২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন
১১ মে ২০২৩ ১৮:১৫
ঢাকা: পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এবারের এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরে এডিপির আকার বেড়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বক্তব্য দেন পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড.শাহনাজ আরেফিন, আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, জিইডির সদস্য ড. মো. কাউসার আহম্মেদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আব্দুল বাকী, একেএম ফজলুল হক প্রমুখ।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে এম এ মান্নান বলেন, ‘সংকটময় সময়ে এই সরকারের এটি শেষ এডিপি। এটি যাতে বাস্তবায়ন হয় সেজন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যবহত থাকবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প ধরা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সবসময়ই যেমন প্রকল্প হাতে নিই, নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ীই প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে। আমরাও এডিপি তৈরির সময় সেটি মেনে চলেছি।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘চলতি অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে। কারণ, অর্থনৈতিক সংকটের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আমরা স্থগিত করেছিলাম। এর প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে।’
এবারের এডিবিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এ খাতে ব্যয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৬১ হাজার ৮১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। তুলনামূলকভাবে বরাদ্দ বেড়েছে ১৪ হাজার ১৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি ১৪টি খাতে বরাদ্দ হলো- বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, শিক্ষায় ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলীতে ২৭ হাজার ৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যে ১৬ হাজার ১৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা এবং কৃষিতে ১০ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যান্য খাতের মধ্যে সাধারণ সরকারি সেবায় দুই হাজার ১১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, প্রতিরক্ষায় এক হাজার ১০ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় তিন হাজার ৪৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় পাঁচ হাজার ৩৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ খাতে আট হাজার ৯৯৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে দুই হাজার ২৯০ কোটি ২০ লাখ টাকা, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিতে পাঁচ হাজার ৩২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে তিন হাজার ৩১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এসব খাতে মোট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৯১৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
উন্নয়ন সহায়তায় বরাদ্দ
নতুন এডিপিতে ১০টি উন্নয়ন সহায়তা খাতেও বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সহায়তায় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়া উপজেলা উন্নয়ন সহায়তায় ৭০০ কোটি টাকা, জেলা পরিষদ বাবদ উন্নয়ন সহায়তা ৫০০ কোটি, পৌরসভা উন্নয়ন সহায়তায় ৪০০ কোটি, সিটি কর্পোরেশন উন্নয়ন সহায়তায় ৪০০ কোটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নে ৩০০ কোটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার উন্নয়ন সহায়তায় ৯৫ কোটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের জন্য উন্নয়ন সহায়তা ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য এলাকা ছাড়া) ১০০ কোটি টাকা এবং বিশেষ প্রয়োজন উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে চার হাজার ৬৯৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ সব খাতে মোট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে আট হাজার ৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বরাদ্দ
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক্ষেত্রে বরাদ্দ আছে আট হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে দুই হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল নয় হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। সেই তুলনায় বাড়ছে মাত্র এক হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা।
এডিপিতে প্রকল্প
আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্প থাকছে এক হাজার ৩০৯টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার ১১৮টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৭৮টি এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই প্রকল্প রয়েছে ২২টি। নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্পের মধ্যে বৈদেশিক অর্থায়ন রয়েছে এমন প্রকল্প আছে ২৬৭টি। এসব প্রকল্পে জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয়
আসছে এডিপিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ৩৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ৩৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ১৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ১২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ১৮ কোটি টাকা, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে ৯ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা এবং সেতু বিভাগের ৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়ে জন্য মোট বরাদ্দ এক লাখ ৯৩ হাজার ১৩২ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ প্রকল্প
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। যার পরিমাণ ৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। এ বরাদ্দ গত অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার কোটি টাকা কম। কারণ এখন কাজ শেষের পথে এসেছে। তাই বরাদ্দ কমাটা স্বাভাবিক বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। এছাড়া মাতাবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৮ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগে ৫ হাজার ৫০০ কোটি, হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ৫ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা, ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্টে ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পে ৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা এবং মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ৬৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ব্রিফিং এ জানানো হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৪৯ হাজার ১৬ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯২ হাজার ২০ কোটি টাকা ধরা হয়। তবে সম্প্রতি এডিপির আকার কাটছাট করে সংশোধিত এডিপি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। গত এপ্রিল সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নর হয়েছে ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। খরচ হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার৬৪ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম