সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি
২৮ এপ্রিল ২০২৩ ১০:২৫
ঢাকা: ধীর গতি বিরাজ করছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রমে। সেই সঙ্গে রেট সিডিউল পরিবর্তনসহ নানা কারণে ব্যয় বাড়ছে প্রকল্পটির, পাশাপাশি বাড়ছে মেয়াদও। এজন্য প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে। এক্ষেত্রে ধীরগতি, ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির কারণসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
গত ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ প্রশ্ন তোলা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম।
পিইসি সভায় যুগ্ম প্রধান (শিক্ষা) রাহনুমা বেগম জানান, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো পাঠদান সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ভৌত নির্মাণ ও শিক্ষার উপকরণ সরবরাহের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে উন্নত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর বাস্তবায়ন করছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৩ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল। এ জন্য ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২১ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পটির আওতায় সারাদেশে ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সেইসঙ্গে মানসম্মত শিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি শ্রেণি কক্ষে ইন্টারনেট সুবিধা, মাল্টিমিডিয়া শিক্ষা উপকরণ ও আইসিটি ল্যাব নিশ্চিত করা হবে। এরমধ্যে মোট ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া দুই দফায় মোট ২ বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
পরবর্তীতে প্রকল্পের উপকারভোগীদের চাহিদার জন্য ১৬২টি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনের ডিজাইন পরিবর্তন, কিছু অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধিসহ রেট সিডিউল ২০১৮ অনুসরণে মোট ৫ হাজার ৫২২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনে। এরপর গত বছরের ৯ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম পিইসি সভায় কিছু সিদ্ধান্তের জন্য এই প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ৬ তলার পরিবর্তে ১০ তলা ভবন নির্মাণের চাহিদা ও যৌক্তিকতা কতটুকু? তার ব্যাখ্যা পুনর্গঠিত ডিপিপিতে দিতে বলা হয়। সেই ব্যাখাসহ ১৬২টি বিদ্যালয়ের মধ্য থেকে ২০টি বিদ্যালয়ের ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও কিছু অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধি, বাস্তবায়নকাল ৩ বছর ৬ মাস অর্থাৎ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়।’
এছাড়া যেসব কার্যাদেশ এখনও দেওয়া হয়নি সেসব নির্মাণ ও পূর্তকাজ পিডব্লিউডির রেট সিডিউল ২০২২ অনুযায়ী সংশোধন করে মোট ৪ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি আরডিপিপি (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পরিকল্পনা কমিশনে পুনরায় পাঠানো হয়।
সেখানে বলা হয়েছে, গত মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৪ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬২৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা (১৯ শতাংশ)। প্রকল্প নেওয়ার আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়নি। তবে আরডিপিপিতে এমটিবিএফ প্রত্যয়ন ও অর্থ বিভাগ হতে জনবল কমিটির মতামত নিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গত ৩০ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনের অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় পিইসি সভা। সেখানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং প্রায় ৩৭.৮২ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের যৌক্তিকতাসহ ২০টি বিদ্যালয়ের ১০তলা ভবন নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যানবেইসের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ৬ তলা ভবনের পরিবর্তে ২০টি ১০ তলা ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা ও চাহিদা নিরুপণ করা হয়েছে।’
এসময় প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীর অগ্রগতি এবং ১০ তলা ভবনের নির্মাণের চাহিদা যাচাইয়ের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আরডিপিপিতে যুক্ত না করায় পরিকল্পনা কমিশন অসন্তোষ প্রকাশ করে।
পিইসি সভায় অংশ নেওয়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) প্রতিনিধি জানান, এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে ১৪২টি ৬ তলা ভবন নির্মাণসহ বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ১৭২টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া আজিমপুর গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য একাডেমিক ভবন, হোস্টেল, টিচার্স কোয়ার্টার্স, সীমানা প্রাচীরসহ কিছু পূর্ত কাজ করা হবে।
তিনি আরও জানান, পিএসসির সিদ্ধান্তের জন্য উপজেলা পর্যায়ে গণপূর্ত বিঅগের রেট সিডিউল ২০১৮ অনুযায়ী ১৪২টি ভবনের নির্মাণ চলমান রয়েছে। চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে তার প্রতিবেদন অনুযায়ী সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইএমইডির (বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের) প্রতিনিধি বলেন, ‘রেট সিডিউল পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেলে বিদ্যমান নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিকল্পনা কমিশনের আগের অনুমোদন নিয়ে নতুন রেট সিডিউলে টেন্ডার আহ্বান করা যেতে পারে। পরবর্তীতে প্রকল্প সংশোধনের সময় বিষয়টি সমন্বয় করা হয়। শুধুমাত্র স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্তের জন্য রেট সিডিউল পরিবর্তন করে টেন্ডার কার্যক্রম নেওয়ার পদ্ধতিটি যথাযথ হয় না।’ এছাড়া প্রকল্পের অগ্রগতিও অনেক ধীর বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সভায় প্রকল্পের আওতায় অফিস সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক ও ল্যাব যন্ত্রপাতি এবং ফার্নিচার কেনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যয় বেশি প্রতীয়মান হওয়ায় তা পুনঃপরীক্ষার জন্য অনুরোধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘২০টি ভবন ৬ তলার পরিবর্তে ১০ তলা করার প্রস্তাব করায় সংশ্লিষ্ট অঙ্গেও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অফিস সরঞ্জাম, বৈজ্ঞানিক ও ল্যাব যন্ত্রপাতি এবং ফার্নিচার কেনার প্রকৃত চাহিদা ঠিক করে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পুনর্বিবেচনা ও পরীক্ষা করা হবে।’
সারাবাংলা/জেজে/এমও