২ বছরেও শেষ হয়নি হেফাজত নেতাদের দুর্নীতির অনুসন্ধান
৫ মে ২০২৩ ১৫:৪৩
ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের আগে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের দুর্নীতির অনুসন্ধান শেষ হচ্ছে না। তদন্ত কাজেও নেই তেমন অগ্রগতি। সর্বোচ্চ ৭৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ করার কথা থাকলেও ২ বছর পেরিয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি। এমনকি রহস্যজনক কারণে হেফাজত ইসলামের কোনো নেতাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি দুর্নীতি দমনি কমিশন (দুদক)।
জানা যায়, ২০২১ সালের ২৬ মার্চের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় সহিংসতা চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। পরে হেফাজতের ডাকা হরতালে চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় থানা, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়। কয়েকদিনের সহিংসতায় মারা যান ১৭ জন। পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় হেফাজতের একাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালেই হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ ৫০ নেতার সম্পদের খোঁজে নামে দুদক। সে সময় পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ৬ সদস্যের বিশেষ টিম। এর মধ্যে তিন দফা পরিবর্তন করা হয় টিম। দুই বছর পর সম্প্রতি সেই কমিটি আবারও পুনর্গঠন করা করা হলেও অনুসন্ধানে নেই কোনো অগ্রগতি।
কমিশনে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সংগঠনের তহবিল, বিভিন্ন মাদরাসা, এতিমখানা ও ইসলামি প্রতিষ্ঠানের অর্থ এবং ধর্মীয় কাজে দেশে আসা বৈদেশিক সহায়তায় আত্মসাত এবং দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং এবং অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠে।
দুদকের পক্ষ থেকে সে সময় সম্পদের তথ্য চাওয়া হেফাজত নেতাদের মধ্যে ছিলেন- সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটির প্রধান জুনায়েদ বাবুনগরী (মৃত), হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের ও মাহফুজুল হক, যুগ্ম মহাসচিব জুনাইদ আল হাবিব, মামুনুল হক, নাসির উদ্দিন মনির, জালাল উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক মনির হোসাইন কাসেমীসহ আরও অনেকে।
এরপর হেফাজত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী (মৃত), মামুনুল হক, মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, আল-হাইয়্যাতুল উলয়াও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি মাহমুদুল হাসানসহ অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। কিন্তু এরপর আর গতি আসেনি অনুসন্ধানে।
আরও জানা গেছে, কমিশনের অনুসন্ধান টিম ৩ বার পুণর্গঠন হয়েছে। তাতেও অনুসন্ধান কার্যক্রমে গতি ফেরেনি। এমনকি এখন পর্যন্ত হেফাজত নেতাদের সম্পদের তথ্য চেয়ে কমিশন থেকে কোন নোটিশও পাঠানো হয়নি হেফাজত নেতাদের।
কমিশনের একটি সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৮-৯ মাস। এই সময়ে মধ্যে হেফাজত নেতাদের দুর্নীতির অনুসন্ধান ফাইলের কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুর্নীতি দমিন কমিশনের (দুদক) কাছে নির্বাচন কোনো বিষয় নয়। আমাদের ১২ মাস কাজ করতে হয়। আমরা যেকোনো অভিযোগ পেলে সেটা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার চেষ্টা করি। এখন পর্যন্ত অনুসন্ধান টিম কমিশনে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করেনি। অনুসন্ধান টিম কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করলে কমিশন সেটার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’
উল্লেখ্য, ধর্মীয় সংগঠন হেফাজত ইসলাম ২০১০ সালে বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর ২০১১ সালে বাংলাদেশ নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে তীব্র বিরোধিতায় মাঠে নামে। এরপর ২০১৩ সালে ব্লগারদের ফাঁসি দাবি এবং মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধীদের বিচারের বানচালের উদ্দেশে ৫ মে ঢাকায় লংমার্চ এবং শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে সংগঠনটি সবার নজরে আসে।
সারাবাংলা/এসজে/এমও