Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোপাইলি ক্যান— বাবুলের ‘মন্তব্য’ নিয়ে আইনজীবীর জেরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ মে ২০২৩ ২১:২৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার সাক্ষী তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দ্বিতীয় দফায় জেরা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (৮ মে) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে মিতু হত্যা মামলার জেরা শুরু হয়।

এর আগে একই আদালতে দুই দফায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। গত মঙ্গলবার (২ মে) সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর তাকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

বেলা ১টা ২০মিনিটের দিকে মোশাররফ হোসেনের জেরা শুরু হয়। মাঝে এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত চলা জেরায় তার দায়ের করা এজাহার, বাবুল আক্তারের বিবাহের আগের সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন আইনজীবীরা। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আদালত আগামী বুধবার (১০ মে) পর্যন্ত কার্যক্রম মূলতবি করেছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ।

জেরা শেষে মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি যে মামলাটা করেছিলাম সেটির ওপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কিছু প্রশ্ন করেছেন। আসামি মুসার সঙ্গে বাবুল আক্তারের যে কথোপকথন ‘কোপাইলি ক্যান, গুলি করতে বলছিলাম’ সেটি অনেকেই জেনেছে, মিডিয়ায়ও এসেছে। সেটা আমি এজাহারে উল্লেখ না করায় তারা সেটির সুযোগ নিতে চেয়েছে। ওরা জানতে চেয়েছে আমি কিভাবে এটি শুনেছি।’

‘আর ওই নারীর (বাবুলের বিয়ের আগে বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক) কারণে মিতুকে বাবুল আক্তার হত্যা করেছে এরকম কোনো কথা আমি কখনো কোথাও বলিনি। এটা আলাদা বিষয়। বাবুল আক্তারের বিয়ের আগে তার সঙ্গে পরকীয়া ছিল এ ধরনের কথাবার্তা সব জাতীয় পত্রিকায় এসেছে। আমি দেখেছি। তবে তার কারণে মিতু হত্যা নয়। ভারতীয় বান্ধবীর সঙ্গে পরকীয়ার কারণেই মিতু খুন হয়েছে। তারা বিষয়টিকে এক করে সুযোগ নিতে চাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

মোশাররফকে বাবুল আক্তারের আইনজীবীর জেরা

প্রশ্ন: পুলিশকে জমা দেওয়া বই আপনার হাতে কত দিন ছিল?

উত্তর: ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১২ মে পর্যন্ত ছিল। চট্টগ্রাম এসে আমি প্রথম পিবিআই অফিসে যাই। সেখান থেকে পাঁচলাইশ থানায় যায়।

প্রশ্ন: পাঁচলাইশ থানায় গিয়েছেন এটি আপনি গোপন করেছেন?

উত্তর: স্মরণে নেই

প্রশ্ন: নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন এমন অভিযোগ কোথাও করেছেন?

উত্তর: না

প্রশ্ন: পাঁচলাইশ থানায় মামলা করতে কখন গিয়েছেন?

উত্তর: চট্টগ্রাম আসার পরের দিন দুপুর ১২ টায়।

প্রশ্ন: এজাহার কোথায় কখন কাকে দিয়ে টাইপ করিয়েছেন?

উত্তরঃ স্মরণে নেই।

প্রশ্ন: এজাহার, তারিখ ও তথ্য আপনার বলা অনুযায়ী টাইপ করেছিল?

উত্তর: কাকে দিয়ে টাইপ করিয়েছি বা স্থান আমি বলতে চাই না।

আদালত – আপনি কেনো বলতে চান না?

উত্তর: ক্ষতি হতে পারে তাই বলতে চাচ্ছি না।

প্রশ্ন: এজাহারে টাইপিং তারিখ তথ্য এগুলো আপনি দেখেছেন?

উত্তরঃ হ্যাঁ, দেখেছি।

প্রশ্নঃ মামলা করার সময় বই, হাতে লেখা কাগজপত্র আপনি ওসিকে দেখিয়েছেন?

উত্তর: হ্যাঁ, দেখানো হয়েছে।

প্রশ্ন: পুলিশকে হাতের লেখা,বইয়ের কোনো ফটোকপি দিয়েছিলেন?

উত্তর: স্মরণে নেই।

প্রশ্ন: এজাহারে এরকম কিছু উল্লেখ আছে?

উত্তর: স্মরণে নেই।

প্রশ্নঃ এজাহারের ৪ নম্বর কলামে অভিযোগ ব্যতীত অন্য লেখা আছে কিনা?

উত্তর: স্মরণে নেই।

প্রশ্ন: আপনি বই বা অন্যকিছু থানায় নেননি বলে এখানে লিখেছেন।

উত্তর: সঠিক নয়।

প্রশ্ন: আপনি বইটি উল্টিয়ে দেখেছেন?

উত্তর: দেখেছি।

প্রশ্ন: বইয়ের কয়টি অধ্যায় আছে?

উত্তর: স্মরণে নেই।

প্রশ্ন: বইয়ের শেষ উপসংহার পড়েছেন কি না?

উত্তর: না।

প্রশ্ন: ওই বইয়ের আগে বা পরে পড়েছেন?

বিজ্ঞাপন

উত্তর: স্মরণে নেই।

প্রশ্ন: বাবুল আক্তার নামটা বইয়ের কোনো জায়গায় উল্লেখ আছে কিনা?

উত্তর: মনে হয় নেই।

প্রশ্ন: আপনার মামলায় তৎকালীন তদন্ত অফিসার ইন্সপেক্টর কবিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা?

উত্তর: হ্যাঁ।

প্রশ্ন: আইওকে বইপত্র দেখানো হয়েছে?

উত্তর: হ্যাঁ। দেখে আবার ফেরত দিয়ে দিয়েছে।

প্রশ্ন: এরপর আপনি কোথায় যান?

উত্তর: একটি আবাসিক হোটেলে। তবে নাম মনে নেই।

প্রশ্ন: হোটেল পাঁচলাইশ থানার কোনদিকে?

উত্তর: মনে করতে পারছি না।

প্রশ্ন: হোটেলে কয়দিন ছিলেন?

উত্তর: একদিন। পরে আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম।

প্রশ্ন: পরের দিন সকালে আত্মীয়ের বাসায় কখন গিয়েছেন?

উত্তর: সকাল ১০টায়।

প্রশ্ন: ওই আত্মীয়ের বাসায় কয়দিন ছিলেন?

উত্তর: তিন থেকে চারদিন ছিলাম। ১১ তারিখ থেকে ১৬ তারিখ। তারপর ঢাকায় চলে যাই।

প্রশ্ন: পিবিআই অফিস ছিল আপনার সেই পরম আত্মীয়ের ঠিকানা। তাদের তৈরিকৃত তারিখ বিহীন এজাহারে আপনার স্বাক্ষর করার পর মামলা করেন।

উত্তর: সত্য নয়

প্রশ্ন: সেদিন আপনি ঢাকা থেকে কীভাবে এসেছিলেন?

উত্তর: ভাড়া করা মাইক্রো বাসে এসেছিলাম।

প্রশ্ন: যে ক’দিন চট্টগ্রামে ছিলেন ওই গাড়ি ব্যবহার করছিলেন?

উত্তর: না।

প্রশ্ন: রেন্ট-এ গাড়ি কোন অফিস থেকে, কোথায় থেকে ভাড়া নিয়েছেন বা চালকের নাম বলতে পারবেন?

উত্তর: বলতে পারব না।

প্রশ্ন: যাওয়ার সময় কি গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন?

উত্তর: বাসে করে গিয়েছি।

প্রশ্ন: কয় তারিখ, কোন গাড়িতে বা কোন বাসে, কোন সময়ে গিয়েছিলেন?

উত্তর: স্মরণে নেই।

প্রশ্ন: আপনার যাওয়া আসা, খাওয়া-দাওয়া সব পিবিআই’র গাড়িতে করেছেন ও তাদের তত্ত্বাবধানে হয়েছে বলে বিধায় ওগুলো স্মরণ নেই বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন?

উত্তর: সত্য নয়

প্রশ্ন: আপনি যা বলেছেন সব বানোয়াট ও মিথ্যা?

উত্তর: সত্য নয়।

প্রশ্নঃ আপনি পাঁচলাইশ থানায় মামলা করতে যাওয়ার সময় পিবিআইয়ের কেউ গিয়েছিল?

উত্তর: না, যাইনি।

প্রশ্ন: আপনার এজাহারটা কত প্যারা?

উত্তর: স্মরণে নাই।

প্রশ্ন: প্রথম প্যারা ও শেষ প্যারায় কি আছে সেটাও মনে নেই?

উত্তর: না নেই।

প্রশ্ন” এজাহারের একটি জায়গায় ইংরেজীতে অনেক কিছু লিখেছেন। আপনি কি সেটা বলতে পারবেন?

উত্তর: আংশিক বলতে পারবো।

প্রশ্ন: শুরুটা একটু বলুন।

উত্তরঃ বাবুল আক্তারকে বান্ধবীর ২৯টি ইংরেজি ম্যাসেজ ও উপহার দেওয়া দুইটি ইংরেজি বইয়ের বিষয়ে উল্লেখ আছে।

প্রশ্নঃ এজাহারটা আপনার দ্বারা প্রস্তুত নয়। তাই এখানে কি আছে বা কি নেই সেটা আপনি জানেন না। এটা অন্যর দ্বারা তৈরিকৃত।

উত্তর: সঠিক নয়।

প্রশ্ন: ওই এজহারের সব কিছু মিথ্যা।

উত্তর: সঠিক নয়।

প্রশ্ন: আসামি মুসা এই ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী বাবুল আক্তারকে খুনের ঘটনা নিশ্চিত করেছে তা আপনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন?

উত্তর: না, লিখি নি।

প্রশ্ন: ‘কোপাইলি ক্যান’- এই রেকর্ডটা আপনি শুনেছেন?

উত্তর: শুনিনি।

প্রশ্ন: কার থেকে শুনেছেন?

উত্তরঃ এই কথা আমি পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে জেনেছি। ঘটনার দিনই শুনেছি।

প্রশ্ন: আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার আগে আপনি লিখিতভাবে কোথাও কিছু জানিয়েছেন কি?

উত্তর: না, জানাইনি।

প্রশ্ন: ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপনার ঢাকার বাসায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অত্র থানার ওসি চারঘণ্টা ধরে আপনাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কিনা?

উত্তর: হ্যাঁ করেছে। আমি, আমার স্ত্রী ও আমার ছোট মেয়েকে মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

প্রশ্ন: আপনি লিখিত কিছু দিয়েছেন কিনা?

উত্তর: আমি ২৫ থেকে ২৬টা পয়েন্ট লিখে দিয়েছি। চার থেকে পাঁচ পাতা হতে পারে।

প্রশ্ন: ওই পয়েন্টগুলো আপনি পরের দিন সাংবাদিকদের কাছেও দিয়েছেন কিনা?

উত্তর: হ্যাঁ, এই বিষয়ে আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছি।

প্রশ্ন: আপনি সেদিন বলেছিলেন এসআই আকরামের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার কারণে বাবুল আক্তার আপনার মেয়েকে হত্যা করেছে?

উত্তর: না, সত্য নয়।

প্রশ্ন: আপনি সেখানে বলেছিলেন- এসআই আকরামকে খুলনায় দুর্ঘটনার নামে বাবুল আক্তার খুন করেছে। আরও বলেছেন একরাম ও মিতু হত্যা একই সূত্রে গাঁথা। কারণ বাবুল আকরামের স্ত্রীকে পেতে চেয়েছিল।

উত্তর: আকরামের স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের কথা বলেছি। তবে সে কারণে বাবুল আক্তার আমার মেয়েকে হত্যা করেছে একথা বলিনি। এ ঘটনা মিতু হত্যার অনেক আগের।

প্রশ্ন: ওইদিন আপনি আকরামের স্ত্রীর কথা বলেছেন, তবে ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর’ কথা আনেননি, ঠিক কি না ?

উত্তর: স্মরণে নেই।

প্রশ্ন: আপনাদের পরিবারের সদস্যরা আসার আগেই বাবুল আক্তার ঘটনাস্থলে পোঁছে ?

উত্তর: হ্যাঁ সত্য।

প্রশ্ন: পথিমধ্যে আপনি চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার, ও অন্যন্য পুলিশ অফিসারদের কল দিয়ে বলেছেন আপনার মেয়েকে হত্যার পেছনে বাবুল আক্তারের ইন্ধন আছে এটা আপনি ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে সাংবাদিকদের বলেছেন কিনা?

উত্তর: স্মরণে নেই।

প্রশ্ন: মিতু চট্টগ্রাম শহরে মারা গেছে। তার সুরতহালের সময় তখন আপনি ছিলেন না?

উত্তর: না, ছিলাম না।

প্রশ্ন: এরপর আপনি কতদিন পর চট্টগ্রাম শহরে এসেছেন?

উত্তর: দুই-তিনদিন পর এসেছি।

প্রশ্নঃ খুলনা জেলার ওসি হিসেবে কোন থানা থেকে রিটায়ারে গিয়েছেন?

উত্তর: ডিআইও ওয়ান

প্রশ্ন: আপনার তো ছেলে সন্তান নেই ? দুটি কন্যা সন্তান?

উত্তর: হ্যাঁ

প্রশ্ন: আপনার ঢাকা শহরে কয়টা বাড়ি ও কয়তলা বিশিষ্ট?

উত্তর: ঢাকা শহরে আমার একটি দুইতলা বাড়ি আছে। এছাড়া ঝালকাঠি শহরে একটি টিনশেড অর্থাৎ সেমিপাকা বাড়ি আছে।

এসময় বাবুল আক্তার আদালতের উদ্দেশ্য বলেন ‘আমি যখনি আসি আমাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আনা হয়। আদালতে আনার সময় তো হ্যান্ডকাফ খোলা যায়।

আদালত পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন , ‘ডকের ভেতরে থাকা অবস্থায় হ্যান্ডকাফ খুলে দেওয়া হোক। তবে বাইরে গেলে নিরাপত্তার জন্য হ্যান্ডকাফ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে তারা লাগাতে পারে।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। এতে মুসা ও কালুকে পলাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সারাবাংলা/আইসি/একে

এসপি বাবুল এসপি বাবুল আক্তার মিতু হত্যা

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর