জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই মেরুতে রওশন-কাদের
২৭ এপ্রিল ২০২৩ ১০:০২
ঢাকা: আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এরশাদ পত্নি বেগম রওশন এরশাদ ও ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের দুই মেরুতে অবস্থান করছেন। বেগম রওশন এরশাদ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতির কার্যক্রম শুরু করেছেন।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিরোধীদলের আন্দোলন এবং আর্ন্তজাতিক রাজনীতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কলাকৌশল বর্তমান সরকারের অনুকূলে না থাকলে জিএম কাদের বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোট করবেন বলে জাপার এক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ খবর জানা গেছে।
সূত্রটি আরও জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের বিদেশ সফরকে জিএম কাদের অত্যন্ত গুরুত্বে সঙ্গে পর্যাবেক্ষণ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি জিএম কাদের দলের নীতিনির্ধারকদের এক বৈঠকে জানিয়েছে, তার ভাবী বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে জাপা নেতৃত্ব দেওয়া ও আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী যাছাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো মীমাংসায় যাবেন না। জাতীয় পার্টি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। দলটির নির্বাচনী প্রতীকও নিবন্ধন করা। সুতরাং কেউ ইচ্ছা করলেই নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে যেতে পারবে না।
তিনি দলের অতীত ঐতিহ্য এরশাদ শাসন আমলের উন্নয়ন কার্যক্রমকে জনগণের সামনে তুলে ধরে জাতীয় পার্টিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। এজন্য তিনি দলটির সিনিয়র নেতাদেরকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
সূত্রটি বলছে, দেবর-ভাবীর দ্বন্দ্বে দলটির সিনিয়র নেতা এবং দলীয় সংসদ সদস্যরা চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন। তাই তারাও সবকিছু পর্যাবেক্ষণ করছেন। দেশি-বিদেশি রাজনীতি বর্তমান সরকারের অনুকূলে থাকলে দলীয় সংসদ সদস্যদের সবাই বেগম রওশন এরশাদের দিকে ঝুঁকবে। জিএম কাদের ওই সময় মাইনাস হয়ে যেতে পারে বলে দলটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র আভাস দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দলের একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, নির্বাচনের মনোনয়নসহ অন্যান্য কার্যক্রমগুলো বেগম রওশন এরশাদের হাতে চলে আসলেই জিএম কাদের অটোমেটিক মাইনাস হয়ে যাবেন। দলের সিনিয়র নেতারা সাংগঠনিকভাবে রাজনীতি করে না। তারা সংসদ সদস্য হওয়ার রাজনীতি করেন। এজন্য যা যা করার দরকার তাই তারা করেন।
তিনি বলেন, গত বিশেষ অধিবেশনের সময় সরকারের নীতিনির্ধরাকে সাথে বেগম রওশন এরশাদ ও সাদ এরশাদের বৈঠকেই এরকম আলামত ভেসে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর শেষে দেশে আসার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হবে। তখনই জিএম কাদেরের অস্তিত্ব নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হবে।
অপর একটি সূত্র জানায়, বেগম রওশন এরশাদ আগামী মে মাস সাংগঠনিক মাস হিসেবে কর্মসুচি গ্রহণ করেছে।পুরো মে মাস রওশন পন্থি নেতারা জেলা ও বিভাগীয় শহরে সফর করবে। জুন মাসে প্রতিনিধি সভা করে চূড়ান্ত মনোনয়নের তালিকা প্রণয়ন করবে। তবে ইতিমধ্যে তিনি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচনে রওশন এরশাদের ভূমিকা হবে ভিন্ন। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থেকে নির্বাচন করলে আসন সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ এরমধ্যে রাখতে পারে বলে সূত্রটি আভাস দিয়েছে।
সূত্রটি জানায়, জিএম কাদের ইতিমধ্যে ৮৪ জনের একটি তালিকা করেছে। এরমধ্যে এরশাদ পরিবারেরই ১০ জন রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব সাইদুর রহমান টেপা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। জাতীয় পার্টিও কৌশল নিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। অনেক আগে থেকেই আমাদের প্রার্থী যাছাই বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, জাপা মনে করে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। তেমনি জাপা তত্ত্বাধায়ক সরকার পদ্ধতিরও বিপক্ষে।
জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ৮৪ জনের একটি তালিকা করেছেন, সেই তালিকায় এরশাদ পরিবারের ১১ জন রয়েছেন। বিষয়টি কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নের জবাবে সাইদুর রহমান টেপা বলেন, প্রার্থী আছে বিষয়টি সত্য। আর এরশাদ পরিবার থেকে ২০ জনও মনোনয়ন পেতে পারেন। যদি তারা রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকেন। এটাতো দোষের কিছু নয়।
জাপা দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, এরশাদ পরিবার থেকে যে ১১ জন নির্বাচনে অংশ নেবেন- তারা হলেন বেগম রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, জিএম কাদেরর স্ত্রী শরীফা কাদের, এরশাদের ছোট বোন মেরিনা রহমান, জিএম কাদেরের ছেলে শামস কাদের (কানাডা প্রবাসী), জি এম কাদেরের মেয়ের জামাই অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ এবং তার বড় ভাই মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, প্রয়াত জিয়া উদ্দিন বাবলুর স্ত্রী ও এরশাদের ভাগ্নি টুম্পা, আসিফ শাহারিয়ার, এরশাদ পুত্র সাদ এরশাদ, এরশাদের ভাগিনা আদেলুর রহমান আদেল।
সারাবাংলা/ এ এইচ এইচ/এনইউ