রাসিক নির্বাচন: কাউন্সিলর ভোটে মাঠ ছাড়ছে না ‘বিএনপি’
২৯ এপ্রিল ২০২৩ ২২:০৫
রাজশাহী: নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। সেই হিসেবে নির্বাচনের বাকি দুই মাসেরও কম। ফলে নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরেশোরেই প্রস্তুতি শুরু করেছে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
এদিকে, নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি অংশ না নেওয়ার কথা জানালেও কাউন্সিলর পদে দলটির অনেক নেতাই ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই নীরব প্রচারণায় নেমেছেন তারা। সভা, সমাবেশ, মতবিনিময় ও ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার ব্যানার সাঁটোনো, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মী-সমর্থকদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। নীরব এই প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন কাউন্সিলররা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে এবার মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। দলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও ঈদ পুনর্মিলনী করে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে তিনি মাঠে নেমেছেন।
এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী নামের একজনকে তাদের দলীয় মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে। মুরশিদ আলম একজন ইসলামী বক্তা। এছাড়া জাতীয় পার্টির একাংশের নেতারা দলটির মহানগরের সাবেক সভাপতি সাহাবুদ্দিন বাচ্চুকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তিনি রওশন এরশাদপন্থী। কিন্তু জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন মহানগর আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন। তবে এইসব দলের প্রার্থীদের এখনও মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরাও খায়রুজ্জামান লিটনের বাইরে কিছু ভাবছে না। তারাও অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন তাকে। আগামী ২ মে রাসিক নির্বাচন নিয়ে ১৪ দলের সভা আছে। সেখানে ভোটের কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না আসার ঘোষণায় এখন পর্যন্ত অনড় বিএনপি নেতারা। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মেয়র পদে প্রকাশ্যে অন্য কোনো প্রার্থী হওয়ার খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তারা রাসিকের ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর দেবে। বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরের ব্যাপক প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে।
১২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন বিএনপির বোয়ালিয়া থানার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন। তিনি ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। সারাবাংলাকে দিলদার বলেন, ‘দীর্ঘ সময় থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেষ মুহূর্তে এসে বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায় রয়েছি। আশা করছি, দল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।’
রাসিকের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০২ সাল থেকে টানা চারবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন শাহ মখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি বেলাল আহমেদ। এবারও তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বেলাল সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বর্তমানে আমি এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আমার ওয়ার্ডে অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। আবার নির্বাচিত হয়ে সেগুলো শেষ করতে চাই। এছাড়া কাউন্সিলর পদে দলীয়ভাবে নির্বাচন হয় না। দলীয় প্রতীকেও নির্বাচনে অংশ নেন না প্রার্থীরা। তাই নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই বলে আমি মনে করি।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। যদি কেউ নির্বাচনে অংশ নেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য পুত্র খায়রুজ্জামান লিটনের কোনো বিকল্প নেই। নগরবাসীও এ বিষয়ে একমত। জনপ্রত্যাশার কথা চিন্তা করেই দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিটনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। সব নেতাকর্মী বিভেদ ভুলে তার পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। আশা করছি, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় লিটন আবারও মেয়র নির্বাচিত হবেন।’
এদিকে, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দল থেকে আমি মনোনয়ন পেয়েছি। নির্বাচন করার প্রস্তুতি চলছে। শিগগরিই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণায় নামব।’
তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা সংসদ নির্বাচনের বাইরে কোনো নির্বাচন নিয়ে এখন ভাবছি না। এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। আগামী সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ার ঘোষণা আসার পরেই আমরা অন্য নির্বাচন নিয়ে ভাবব। আমি বা আমাদের সংগঠনের কোনো প্রার্থীও রাজশাহী সিটি নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। কেউ মাঠেও নামেনি।’
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি জয়ী হওয়ার পরে রাজশাহী নগরীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এখনো তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান। রাজশাহীর উন্নয়নে আরও চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ফের নির্বাচিত হলে ওই প্রকল্পগুলোর জন্যও বরাদ্দ আনব। সেটি হলে রাজশাহী নগরী আরও নতুন রূপ লাভ করবে। আমি আশা করছি সে সুযোগ রাজশাহীবাসী আমাকে দেবেন।’
রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহীতে এবার ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন ভোটার ভোট দেবেন। এর মধ্যে নতুন ভোটার ৩০ হাজার ১৫৭ জন। গত বছর ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার। এবার পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন এবং নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন।
এবার ১৫২টি ভোট কেন্দ্রের ১১৭৩টি রুমে ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি শুরু করেছে। সম্ভাব্য ২১ মে মনোনয়ন দেওয়া শুরু হবে। ২৩ মে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময়। এছাড়া ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর প্রকাশ্যে উৎসবমুখর প্রচারণায় নামবেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা।
রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসার আবুল হোসেন সারাবাংলাকে জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এই নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তারা আন্তরিক। তবে কোনো দল যদি নির্বাচনে না আসে সেটা তাদের ব্যাপার। তারা নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করবেন।
সারাবাংলা/পিটিএম