ঢাকা: ভোট সামনে রেখে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘রণ প্রস্তুতি’ শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (৮ মে) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসে, তখন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, হামলা নির্যাতন এবং পাইকারি গ্রেফতার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী সরকারের দলবাজ প্রশাসন। ভোট ডাকাতির নানা রকম কারিগরি করতে মাঠ সাজানো শুরু করে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো একই প্রক্রিয়ায় পুরনো পথে হাঁটতে শুরু করেছে তারা। ইতোমধ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রণপ্রস্তুতি শুরু করেছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ‘তখতে তাউস’ রক্ষা করতে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিতে শুরু করেছে। এখনও আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় সারাদেশে বিএনপির প্রায় ৪০ লাখের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।’
‘কোনো কিছু ঘটেনি, হঠাৎ বলে দিল নাশকতা হয়েছে। নিজেরাই বোমা রেখে মামলা দিচ্ছে, যার সুস্পষ্ট প্রমাণ এবার দেখা গেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে পুলিশ বোমাসহ প্রবেশ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে। পুলিশ যে বোমা নিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকেছে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘নিজেদের অফিস ভাংচুর করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে আসামি করার খেলা চলছে। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ কেউ শুনেনি, দেখেওনি। কিন্তু আসামি করা হয় মৃত ব্যক্তি ও কারাবন্দি নেতাদের। সারাদেশে চলছে ইতিহাসের জঘন্যতম এই ভয়াবহ মামলাবাজী আর আটক বাণিজ্য।’
‘আমি ছোট্ট একটি উদাহরণ দিচ্ছি ঢাকার একটি থানা এলাকার চিত্র দিয়ে। গত বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘মৃত ব্যক্তি, কারাবন্দিও ককটেল ছুড়েছেন!’ শিরোনামে গায়েবি ও মিথ্যা মামলা নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে-রাজধানীতে মৃত ব্যক্তিকেও ককটেল বিস্ফোরণের আসামি করেছে পুলিশ। একই অভিযোগে প্রবাসী এবং কারাবন্দিদেরও আসামি করেছে তারা। পুলিশের বিস্ময়কর এই সমস্ত্র তৎপরতায় প্রমাণিত হয়, সরকার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক সর্বনাশা পরিস্থিতি তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছে’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলার দৃশ্যপট অভিন্ন। এই গায়েবি মামলা গ্রেফতার নিয়ে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশ, জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও সরকার নিজেকে রক্ষা করতে এই অপকর্মে মরিয়া। ২০২১ সালের ২৪ জুন হাইকোর্ট এর একটি বেঞ্চ গায়েবি মামলা করে নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি থেকে রক্ষায় পাঁচ দফা নির্দেশনা দিলেও তা পরোয়া করে না আওয়ামী সরকারের পুলিশ প্রশাসন।’
রিজভী বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী সরকারি দলীয় সংস্থায় পরিণত হয়েছে—এমন আলোচনা এখন সর্বত্র। নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনের দলবাজ হোমড়া চোমড়া ও প্রশাসনের অফিসাররা আবারও ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ভবনসহ এখানে সেখানে ভোট ডাকাতির কলাকৌশল ও মাঠ সাজানো নিয়ে গুপ্ত বৈঠক শুরু করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার প্যাকেজ খরচ হিসাবে ১২২৬ কোটি টাকার বাজেট চেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে ১৫৮ কোটি টাকায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনাকাটায় ব্যয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঠেকাতে ৫৪০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রস্তাব রয়েছে তাদের বাজেটে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি ও কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার কিনতে মোট ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ৮ নম্বর খাতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধির ফলে পুলিশের গতিও বাড়াতে হবে।’
‘এখানেই থেমে নেই। নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় পরিচয় দেখে পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনি রদবদল ও পদোন্নতি শুরু হয়েছে। তবে এতসব করে এবার আর পার পাওয়া যাবে না। জনগণ রাজপথে নেমেছে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন হবে’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘জনগণের ন্যায্য দাবির প্রতি সরকার তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার শর নিক্ষেপ করে যাচ্ছে। স্বার্থান্ধতা, ঔদ্ধত্য, অসহিষ্ণুতা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিতে জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঝটপট সাদাকে কালো এবং কালোকে সাদা বানিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালালেও তার সরকারের অন্যায়-অনাচার আর দুর্নীতিকে পর্দার আড়ালে রাখতে পারছেন না।’
রিজভী বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জনদাবিকে অগ্রাহ্য করে সামনের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা মিশ্রিত অনিশ্চয়তা ও সন্ধিগ্ধতার জন্ম দিচ্ছেন অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে। তবে তাঁর এই অনড় অবস্থান, একগুঁয়েমি এবং ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার সকল ফন্দি জনগণ নস্যাৎ করে দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুর খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, মীর সরফত আলী সপু,আসাদুল করীম শাহীন, মুনির হোসেন, আমিরুল ইসলাম আলীম, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।