০৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারের বলি খেলা উপলক্ষে তিনদিনের বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানারকম পণ্যের পসরা নিয়ে এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকালে নগরীর লালদিঘীর পাড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলায় মাটির তৈজসপত্র, খেলনা আর বাঁশ-বেতের আসবাবপত্র, মুড়ি-মুড়কি, গাছের চারা, ফুলঝাড়ু, হাতপাখা, ডালা, কুলো, পাটি, দা-বটি, ছুরিসহ নানা ধরনের গৃহস্থালি ও লোকজ বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বিকিকিনি শুরু করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া কাঠের তৈরি খাট, আলমিরা, আলনাসহ আরও নানা আসবাবপত্র নিয়েও বসেছেন কয়েকজন দোকানি।

বিজ্ঞাপন

মেলায় চট্টগ্রামবাসীর সবচেয়ে বেশি নজর ফুলের ঝাড়ু, বেতের গৃহস্থালীসহ নানা সরঞ্জামের দিকে। কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে ফুলের ঝাড়ু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী আবুল হাশেম। জোড়া ফুলঝাড়ু বিক্রি করছেন ১৫০ টাকায়। তার ভাই আবুল কাশেম দিয়েছেন হাতপাখার দোকান। আবুল হাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বংশ পরম্পরায় আমরা এ ব্যবসা করছি। আমার বাপ-দাদারা এখানে এসে ব্যবসা করে গেছেন। আমরাও তাদের সাথে আসতাম। ফুলের ঝাড়ু ও হাতপাখা নিজেরাই তৈরি করে বিক্রি করি।’

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকা থেকে মেলায় হাতের তৈরী বিভিন্ন রকম মাটির জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন চন্ডীপাল দাশ। মাটির তৈরী জিনিসের মধ্যে রয়েছে টব, ব্যাংক, ফুলদানি ও থালা-বাসন। ছোট থেকে মাঝারি ও বড় এসব জিনিস বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায়। চন্ডীপাল দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে মেলায় এসে ব্যবসা করছি। তিনদিন আগে চট্টগ্রাম এসেছি। যেহেতু ঈদের সময় তাই এবার মানুষ বেশি হবে। এ জন্য এবার পণ্যও বেশি নিয়ে এসেছি।’

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লার হোমনা এলাকার স্থানীয় নন্দলাল মজুমদার বাঁশের তৈরী বিভিন্ন সাইজের বাঁশি নিয়ে মেলায় দোকান দিয়েছেন। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকার বাঁশি আছে তার দোকানে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাঁশির প্রতি আমার একটা আলাদা মায়া কাজ করে। গত ১৫ বছর ধরে আমি নিজেই বাঁশি তৈরি করে বিক্রি করি। গত পাঁচ বছর ধরে চট্টগ্রামের বৈশাখি মেলায় দোকান নিয়ে বাঁশি বিক্রি করি। তবে মানুষ এখন আর আগের মতো বাঁশি কেনেন না।’

আরেক বিক্রেতা এরশাদুর রহমান ঢাকা থেকে এসেছেন কাঠের তৈরি খাট, আলমিরা, আলনাসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে। তিনি বলেন, ‘৮ লাখ টাকার কাঠের জিনিস নিয়ে মেলায় এসেছি। আশা করছি সবগুলো বিক্রি হয়ে যাবে। সকাল থেকে কিছু ক্রেতা আসছে। বলি খেলার দিন বেচাকেনা বেশি হবে বলে আশা করছি।’

এদিকে মেলার প্রথম দিন ও প্রখর রোদে সকালে মেলায় তেমন মানুষ না হলেও বিকেল বা সন্ধ্যায় ভিড় বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবাশীষ ধর সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী মেলায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক জিনিস নিয়ে আসা হয়। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে অনেকবার এসেছি বৈশাখী মেলায়। গতবার আসতে পারিনি। এবার ঈদের ছুটি থাকায় মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসার সুযোগ হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে তাকে পরিচয় করে দিচ্ছি। সুযোগ পেলে বাসার জন্য কিছু কিনেও নেব।’

পোশাককর্মী রীনা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গৃহস্থালি কিছু জিনিসপত্র নিলাম। মেলা ঘুরে দেখছি। আরও কিছু জিনিস কেনার ইচ্ছে আছে। মেলা আরও দুইদিন যেহেতু আছে আবার এসে বাকি জিনিসগুলো কিনবো। এবার মেলায় অনেক জিনিস এসেছে।’

এদিকে বৈশাখী মেলা আজ (সোমবার) থেকে শুরু হলেও ঐতিহাসিক জব্বারের বলি খেলা হবে মঙ্গলবার বিকেলে। এ বছর খেলার ১১৪তম আসর বসছে। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১২ বৈশাখ নগরীর লালদিঘী মাঠে প্রতিবছর এই বলি খেলা হয়।

করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনা কাটিয়ে ২০২২ সালে জাঁকজমকভাবে ১১৩ তম আসরের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও শেষমুহুর্তে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বলিখেলার ভেন্যু লালদিঘী মাঠ সংস্কার করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার ইতিহাসের আলোকে স্থায়ী মঞ্চ, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ আরও কিছু স্থাপনা তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় লালদিঘীর মাঠ বন্ধ থাকায় এবং রমজান বিবেচনায় নিয়ে বলিখেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল কমিটি।

এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে লালদিঘী মাঠের পরিবর্তে গোলচত্বরে বলিখেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার ১১৪তম আসরও লালদিঘী ময়দানের পরিবর্তে গোলচত্বরে করার ঘোষণা দেওয়া হলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কারণ, লালদিঘী ময়দান গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে আব্দুল জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন। বৈশাখী মেলা আজ থেকে শুরু হয়েছে। আগামীকাল জব্বারের বলিখেলা হবে। এবার চাঁদপুর, কুমিল্লা, চকরিয়া, কক্সবাজার ও উখিয়া থেকে আসা ১০০ জন বলি এই খেলায় অংশ নেবেন।’

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘বলিখেলা’ নামে পরিচিত।

১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলিখেলার সূচনা করেন তিনি। সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর লালদীঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলিখেলা। বলিখেলার একদিন আগে-পরে তিনদিন ধরে লালদিঘীর পাড়সহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালী পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে।

সারাবাংলা/আইসি/ইআ

বলিখেলা বৈশাখী মেলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর