Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন ঘিরে দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব আরও চরমে

আজমল হক হেলাল স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ মে ২০২৩ ১০:৩৯

ঢাকা: জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। অনেকগুলো বছর গড়িয়ে গেলেও কোন্দল কমেনি, বরং বেড়েছে।

দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেবর-ভাবির সম্পর্কে যোজন যোজন দূরত্বের মূল কারণ দলে আধিপত্য বিস্তার ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রওশন-কাদেরের দ্বন্দ্ব আরও চরমে উঠছে। নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দুইজনই মরিয়া। শুধু তাই নয় কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিএম কাদের ইতিমধ্যে জাপা দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন। বেগম রওশন এরশাদ গাজীপুর এবং বরিশালে সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন দিতে পারেননি। তবে খুলনা এবং রাজশাহীতে বেগম রওশন এরশাদ মেয়র প্রার্থী দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে খুলনা গফ্ফার বিশ্বাস এবং রাজশাহীতে শাহাবুদ্দিন বাচ্চুকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

জিএম কাদের ইতিমধ্যে রাজশাহীতে মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন, খুলনায় মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বরিশালে মো: ইকবাল হোসেন তাপস, সিলেটে নজরুল ইসলাম বাবুল, গাজীপুরে এম এম নিয়াজ উদ্দিনকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। আগামী ১০ মের পর বিশেষ ইঙ্গিত পেলে বেগম রওশন এরশাদ তার পক্ষ থেকে ওইসব সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দেবেন।

এদিকে, জাতীয় নির্বাচনের জন্যও বেগম রওশন এরশাদ প্রার্থী যাছাই বাছাইয়ের কার্যক্রম শুরু করেছেন। এজন্য কয়েকটি জেলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের পাঠিয়েছেন সাংগঠনিক সফরে।সাংগঠনিক সফর শেষ হলে জুনের মাঝামাঝি বেগম রওশন এরশাদ জাপা পুর্নগঠনের জন্য বর্ধিত সভা করবেন। ওই সভা থেকে দলের কাউন্সলের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে বলে সূত্রটি জানায়।

বিজ্ঞাপন

তবে এর আগে বেগম রওশন এরশাদ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ১০ দিনের জন্য থাইল্যান্ড যেতে পারেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে কাদের-রওশন দ্বন্দ্ব মিটবে কিনা তা নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

রওশন-কাদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি বেশ পুরনো। তবে গত বছর আগস্টে সেটি একেবারে প্রকাশ্যে চলে আসে। দলের চেয়ারম্যান ও প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বিরোধে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার-কাউন্সিল আহ্বান ইত্যাদি কারণে ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় দলটি।

ওই সময় থাইল্যান্ডে চিকিৎসায় ছিলেন রওশন এরশাদ। চিকিৎসা থাকাকালীন সময় অনেকটা হঠাৎ করেই জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করেন বেগম রওশন এরশাদ। এরপরই রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন জিএম কাদের। সেই সঙ্গে রওশন এরশাদকে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দিতে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে রওশনপন্থিরা আদালতে একাধিক মামলা করলে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাদের পন্থি এক নেতা বলেন, সংসদ থেকে বিএনপির দলীয় এমপিদের সাথে জিএম কাদেরও জাপার সকল এমপিদের নিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। এব্যাপারে জিএম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির চূড়ান্ত কথাও হয়। কথা হয়েছিল মহাজোট থেকে বেরিয়ে জিএম কাদের বিএনপির সঙ্গে মিলে নির্বাচন করবে। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর সরকার গঠনের পর জিএম কাদেরকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং জাপার ১০ জনকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য পদে রাখবে। এ বিষয়টি বেগম রওশন এরশাদ আঁচ করতে পেরে দলটির কাউন্সল ডেকেছিলেন। কারণ রওশন এরশাদপন্থি গ্রুপটি আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকতে চায়।

সংসদ থেকে জাপা নেতাদের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য আ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া বলেন, কথাটি সত্য নয়। জাতীয় পার্টি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই সংবিধান রক্ষার স্বার্থে ২০১৪ সাল সহ প্রত্যেকটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ কোন কিছুই জাপার অনুকূলে ছিলো না তবুও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সংসদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য জাপা নির্বাচন করে সংসদে যায়নি। কিছু লোক জাপার বিরুদ্ধে সব সময়ই কথা বলে। মূলত তারা জাপার লোক নয়।

জাপা ভাঙনের দিকে যাচ্ছে এমন গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, জাপা ভাঙার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া বেগম রওশন এরশাদ দল ভাঙার লোক নন। তিনি সবাইকে নিয়েই পথ চলতে চেয়েছেন এবং চাইছেন।

পাঁচ সিটি নির্বাচনে রওশন এরশাদের প্রার্থী দেওয়া প্রসঙ্গে পার্টির এই প্রেসিডিয়াম বলেন, প্রার্থী দিতে পারেন। তবে লাঙ্গল অর্থাৎ জাপার নাম ব্যবহার করার আইনগত সুযোগ নেই তার। জাপর নির্বাচনী প্রতীক নিবন্ধিত। বর্তমানে এই প্রতীকের দাবিদার জিএম কাদের। কারণ তিনি জাপা চেয়ারম্যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রওশন পন্থি এক নেতা বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয় নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কেউ প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। কেউ সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে সামনে এগুনোর কথা বলেছেন।

রওশন পন্থি নেতা ইশবাল হোসেন রাজু বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এসেছে। তাই আমরা এখন সাংগঠনিক সফর নিয়ে ব্যস্ত আছি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিস্থিতি সবকিছু বলে দেবে।

বিরোধী দলের উপ নেতা বেগম রওশন এরশাদকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। তবে তার মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদ বলেছেন, দলের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সবকিছু পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৫ মে। আর খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ২১ জুন। এসব ভোট হবে ইভিএমে।

আগামী অক্টোবর মাসে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। সে হিসেবে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

সারাবাংলা/ এ এইচ এইচ/ এনইউ

কোন্দল চরম জাতীয় পার্টি জিএম কাদের নির্বাচন রওশন এরশাদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর