সুদান: বাংলাদেশিদের ফেরানোয় প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টার অভিযোগ
৫ মে ২০২৩ ০৯:১১
ঢাকা: সুদানের খার্তুম থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রে একটি গ্রুপ সহযোগিতা না করে উল্টো প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এ অভিযোগ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
শাহরিয়ার আলম জানান, ৬৭৫ জন পোর্ট সুদানে পৌঁছেছেন। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের ট্রাভেল পারমিট সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা প্রথম পর্যায়ে নারী, শিশু এবং অসুস্থদের জাহাজে আসন সংখ্যা অনুসারে জেদ্দার উদ্দেশে পাঠাব। বাকিরা পরবর্তী জাহাজে রওনা হবেন। প্রতিনিয়ত জাহাজ ছাড়ছে। কোনো সমস্যা হবে না।
সুদান থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতার অনুরোধ করেন শাহরিয়ার আলম।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, খার্তুম থেকে রওনা হওয়ার সময় থেকে একটি গ্রুপ আমাদের সহযোগিতা না করে নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছেন। আমাদের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের প্রত্যাবর্তনে কাজ করছেন। দয়া করে অসহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকবেন।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা যারা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ফেরার পরে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কয়েকজনের জন্য সবার জীবন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আমরা ফেলব না।
উল্লেখ্য, বুধবার (৩ মে) সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে সুদানে আটকে পড়া ৬৫০ জন বাংলাদেশি রাজধানী খার্তুম থেকে পোর্ট সুদান বন্দরে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের বহনকারী ১৩টি বাস সেখানে পৌঁছায়। সেখানে সাময়িকভাবে থাকার পর জেদ্দাগামী জাহাজে উঠবেন তারা।
বুধবার (৩ মে) সুদানে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ পোর্ট সুদান থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তারেক আহমেদ বলেন, ‘পোর্ট সুদানে একটি স্কুল বিল্ডিংয়ে বাংলাদেশিদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং যে কয়েকদিন তারা এখানে থাকবে, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্কুল বিল্ডিংয়ে মোট আটটি রুম আছে এবং আরেকটি খোলা জায়গায় শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে।’
তিনি জানান, ‘পোর্ট সুদান থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদে জেদ্দায় পাঠানো হবে। সৌদি জাহাজে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। এ জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ সহায়তা করছে বলে তিনি জানান।’
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেসব বাংলাদেশির কাছে পাসপোর্ট আছে, তাদের ডকুমেন্ট সৌদি কর্তৃপক্ষকে আমরা সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেব তাদের ভিসার জন্য। এ ছাড়া যাদের পাসপোর্ট নেই, তাদের ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করে সৌদি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সৌদি জাহাজে জায়গা থাকা সাপেক্ষে বাংলাদেশিরা জেদ্দায় যাবে। ওই জাহাজে অন্য দেশের নাগরিকরাও ভ্রমণ করছেন।’
এদিকে, সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, সার্বিক ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে জেদ্দা কনস্যুলেটের তত্ত্বাবধানে জেদ্দায় প্রত্যাবাসনকারীদের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে (ইংলিশ সেকশন) রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সুদান থেকে প্রত্যাবর্তনকারী বাংলাদেশিদের সৌদিদের বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই দেশে ফেরত পাঠানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে সৌদি কর্তৃপক্ষকে নিশ্চয়তা দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সুদানপ্রবাসীরা যেদিন জেদ্দা পৌঁছবেন, সেদিন থেকেই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে তাদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
উদ্ধারের পরিকল্পনা জানিয়ে দু’দিন আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, যাদের কাছে পাসপোর্ট আছে, তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে উঠিয়ে নেওয়া এবং যাদের কাছে প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট নেই, তাদেরকে ট্রাভেল পারমিট দ্রুততার সঙ্গে দিয়ে নেক্সট অ্যাভেইলেভল ভেসেলে করে পাঠানো।
এর আগে, ২৯ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুদানে বসবাসরত এক হাজার ৫০০ বাংলাদেশির মধ্যে ৭০০ জন দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আটকে পড়া ওইসব বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য কাজ করছে সরকার। তাদের প্রথমে খার্তুম থেকে পোর্ট সুদান এবং পোর্ট সুদান থেকে পোর্ট জেদ্দায় ফিরিয়ে আনা হবে। জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ বিমানের কয়েকটি ফ্লাইটে তাদের ঢাকায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে ১৫ এপ্রিল থেকে সংঘর্ষ চলমান। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এ সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত চার শর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেসামরিক লোকজন ছাড়াও জাতিসংঘকর্মী, মিসরের সহকারী প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাও রয়েছেন।
সুদানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
সারাবাংলা/এসবি/ এনইউ