নির্বাচন ঘিরে আসছে ড. কামালের রাজনৈতিক সমঝোতা প্রস্তাব
৪ মে ২০২৩ ২০:৪০
ঢাকা: ২০২৩ সালের শেষ কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে যে, আসছে জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও তাদের জোট এবং সমমনা দলগুলো নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দাবি, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ডেড ইস্যু। সেটা ফিরিয়ে আনার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই সরকারের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’র উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রস্তাব প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছেন এবং সেই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু, অবাদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে একটি কাঠামো তুলে ধরা হবে। গণফোরামের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রটি জানায়, রাজনৈতিক প্রস্তাবটি এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়। প্রস্তাবটি প্রণয়নের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন নিয়ে জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মাঝে তা তুলে ধরা হবে। প্রস্তাবটি চলতি বা আগামী মাসে তুলে ধরবে গণফোরাম।
সূত্র আরও জানায়, সরকার এখন নির্বাচন নিয়ে যা বলছে, তা তাদের রাজনৈতিক কৌশল। নির্বাচনের দিনক্ষণ যখন ঘনিয়ে আসবে তখন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার একটি বিষয় সামনে চলে আসবে। বহির্বিশ্বের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র, জাতিসংঘ, এমনকি দাতা সংস্থাগুলোও চাইবে সমঝোতার মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন হোক। এখনও তারা বিভিন্ন ফোরামে সকলের অংশগ্রহণে অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ জন্যই ড. কামাল হোসেন বহির্বিশ্বের কোনো শক্তির ইঙ্গিতে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রস্তাবের ফর্মুলাটি প্রণয়ন করছে।
জানা গেছে, এ সব বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ মে) গণফোরামের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। এর আগে, গত সপ্তাহের বৈঠকে নির্বাচনে একক নাকি জোটভুক্ত অংশগ্রহণে যাবে গণফোরাম তা নিয়ে চুলচেরা আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিলে গণফোরামও জোটবদ্ধভাবে যাবে। তবে তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর।
সংশ্লিষ্টসূত্র জানায়, গণফোরাম জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। সেজন্য দলীয় প্রার্থীও বাছাই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫০ জন প্রার্থী বাছাই হয়েছে। সেইসঙ্গে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে জেলা পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে দলটি। ৪০ জেলায় দলটির কমিটি রয়েছে। তবে বর্তমানে তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে দূরে। সেজন্য চলতি মাসে জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সদস্য এস এম আলতাফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ মাসেই আমরা রাজনৈতিক সমঝোতা প্রস্তাবটি উত্থাপনের চেষ্টা করব। প্রস্তাবটি প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর একটি বৈঠক হলেই এটি চূড়ান্ত হবে। এর পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা পেশ করা হবে। অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে সমঝোতা প্রস্তাবে ছয়/সাতটি দফা থাকতে পারে।’
‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ প্রস্তাবের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নিলে গণফোরামও যাবে। তবে সবকিছু পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি।’
এর আগে, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন ড. কামাল হোসেন। ওই বছর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু সেই নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়। বর্তমানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যক্রম নেই বললেই চলে।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ১৯ এবং ২০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদ থেকে বাদ পড়েন ড. কামাল হোসেন। ওই সময় তাকে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। কিন্তু তিনি তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। এই অসন্তুষ্টি থেকে তিনি ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট রাজনৈতিক দল গণফোরাম গঠন করেন। যদিও ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর গণফোরাম ভেঙে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম