মহিলা দলের মণি-জেলির বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল
৪ মে ২০২৩ ০০:০২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের ঘোষিত কমিটিকে ‘পঙ্গু ও লুলা কমিটি’ আখ্যা দিয়ে ঝাড়ু মিছিল করেছেন বিদ্রোহী অংশের নেত্রীরা। মিছিলে তারা কমিটির সভাপতি মনোয়ারা বেগম মণি ও সাধারণ সম্পাদক জেলি চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়ীর নসিমন ভবনের সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে নূর আহম্মদ সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। মিছিল শেষে কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে নেত্রীরা কমিটি বাতিলের দাবি জানান।
সমাবেশে সদ্য পদ স্থগিত হওয়া মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ফাতেমা বাদশা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা মামলা-হামলা, কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন, রাজপথের সেই ত্যাগী নেতাকর্মীদের পদবঞ্চিত করে এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেই একচোখা পকেট কমিটি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই পকেট কমিটি মানে না। এটি একটি অগোছালো কমিটি। এখানে একই ঘরের মাকে সহ-সম্পাদক এবং মেয়েকে সম্পাদক করা হয়েছে। জীবনে মহিলা দল করেনি এমন নারীও কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থান পেয়েছে। যাদের নাম এসেছে তাদের বেশিরভাগকেই আমরা ঠিকমতো চিনি না। এই কমিটি একটি পঙ্গু ও লুলা কমিটি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘোষিত কমিটির সভাপতি মনোয়ারা বেগম মণি ও সাধারণ সম্পাদক জেলি চৌধুরী দুই বার মহিলা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১০ বছর দায়িত্বে থেকে ১৫টি থানা ও ৪৩টি ওয়ার্ডে কোনো কমিটি দিতে পারেনি। দলকে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করতে কোনো কর্মী সমাবেশ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। তারা সাংগঠনিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মণি ও জেলি চৌধুরীর বিরুদ্ধে কর্মীদের দিয়ে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে।’
মনোয়ারা বেগম মণিকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ আখ্যা দিয়ে নগর কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি জেসমিনা খানম বলেন, ‘মণি বর্তমান স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দালাল। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যখন রাজপথে জীবন দিচ্ছে, হাজার হাজার নেতাকর্মী যখন কারাগারে, তখন মনোয়ারা বেগম মণি ব্যক্তিগত স্বার্থে আওয়ামী লীগের সাথে লিঁয়াজো করে ফের কাউন্সিলর হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।’
‘চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের একটি সভায় উপস্থিত হয়ে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সর্বকালের সেরা মেয়র উপাধি দিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই মণিকে আবার মহিলা দলের সভাপতি করা হয়েছে। যারা মণিকে পুনরায় মহিলা দলের সভাপতি করার সুপারিশ করেছেন তাদেরও এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের দালাল ঘোষণা দিচ্ছি।’
নগর মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আঁখি সুলতানা বলেন, ‘আমাদের এখন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে থাকার কথা ছিল। সেই আন্দোলনে স্থবিরতা এনে দিয়েছে মহিলা দলের অবৈধ কমিটি। কমিটিতে আমাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রামের কতিপয় নেতার হস্তক্ষেপে আমাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুঃখজনক ব্যপার হলো- আমারা কী শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছি চিঠিতে সেটা উল্লেখ করা হয়নি।’
নগর মহিলা দলের সাবেক সহ-সভাপতি জেসমিনা খানমের সভাপতিত্বে ও সাবেক প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা লিটার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- সায়মা হক, আরজুন্নাহার মান্না, রোখসানা বেগম মাধু, জিন্নাত রাজ্জাক জিনিয়া, জুলেখা বেগম জুলি, নার্গিস বেগম, খায়রুন নেছা, মনোয়ারা বেগম হেনা ও নাজমা বেগম।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এর ১২ মাস ২০ দিন পর গত ৩০ মার্চ কেন্দ্র থেকে ১৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে অবমূল্যায়নের অভিযোগে সেদিনই ১৩ জন একযোগে পদত্যাগ করেন।
এরপর গত ৬ এপ্রিল পদত্যাগ করা তিন জন এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা একজনসহ চার নেত্রীকে সংগঠনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরা হলেন- মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ফাতেমা বাদশা এবং নগর মহিলা দলের জেসমিনা খানম, আঁখি সুলতানা ও দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটা। পরে চারজনের প্রাথমিক সদস্যপদসহ মহিলা দলের সকল পদবি স্থগিত করা হয়।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম