দেশে রিজার্ভ ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
৮ মে ২০২৩ ২১:৩৬
ঢাকা : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। এটি আগের সাত বছর অর্থ্যাৎ ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে।
সোমবার (৮ মে) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মাসের আমদানি বিল ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধ করায় রিজার্ভ কমে ২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ক্রমাগত ডলার সংকটের পাশাপাশি সদ্য বিদায়ী এপ্রিলে রফতানি আয় ১৬ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৭ শতাংশ কমায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যদি রিজার্ভ হিসাব করা হলে তা ৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। কারণ উল্লেখিত অর্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ ও বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রকৃত রিজার্ভ নেমে দাঁড়াবে ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারে। প্রতিমাসে ৬ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এ রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী— ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল। ওই বছরের শেষে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার, ২০২১ সালের ২৪ জুন ৩৫ বিলিয়ন ডলারে, ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলার, এরপর ২০২১ সালের ৩ মে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারে এবং ২০২১ সালের ২৪ আগষ্ট রেকর্ড পরিমাণ ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ।
আকু কী : আকু হলো আন্তঃদেশীয় এক ধরনের লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। আকুর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, ইরান ও মিয়ানমার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দফতর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে বর্তমানে শ্রীলঙ্কার আকুর সদস্য পদ নেই। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকুর সদস্য পদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
যেভাবে রিজার্ভ সৃষ্টি হয় : প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, রফতানি আয়, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ঋণ ও অনুদান, বিদেশি বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত ডলার রিজার্ভ তৈরি হয়। অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভ।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩ মে পর্যন্ত এক হাজার ২৩৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেখানে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কিনেছিল প্রায় ৭৯৩ কোটি ডলার। ডলার কেনার চেয়ে এখন বিক্রির চাপ বেশি হওয়ায় রিজার্ভ কমছে।
সারাবাংলা/জিএস/একে