Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পানি কিনে ‘টাকা না দেওয়ার’ তালিকায় চসিক-সিডিএ-পিডিবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ মে ২০২৩ ২৩:২৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শীর্ষ বিলখেলাপি দশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা, যাদের কাছে পাওনা প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মতো সেবা সংস্থাও আছে। একইসঙ্গে ১০ বিলখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে, যাদের কাছে পাওনা দেড় কোটি টাকারও বেশি।

চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, শীর্ষ খেলাপি ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি গ্রাহকের কাছে ওয়াসার শত কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব বকেয়া পড়ে আছে। বারবার তাগাদা দিয়েও তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বকেয়া বিল আদায় করতে পারছে না। কিন্তু জরুরি সার্ভিসের আওতায় থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

তবে বকেয়া আদায়ে বেসরকারি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে এবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে ওয়াসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ওয়াসার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০টি সংযোগের বিপরীতে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৯ টাকা বকেয়া আছে গণপূর্ত অধিদফতরের। ১৩টি সংযোগের বিপরীতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের কাছে বকেয়া পড়ে আছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৯১ হাজার ৮৭০ টাকা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৯১টি সংযোগ বাবদ বকেয়া রেখেছে ১ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ৫৭০ টাকা। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ২৮টি সংযোগের বিপরীতে ১ কোটি ২৪ লাখ ৭ হাজার ৬৫৪ টাকা, গৃহায়ণ ও পূর্ত অধিদফতরের আরও বিভিন্ন সংস্থা ২৪টি সংযোগের বিপরীতে ১ কোটি ৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৮ টাকা বকেয়া রেখেছে।

সিডিএ’র কাছে ১৪টি সংযোগ বাবদ ওয়াসার পাওনা আছে ৮ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮০৫ টাকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন কার্যালয়ে ১১টি সংযোগের বিপরীতে ৮০ লাখ ৬০ হাজার ২৮২ টাকা, সরকারি বিভিন্ন কলকারখানায় ১৬টি সংযোগের বিপরীতে ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৭ টাকা, পুলিশের বিভিন্ন কার্যালয়ে ৩১টি সংযোগের বিপরীতে ৬৫ লাখ ৯৭ হাজার ৩২৪ টাকা এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে ৩৪টি সংযোগের বিপরীতে ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬ টাকা বকেয়া আছে।

১০টি সরকারি সংস্থার কাছে মোট ১৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮ হাজার ৫৫৫ টাকা পাওনা আছে জানিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রানা চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি সংস্থাগুলোকে আমরা বারবার বকেয়ার জন্য তাগাদা দিই। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় তারা রাজস্ব দিতে দেরি করেন বলে আমাদের অবহিত করে। কিছু কিছু সংস্থা তিন মাস বা ছয় মাস পরপর বরাদ্দ এলে বকেয়ার কিছু অংশ পরিশোধ করে। কিন্তু পরে আবার রাজস্ব জমে যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সেবা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।’

২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী চলতি বছরের ১ জানুয়ারি শীর্ষ বিলখেলাপি সরকারি প্রতিষ্ঠানের আরও একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। সেই তালিকায়ও এই প্রতিষ্ঠানগুলোকেই শীর্ষ বিলখেলাপি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

ওয়াসার ওই তালিকা অনুযায়ী, ৫০টি সংযোগের বিপরীতে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩১ হাজার ৭২৭ টাকা বকেয়া আছে গণপূর্ত অধিদফতরের। ১৪টি সংযোগের বিপরীতে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পা অধিদফতরের কাছে বকেয়া ছিল ১ কোটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার ৬৪৮ টাকা।

গৃহায়ণ ও পূর্ত অধিদফতরের আরও বিভিন্ন সংস্থার কাছে ২৪টি সংযোগের বিপরীতে ১ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬৩ টাকা, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কাছে ২৮টি সংযোগের বিপরীতে ১ কোটি ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৫৯ টাকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে ৯১টি সংযোগ বাবদ ৯২ লাখ ৭ হাজার ৮৪২ টাকা, সিডিএ’র কাছে ১৪টি সংযোগ বাবদ ওয়াসার পাওনা আছে ৭৮ লাখ ৯ হাজার ২৭১ টাকা পাওনা আছে।

এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন কার্যালয়ে ১১টি সংযোগের বিপরীতে ৭৮ লাখ ৪ হাজার ৫৮৫ টাকা, সরকারি বিভিন্ন কলকারখানায় ১৬টি সংযোগের বিপরীতে ৭০ লাখ ১ হাজার ৯৫৭ টাকা, পুলিশের বিভিন্ন কার্যালয়ে ৩১টি সংযোগের বিপরীতে ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৯ টাকা এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে ৩৪টি সংযোগের বিপরীতে ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৫ টাকা বকেয়া আছে।

ওয়াসা কর্মকর্তা রানা চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে তালিকা প্রকাশের পর গত পাঁচ মাসে অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানই আংশিক বকেয়াও পরিশোধ করেনি।

ওয়াসার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মিলিয়ে শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে ওয়াসার পাওনা এক কোটি ৬০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৯ টাকা।

নগরীর পাথরঘাটার বংশাল রোডের বাসিন্দা আব্দুল হামিদের কাছে ২৪১ টি বিলের বিপরীতে ৬৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৮ টাকা, কে বি আমান আলী রোডের কালা মিয়ার কাছে ৪৭টি বিলের বিপরীতে ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০১ টাকা, জেমিসন মাতৃসদন হাসপাতালে ৪৪টি বিলের বিপরীতে ১২ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৬ টাকা, দামপাড়ার বাসিন্দা ডা. নুরুন্নাহার জহুরের কাছে ৯৫টি বিল বাবদ ১২ লাখ ৪ হাজার ৪৩৪ টাকা, বিবিরহাটের পূর্ণ ফ্যাশন লিমিটেডের কাছে ৫১টি বিল বাবদ ১০ লাখ ৪০ হাজার ২৩৩ টাকা পাওনা আছে।

এছাড়া পাঁচলাইশের রাজিয়া বেগমের কাছে ১১৭টি বিল বাবদ ৯ লাখ ৬২ হাজার ৩০৬ টাকা, আগ্রাবাদের প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের কাছে ৭৩টি বিল বাবদ ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৬ টাকা, দক্ষিণ খুলশীর মনজুর হাসানের কাছে ২৫৬টি বিল বাবদ ৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৬ টাকা, শেরশাহের সৈয়দ ফজলুল করীমের কাছে ১১৮টি বিল বাবদ ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৭২ টাকা পাওনা আছে।

সর্বশেষ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের মালিকানাধীন ট্রিটমেন্ট সেন্টার হাসপাতালে ১৯টি বিলের বিপরীতে ৯ লাখ ১৭ হাজার ১৭ টাকা বকেয়া পাওনা আছে।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের কাছে ওয়াসার মোট পাওনা ছিল ২ কোটি ২৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৫ টাকা।

এর মধ্যে নগরীর পাথরঘাটার বংশাল রোডের বাসিন্দা আব্দুল হামিদের কাছে ২৩৭ টি বিলের বিপরীতে ৬৩ লাখ ৫১ হাজার ৩১৪ টাকা, সাগরিকা রোডের কোস্টাল সী-ফুডস লিমিটেডের ৬০টি বিলের বিপরীতে ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩৫ টাকা, সাগরিকায় হিরো সাইকেলস লিমিটেডের কাছে ১২২টি বিলের বিপরীতে ৩১ লাখ ৫২ হাজার ৪৩১ টাকা, কোস্টাল সী-ফুডের আরেকটি কারখানায় ৬৩টি বিলের বিপরীতে ৩০ লাখ ১০ হাজার ৭৯৩ টাকা, কে বি আমান আলী রোডের কালা মিয়ার কাছে ৪৬টি বিলের বিপরীতে ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ টাকা, জেমিসন মাতৃসদন হাসপাতালে ৪০টি বিলের বিপরীতে ১১ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৯ টাকা, দামপাড়ার বাসিন্দা ডা. নুরুন্নাহার জহুরের কাছে ৯১টি বিল বাবদ ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৭১২ টাকা বিল বকেয়া ছিল।

এছাড়া আগ্রাবাদের ইস্টার্ন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে ৭১টি বিলের বিপরীতে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৬১৪ টাকা, সাগরিকা রোডে রাসেল ভেজিটেবল অয়েল মিলসের কাছে ১১২টি বিলের বিপরীতে ১০ লাখ ৪০ হাজার ১২৯ টাকা এবং বিবিরহাটের পূর্ণ ফ্যাশন লিমিটেডের কাছে ৪৭টি বিল বাবদ ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৩০ টাকা পাওনা ছিল।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রানা চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেসরকারি ক্ষেত্রে আদায়ের হার ভালো। তবে যারা দীর্ঘসময় ধরে রাজস্ব আটকে রেখেছে, আমরা এবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামব। তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

ওয়াসা পানি পানির বিল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর