।। শাহ্ ওমর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সারাবিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে যা করেছে, তা এর আগের কোনো সরকার করতে পারেনি।’
সোমবার (৭ মে) বিকেলে নিউমার্কেট সংলগ্ন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির নায়েম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ইনসেপশন ওয়ার্কশপ’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। শ্রেণি পাঠদান প্রক্রিয়া আধুনিকায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উচ্চমানের দক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মশালার আয়োজন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর। সারাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষকরা এতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘১০ বছর আগেও শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা ছিল শোচনীয়। তখন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় স্কুলগামী অর্ধেক শিশুই ঝরে পড়ত। এছাড়াও ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ত নবম শ্রেণি থেকে। ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যেও সমতা ছিল না। বর্তমান সরকার এই শিক্ষাব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করেছে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ তুলে দিয়েছি। এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষার ফল জানার সুযোগ করে দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করেছি। আমরা এখন শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে চাই। এতে প্রধান ভূমিকা পালন করবেন শিক্ষকরা। তাই তাদের প্রশিক্ষণ দিতে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।’

কর্মশালায় বক্তব্য রাখছেন শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষাব্যবস্থার আগের চিত্র তুলে ধরে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, একটা সময় আমি গ্রামে ঘুরে বেড়াতাম, গ্রামের স্কুলগুলো দেখতাম। তখন দেখেছি, অনেক শিশু স্কুলে না গিয়ে উদোম গায়ে মাঠে খেলছে বা পুকুরে নেমে দুষ্টামি করছে। তারা কেন স্কুলে যায় না, জানতে চাইলে তারা বলত, ‘খাইতে পারি না, স্কুলে গিয়ে কী হবে?’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমি এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের দায়িত্ব দেন। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য করণীয় সব ধরনের উদ্যোগ নিতে বলেন। তিনি শিশুদের স্কুলে যেতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করতে বলেন। আরো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে বলেন। তার ধারাবাহিকতাতেই আজ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই উন্নতি।’
প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও ঊচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘‘আপনারা যেমন সন্তানকে একটু ভালো খাবার খাওয়াতে চান, তেমনি আমরাও চাইছি আমাদের দেশের সন্তানরা যেন আরেকটু ভালো মানের শিক্ষা পায়। সে লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ক্লাসরুম স্মার্ট ও মাল্টিমিডিয়া করতে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা দায়িত্ব নিলে এই প্রকল্প আরো দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।’
কর্মশালায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ও স্মার্ট ক্লাসরুম স্থাপনের জন্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয় এবং শিক্ষক/কর্মকর্তাদের আইসিটি বিষয়ক মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া করা হয়। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩’শ কোটি টাকা।
প্রশিক্ষণে শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটাল করতে শিক্ষকদের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের প্রক্রিয়া শেখানো হয়। এছাড়াও আগের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে এখনকার শিক্ষাব্যবস্থা তুলনা তুলে ধরেন এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি স্পেশালিস্ট আফজাল হোসেন সারোয়ার। তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে ডিজিটাল ক্লাসরুমের বিকল্প নেই। শিক্ষকরা প্রশিক্ষিত হলে শিক্ষার্থীরাও ভালোভাবে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাবে।
সারাবাংলা/এসও/টিআর