Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপ নির্বাচন কাল, ভোটার উপস্থিতিই চ্যালেঞ্জ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৪৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষের আটমাস আগে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ছোট কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলিয়ে মোট পাঁচ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি-সিপিবিসহ শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো না থাকায় নির্বাচনের তেমন কোনো আমেজও তৈরি হয়নি। নিরুত্তাপ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। ইতোমধ্যে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামও পাঠিয়ে দিয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা শুরু হয়েছে।

উপ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবগুলো কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ ধরে আমরা নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটকক্ষে অযাচিত কোনো লোক প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। একদম সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।’

কর্ণফুলী নদীর উত্তরে মহানগরীর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানা এবং দক্ষিণে বোয়ালখালী উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসন। এ আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৩ জন এবং দুই লাখ ৫৪ হাজার ১০৯ জন নারী।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, মোট ভোটকেন্দ্র ১৯০টি। এর মধ্যে ৭৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ১৭ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। বাকি সাধারণ কেন্দ্রের প্রতিটিতে ১৬ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। টহল দায়িত্বে থাকবে তিন প্লাটুন করে বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য। নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করবেন।

উপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন- নৌকা প্রতীকের নোমান আল মাহমুদ, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি’র কামাল পাশা এবং একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রমজান আলী।

নৌকা প্রতীকের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা এবং সংসদের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আগ্রহ নিয়ে শঙ্কায় আছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা, এমনকি স্থানীয় রাজনীতিক-নাগরিকরাও।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘শহরে-গ্রামে এখনও ঈদের আমেজ কাটেনি। গরমও তীব্রভাবে পড়ছে। শক্ত প্রতিদ্বিন্দ্বী না থাকায় তেমন উৎসবমুখর পরিবেশও সৃষ্টি হয়নি। ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে কি না, এটা নিয়ে সংশয় থাকলেও নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটতে দেওয়া হবে না।’

স্থানীয় ভোটার বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক মো. আব্দুল মোমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই আসনে দু’টি ভাগ। একভাগ সিটি করপোরেশনে, আরেকভাগ বোয়ালখালী উপজেলায়। মাঝখানে কালুরঘাট সেতু। ২০২০ সালেও এখানে উপ নির্বাচন হয়েছিল। তখন সিটি করপোরেশন এলাকার কেন্দ্রে পাঁচ শতাংশেরও কম ভোটারের উপস্থিতির খবর আমরা পত্রপত্রিকায় পড়েছি। অন্যদিকে বোয়ালখালী উপজেলায় প্রায় ২৬ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ছিল।’

‘তখন নৌকার প্রার্থী ছিলেন বোয়ালখালীর বাসিন্দা। এবার নৌকার প্রার্থী সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা। সুতরাং বোয়ালখালীতে ভোটার উপস্থিতি আগেরবারের মতো না-ও হতে পারে। আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ৭০০ ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে দেখেছি। এবার কত ভোটে এমপি হবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।’

২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলারসহ সাধারণ সম্পাদক সেহাব উদ্দিন সাইফু। দুই উপ নির্বাচনের একটিতেও তিনি আর অংশ নিচ্ছেন না।

জানতে চাইলে সিপিবি নেতা সেহাব উদ্দিন সাইফু সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৮ সালেও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। গভীর রাতে ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে জেতানো হয়েছিল। এরপর উপ নির্বাচন একতরফাভাবে হয়েছে। এবারও একতরফা আরেকটি উপ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কোনো ভদ্র, সজ্জন মানুষের পক্ষে এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষেরও এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। আমরা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে আছি। সেই আন্দোলনে মানুষকে সম্পৃক্ত করাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।’

গত ৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। তিনিও ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন দফায় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরীক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি মারা গেলে চলতি মেয়াদের প্রথম দফায় আসনটি শূন্য হয়েছিল।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

উপ-নির্বাচন চট্টগ্রাম-৮ আসন টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর