Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পে-স্কেল নয়, চূড়ান্তের পথে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ মে ২০২৩ ১৭:৩৭

ঢাকা: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সরকার সর্বশেষ জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণা করে ২০১৫ সালে। যা এখনও চলছে। কিন্তু গত আট বছরে গ্যাস-বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে সবধরনের জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। অথচ সে তুলনায় বাড়েনি মানুষের আয়।

এদিকে, মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে সে কারণে এবারও নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করতে পারছে না সরকার। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে বাজেটে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যা বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট চূড়ান্তকরণ বৈঠকে চূড়ান্ত হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু জীবন ধারণে হিমশিম খেয়ে গত দুই বছর ধরে নবম বেতন কাঠামোর পাশাপাশি মহার্ঘ ভাতার দাবি করে আসছে সরকারি চাকরিজীবীরা। এমন প্রেক্ষাপটে বৈষম্যহীন বেতন কাঠামোর পাশাপাশি ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আগামী ২৬ মে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ’।

নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ বছর পর পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করার কথা। সেই হিসাবে ২০২০ সালে নবম বেতন কাঠামো পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে তা হয়নি। তবে সর্বশেষ ২০১৫ সালে অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণা হলেও প্রতিবছর সরকারি চাকরিজীবীরা ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন।

এদিকে, করোনা মহামারি পর নতুন করে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যে কারণে বিশ্ববাজার অস্থিতিশীল। এতে সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সবধরনের পণ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে দাবি উঠেছে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার। এই পরিস্থিতিতে বাজেটকে সামনে রেখে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বাজেটকে সামনে রেখে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের খসড়া চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে এখনো মহার্ঘ ভাতা খাতে কোনো বরাদ্দ ঠিক করা হয়নি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেট চূড়ান্তকরণ বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ ভাতার প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, ‘এটা নিশ্চিত যে, আসছে বাজেটে নতুন পে-স্কেল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবীরা দীর্ঘ দিন ধরে আশা করছিলেন যে, আসছে বাজেটে তারা নতুন পে-স্কেল পাবেন। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন পে-স্কেলের সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তবে আসছে বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে বাজেট চূড়ান্তকরণ বৈঠকে সিদ্ধান্ত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ১১ গ্রেড থেকে ২০ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের টিফিন ভাতা বাড়ানোর পক্ষে প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম। আর সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের জন্য প্রদেয় শিক্ষাসহায়ক ভাতা, সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক নঈম মোহাম্মদ মারুফ।

ওই দুই জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব আমলে নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের চিকিৎসা ভাতা, ১১ থেকে ২০ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের টিফিন ভাতা আর কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এবারের বাজেটে নতুন বেতন কাঠামো কিংবা মহার্ঘ ভাতা কোনোটিই কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

এদিকে, সরকারি চাকরিজীবীদের নবম বেতন কাঠামো ও মহার্ঘ ভাতার দাবি দীর্ঘদিনের। গেল বছরও তারা দাবি তুলে আন্দোলনের কথা বলেছিলেন। এমনকি আসছে বাজেটকে সামনে রেখে এবারও আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। নবম বেতন কাঠামো ও ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতাসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলনে নামবেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বৈষম্য হয়েছে অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার সময়। বিষয়টি আমরা যখন দেখি তখন অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণা হয়ে গেছে। যা সংশোধনের সুযোগ ছিল না। যে কারণে আমরা তখন থেকে দাবি জানিয়ে আসছি যে, নবম বেতন কাঠামো যেন হয় বৈষম্যহীন। আমরা গতবছরও বাজেটের আগে দাবি জানিয়েছি। ওই সময় সমাবেশ কর্মসূচিও দিয়েছিলাম। এবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। কারণ, আমরা যে বেতন পাচ্ছি তা বর্তমান মূল্যস্ফীতি থেকে ৪০ শতাংশ পিছিয়ে। এভাবে জীবন চলে না।’

তিনি বলেন, ‘গতবছর সমাবেশ বাতিল করেছিলাম জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে। কিন্তু, আমাদের দাবি তো পূরণ হয়নি। এমনকি দাবি প্রসঙ্গে সরকার আমাদের কোনোদিন আলোচনার জন্যও ডাকেনি।’ সরকার ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে, তারপরেও আন্দোলন করবেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন না তারা।’

এর আগে সরকার যে কয়টি মহার্ঘ ভাতা দিয়েছে তার কোনোটিই ২০ শতাংশের বেশি না। সর্বশেষ ২০১৩ সালে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয় সরকার। ওই সময় দেড় হাজার থেকে সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা বেতন বেড়েছিল সরকারি চাকরিজীবীদের।

উল্লেখ্য, নির্ধারিত সিলিং তৈরি করে শুধু মূল বেতন বাড়ানো হয় মহার্ঘ ভাতায়। সেখানে বাড়ি ভাড়া বাড়ে না। সর্বশেষ জাতীয় বেতন কাঠামো অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে বাড়ানো হবে। আর যদি ২০ শতাংশই বাড়ে তাহলে তার পরিমাণ হতে পারে এক হাজার ৬৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা। এই টাকা বাড়বে সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক, অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের। এর আওতায় পড়বেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

২০ শতাংশ নবম পে-স্কেল মহার্ঘ ভাতা

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর