Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ— সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে কাটা হয়েছে ৬০০ গাছ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ মে ২০২৩ ১৮:৩৩

ঢাকা: পরিবেশকর্মীরা অভিযোগ করছেন, ধানমণ্ডির সাতমসজিদ সড়কে সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে কাটা হয়েছে ৬০০ গাছ।

সোমবার (৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন’ এর ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, তথ্য কর্মকর্তার কাছে সব তথ্য দেওয়া আছে।

তথ্য কর্মকর্তা বলেন, তার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তবে প্রধান প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন।

প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাতমসজিদ সড়কে ৫০টির মতো বড় গাছ কাটা হয়েছে। এর বাইরে কিছু ঝোঁপঝাড়, গুল্ম ও ছোট ছোট গাছ কাটা হয়েছে।’

অবশ্য এর আগে এক বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ জানান,  বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সড়কের দুইদিকে সমান জায়গা না থাকায় অ্যালাইনমেন্ট ঠিক রাখতে ও সৌন্দর্য রক্ষায় গাছ কাটা হয়েছে। বাস রুট র‍্যাশনালাইজেশনের আওতায় বসিলা টু ঘাঁটারচর পর্যন্ত রুট ঠিকঠাক করতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, প্রধান প্রকৌশলীসহ সব মহলের সঙ্গে কথা বলেই ডিজাইন করা হয়েছে।

এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল সভাপ্রধান হিসেবে বক্তব্য দেন। শিল্পী ও মিউজিয়াম কিউরেটর এবং আন্দোলন সমন্বয়কারী আমিরুল রাজিব সঞ্চালনা করেন।

আন্দোলনের সমন্বয়কারী আমীরুল রাজীব বলেন, ‘সাত মসজিদ সড়কে আগ্রাসী প্রজাতির গাছ ছিল না। গাছগুলো কোনোভাবেই সড়ক ও নাগরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়। গাছগুলো রেখেই সড়ক সম্প্রসারণ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। রাতের আঁধারে গাছগুলো কাটা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সড়ক সম্প্রাসারণের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছে গাছ কাটার অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে সঠিক অনুমোদনপত্র দেখাতে পারেননি বলে জানান আমীরুল রাজীব।

তিনি বলেন, ‘তারা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দেওয়া কেবলমাত্র কাজ শুরুর একটি নির্দেশপত্র দেখান যেখানে কোথাও গাছ কাটার নির্দেশনা নেই। বলা যেতে পারে, অবৈধভাবেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ভাষ্য, গাছগুলো সড়কদ্বীপের জন্য বেমানান ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাহলে এই সড়কে যদি ভুল করে গাছ লাগানো হয়ে থাকে, সে ভুল করা কর্মকর্তাকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে রাস্তায় সর্বসাকুল্যে ৩০টি গাছ রয়েছে। সাতমসজিদ সড়কের ঐতিহ্য হিসেবে এই গাছগুলো রক্ষায় আমরা কাজ করছি। রাতে সবাই মিলে পাহারা দিচ্ছি। আমাদের দাবি একটি, সড়কের গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। আবার নতুন করে গাছ রোপণ করতে হবে।’

আমীরুল রাজীবের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, লেখক পাভেল পার্থ, নগরবিদ আমিন মোহাম্মদ খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হক প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে ধারণপত্র উপস্থাপন করেন প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহম্মদ খান। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন পি হক, নাট্যব্যক্তিত্ব ও সংস্কৃতিজন মামুনুর রশীদ, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিক্ষার্থী ও আন্দোলন সংগঠক আদৃতা রায় বক্তব্য দেন। এতে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুজ্জামান, গ্রীণ ভয়েসের আলমগীর হোসেন, উত্তরসূরীর মোস্তফা জামান, অর্থনীতিবিদ নাঈম উল হাসান, শিল্পী সৈয়দ মুহাম্মদ জাকির প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলন শেষে ঢাকা নগরভবনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর আন্দোলনকারীরা গাছ কাটা বন্ধ এবং কাটা গাছের স্থানে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানোর জন্য ৩৭ জন নাগরিকের স্বাক্ষর সংবলিত চিঠি দেওয়া হয়।

পরিবেশ আইনজীবী সমিতির পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হক বলেন, ‘ঢাকায় এমনিতেই গাছ নাই। আর গাছ কাটার দুঃসাহস দেখাবেন না। আপনারা কথায় কথায় সিঙ্গাপুরের কথা বলেন। সিঙ্গাপুরের উন্নয়ন মডেল নিলেও সিঙ্গাপুরের প্রকৃতির মডেলের কথা বলেন না। আপনারা গাছ কাটা বন্ধ করেন, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সাত মসজিদ সড়কদ্বীপে গাছ কাটা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং কেটে ফেলা গাছগুলোকে স্থানীয় প্রজাতি দ্বারা প্রতিস্থাপন, নগরে বনায়ন, গাছ রক্ষা ও কাটার প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন প্রভৃতি।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

গাছ লাগানো গাছকাটা বাস সৌন্দর্য বর্ধন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর