Saturday 26 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সবকিছু ফাইনাল, কালুরঘাট সেতু হবেই : রেল সচিব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ মে ২০২৩ ১৮:১৩ | আপডেট: ৬ মে ২০২৩ ২৩:০৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর সড়কসহ রেলসেতু নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে, এই সেতু হবেই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে। ২০২৮ সালের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে।’

শনিবার (০৬ মে) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর। কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর আগে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন ও ফেরি চালুর বিষয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যমান কালুরঘাট রেলসেতুর দূরবস্থা তুলে ধরে সভায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা জানান, ১৯৩১ সালে নির্মিত হয় কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৬২ সালে যান চলাচল শুরু হয়। সেতুর বর্তমান অবস্থা খারাপ। এর আগে দু’বার বড় সংস্কার করা হয়েছে। এখন কক্সবাজারে ভারী ইঞ্জিনের ট্রেন যাবে। তাই কালুরঘাট সেতু সংস্কার করতে হচ্ছে। বর্তমানে এই সেতুতে ট্রেনের গতি ১০ কিলোমিটার। সংস্কারের পর ৫০-৬০ কিলোমিটার হবে।

উল্লেখ্য, প্রায় ১০০ বছর বয়সী বিদ্যমান কালুরঘাট সেতু দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি যানবাহনও চলে। একমুখী সেতুর একপাশে গাড়ি উঠলে আরেকপাশ বন্ধ থাকে। ফলে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি চলছে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। ১৯৯১ সাল থেকে প্রত্যেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের বিষয়টি রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে প্রার্থীদের প্রচারণা ও প্রতিশ্রুতিতে গুরুত্ব পেয়ে আসছে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেতুর দাবি আরও জোরালো হয়। ২০১৪ সালে আন্দোলন শুরু করে ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ’।

নতুন সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিন দফায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল ২০১৯ সালে মারা যান। এরপর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ গত ফেব্রুয়ারিতে মারা গেছেন। সর্বশেষ ‘একই মূলা ঝুলিয়ে’ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নোমান আল মাহমুদ।

দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি, বিভিন্ন আশ্বাসের পরও সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া ঝুলে থাকা নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ আছে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে।

জনসাধারণের ক্ষোভ ও হতাশার বিষয়টি শনিবারের সভায় রেলসচিবের সামনে তুলে ধরেন বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ও পৌর মেয়র জহুরুল আলম এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন।

দুই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘কালুরঘাটে নতুন সেতু নিয়ে এলাকাবাসীর কাছে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সেতুর দাবি নিয়ে সোচ্চার থাকা দুজন সংসদ সদস্য মারা গেছেন। কিন্তু সেতু হয়নি। আবার বিদ্যমান সেতু সংস্কার করে দেওয়ার পর আর নতুন করে সেতু হবে না, এ নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।’

ইউএনও মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘কালুরঘাটে নতুন সেতু নিয়ে মানুষের মনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা মনে করছেন কালুরঘাটে নতুন সেতু হবে না। তাই মানুষের অসন্তোষ দূর করতে আগামী নির্বাচনের আগে নতুন সেতু নিয়ে সরকারি ঘোষণা দেওয়া যায় কি না? এ রকম ঘোষণা দেওয়া হলে মানুষের অসন্তোষ দূর হবে।’

এরপর জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে রেল সচিব বলেন, ‘আপনারা জনপ্রতিনিধি, আপনাদের জবাবদিহি করতে হয়, এটি আমরা বুঝি। আপনাদের শুনতে হয় নিশ্চয়- অনেকদিন তো শুনলাম ব্রিজ হবে, ব্রিজ কই? সংস্কার হলে নতুন ব্রিজ আর হবে কি না, একথা শুনতে হচ্ছে আপনাদের। আমি আপনাদের বলছি- নতুন সেতু হবেই। এটা চূড়ান্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে একঘণ্টা সময় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মেসেজ হচ্ছে, সেতু হবেই। এখন আপনাদের যে মেসেজ সেটা আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেব।’

এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সচিবের উদ্দেশে বলেন, ‘মানুষ এসব কথা আর বিশ্বাস করতে চায় না।’

রেলসচিব বলেন, ‘কথা খুব পরিষ্কার, কালুরঘাট সেতুর সবকিছু ফাইনাল হয়ে গেছে। প্রথম নকশায় কিছু সমস্যা ছিল। আবার নকশা করা হয়েছে। সেটির চূড়ান্ত অনুমোদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এরইমধ্যে দিয়েছেন। রোড কাম রেলব্রিজ হবে। এটি তো এখন সিঙ্গেল লেইনে আছে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমরা ডাবল লেইন করছি। কারণ, ভবিষ্যতে যখন ডাবল লেইনের প্রয়োজন হবে তখন তো আমরা আরেকটা ব্রিজ বানাতে পারব না।’

‘এখন কিছু চুক্তির বিষয় আছে। আমরা সময় নিচ্ছি, চুক্তির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। একটা বিষয় বুঝতে হবে যে, তিনমাস পর সেতুর কাজ শুরু হলে যে খরচ, চারমাস পর শুরু হলেও একই খরচ। সুতরাং সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে। আর ২০২৮ সালের মধ্যে নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

এদিকে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত ফোকাল পারসন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সম্ভাব্য দাতা সংস্থা কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন বা দোহা’র প্রণীত নকশার চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এখন প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তৈরি হচ্ছে। নতুন নকশায় সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে সিঙ্গেল ডেকে অর্থাৎ চার লেইনের সেতুর একপাশে থাকবে ট্রেন আসা-যাওয়ার দুটি পথ এবং অপর দুটি পথ থাকবে গাড়ি আসা-যাওয়ার জন্য।

তিনি জানিয়েছেন, প্রকল্পটি চলতি বছরের শেষদিকে একনেকে উঠতে পারে। এরপর টেন্ডারসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ২০২৫ সালের শুরুতে নির্মাণকাজ শুরুর সম্ভাবনা আছে।

সারাবাংলা/আরডি/একে

কালুরঘাট সেতু চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর