Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশে প্রতি ১৪ জনে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক!


৮ মে ২০১৮ ০৮:১২ | আপডেট: ৮ মে ২০১৮ ০৮:১৩

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া একটি নীরব মহামারী। দেশে বর্তমানে এক কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। আর এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। অন্যদিকে, প্রতিবছর দেশে সাত হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

আজ ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিয়ের আগে পরীক্ষা করলে রক্ত, সন্তান থাকবে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এ রোগে যারা আক্রান্ত হন তাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয় না। ফলে শরীরে মারাত্মক রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রতিমাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত নিতে হয়। আর চিকিৎসা না করা হলে রক্তশূন্যতার কারণেই প্রাণ হারাতে হয়। কেবল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে এই রোগ ভালো হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিয়ের আগে সচেতন হলেই থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ, একজন থ্যালাসেমিয়া বহক যদি আরেক থ্যালাসেমিয়া বাহককে বিয়ে করেন, তাহলে তাদের প্রতিটি সন্তানের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২৫ শতাংশ। তাই পরিবারগুলোতে একাধিক সন্তান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হবার নজিরও রয়েছে দেশে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, রক্তের গ্রুপের সঙ্গে থ্যালাসেমিয়া রোগ হওয়ার কোনো সর্ম্পক নেই।

চিকিৎসকরা জানান, শিশুর জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। পুরো শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন ইনফেকশন, শিশুর ওজন না বাড়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ শিশুদের থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হবার লক্ষণ।

বিজ্ঞাপন

থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতাল থেকে জানা যায়, মানব কোষে রক্ত তৈরি করার জন্য দুইটি জিন থাকে। কোনও মানুষের রক্ত তৈরির একটি জিনে ত্রুটি থাকলে তিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক; আর দুইটি জিনেই ত্রুটি থাকলে তাহলেই তিনি থ্যালাসেমিয়া রোগী। তবে থ্যালাসেমিয়ার বাহকরা সম্পূর্ণ সুস্থ এবং এ রোগের বাহ্যিক কোনো লক্ষণও তাদের মধ্যে তেমনভাবে থাকে না। তাই তাদের চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই।

ফাউন্ডেশন থেকে আরও জানা যায়, দেশে প্রায় ৭ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া মেজর ও ই-বিটা থ্যালাসেমিয়া নিয়ে। বর্তমানে তিন লাখের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। এসব শিশুদের প্রতি দুই থেকে চার সপ্তাহ পরপর রক্ত নিতে হয়।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. আব্দুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০২৮ সালের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণের যে লক্ষ্য স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়েছে, তা অর্জন করতে হলে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। রক্ত পরীক্ষা করে যদি থ্যালাসেমিয়া বাহক চিহ্নিত করা যায়, সেক্ষেত্রে তাদের কাউন্সেলিং ও গর্ভস্থ ভ্রুণ পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার রোগীর সংখ্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’

ডা. আব্দুর রহিম বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৭ লাখ বিয়ে হয় এবং এর ৯০ শতাংশই রেজিস্টার্ড। সে হিসেবে এই ৩৪ লাখ নারী-পুরুষকে বিয়ের আগেই স্ক্রিনিং করা গেলে থ্যালাসেমিয়াতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কমে যাবে। কেবল এ পদ্ধতি অনুসরণ করা গেলেই ২০২৮ সালের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।’ সামাজিক বাধার কারণে পিছু হটলে কখনোই এ উদ্যোগ সফল হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মনজুর মোরশেদও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী দু’জনই যদি থ্যালাসিময়া বাহক হন, তখনই কেবল সন্তানদের এই রোগ হতে পারে। কিন্ত‍ু স্বামী বা স্ত্রীর একজনও যদি সুস্থ হন, তাহলে তাদের সন্তানের এই রোগ হবে না। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়ার পরীক্ষা করাটা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বা লোক কী ভাববে— এ ভাবনা মাথায় নেওয়া যাবে না।’

২০২৮ সালের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ জন্য আমরা থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয়, রোগীদের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের জন্য একটি গাইডলাইন তৈরিতে কাজ করছি। এ গাইডলাইনের আওতায় থ্যালাসেমিয়া রোগ শনাক্ত, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা এবং থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের জন্য সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও জনগণের মধ্যে সচেতনতার জন্য কাজ করব।’ ২০২৮ সালের মধ্যে দেশে থ্যালাসেমিয়ার রোগী থাকবে না বলেও আশাবাদ জানান তিনি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকারিভাবে ব্যপক প্রচারণা চালাতে হবে। সচেতনতা বাড়লে ধীরে ধীরে মানুষ বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার বিষয়টি মেনে নিবে।’ এজন্য আইন মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর