লক্ষ্য রোগমুক্ত চিংড়ি পোনা, বাধা চোরাই ‘নপ্লি’
১২ মে ২০২৩ ১০:৪৯ | আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ ১৫:৫৩
ঢাকা: দেশে চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা’র (এসপিএফ) প্রসারে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সরকারি সহায়তায় উদ্যোক্তাদের সাধারণ হ্যাচারিকে স্পেসিফিক প্যাথোজেন ফ্রি (এসপিএফ) হ্যাচারিতে উন্নীত করা হচ্ছে, নার্সারিগুলোকেও করা হচ্ছে এসপিএফ নার্সারি।
বর্তমানে মাত্র তিনটি হ্যাচারিতে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদন হলেও শিগগির এ তালিকায় যুক্ত হবে আরও নাম। শুধু তাই নয়, রোগমুক্ত চিংড়ির পোনার প্রসারে এগিয়ে এসেছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এসিআই এগ্রিবিজনেস। প্রতিষ্ঠানটি সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জে উপজেলায় রোগবালাইমুক্ত উন্নত মানের চিংড়ির পোনা বিপণন করবে। তবে দেশে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনার প্রসারে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা চোরাই নপ্লি ও পিএল। পোনা বিপণনে ভাইরাস মুক্ত সার্টিফিকেট নিশ্চিত না করাও এর প্রসারে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় কোটি মানুষ চিংড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। লাখ লাখ মানুষের জীবিকাও তৈরি করেছে এই খাত। দেশের রফতানি আয়েও খাতটি ভূমিকা রেখে চলছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক বাজারে নানা প্রজাতির চিংড়ির চাহিদা এবং উন্নত চাষ-কৌশল প্রয়োগের অভাবে খাতটি সর্বোচ্চ সুফল নিতে পারছে না। চিংড়ি চাষের সুফল তথা চিংড়ির রফতানিকে আরও বেগবান করতে হলে এর ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজকে জোরদার করতে হবে।
খাতটিতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের অন্যতম প্রধান উপকরণ গুণগতমানসম্পন্ন পোস্ট লার্ভা বা চিংড়ি পোনার ব্যবহার। উৎপাদন বাড়াতে নির্দিষ্ট রোগবালাইমুক্ত পোনা বা স্পেসিফিক প্যাথোজেন ফ্রি (এসপিএফ) পোনার ব্যবহার মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আর এসপিএফ পোনা হচ্ছে চিংড়ির হোয়াইট স্পট, হোয়াইট-টেইল রোগসহ ১২টি রোগ বালাই মুক্ত। এই পোনার বেঁচে থাকার হার নন-এসপিএফ এর তুলনায় প্রায় কয়েকগুণ বেশি।
এদিকে, মা চিংড়ি ডিম ছাড়ার পর সেটি যখন ফুটে তাই ‘নপ্লি’। ২২ থেকে ২৪ দিন পর ওই ‘নপ্লি’ থেকেই চিংড়ির পোনা হয়। আর ভারত থেকে চোরাইপথে আসা রোগযুক্ত ওই ‘নপ্লি’ ব্যবহার করে বাংলাদেশে চিংড়ি চাষে রোগের বিস্তার ঘটছে। একইসঙ্গে সমুদ্র থেকে মা চিংড়ি সংগ্রহ করে পোনা উৎপাদন ও বিপণনে ভাইরাস মুক্ত সার্টিফিকেট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে না পারাও রোগমুক্ত চিংড়ির পোনার প্রসারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশের মাত্র ৩ টি হ্যাচারিতে নির্দিষ্ট রোগবালাইমুক্ত পোনা বা স্পেসিফিক প্যাথোজেন ফ্রি (এসপিএফ) উৎপাদন হচ্ছে। সেগুলো হল- খুলনার দেশ বাংলা হ্যাচারি, কক্সবাজারের এমকেএ হ্যাচারি ও ফিশ ট্যাক হ্যাচারি। ২০১৫ সাল থেকে দেশে রোগমুক্ত পোনা উৎপাদনের যাত্রা শুরু হয়। বেসরকারি উদ্যোগে এসব হ্যাচারি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় পরিচালিত মৎস্য অধিদফতরের একটি প্রকল্পের অধীনে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদনে এসব হ্যাচারিসহ আরও কয়েকটি হ্যাচারি ও নার্সারিকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের তিনটি হ্যাচারিতে এখন রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদন হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদনকে উৎসাহিত করে আসছি। অনেক দিন ধরেই আমরা ট্রাই (চেষ্টা) করে আসছি। রোগবালাইমুক্ত পোনা উৎপাদনে দেশের অনেক হ্যাচারির সক্ষমতা আছে, আমরা কাজ করছি, তাদের সাপোর্ট (সমর্থন) করছি।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ পোনার কারণে দেশের চিংড়ি চাষ ব্যাহত হচ্ছে। কারণ কোন একটি রোগব্যাধির কারণে সব চিংড়ি মরে যাচ্ছে, মরক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। কয়েক বছর পর দেশে আর সাধারণ চিংড়ির পোনা উৎপাদন করা যাবে না। আমরা হয়তো আর এক দুই বছর পর নিয়ম করে সাধারণ চিংড়ির পোনা উৎপাদন বন্ধ করে দেবো। সব যায়গায় নির্দিষ্ট রোগবালাইমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদন হবে। তখন দেশে চিংড়ির উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
ভারত থেকে চোরাইপথে ‘নপ্লি’ আসা বন্ধে কোন উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘বিদেশ থেকে যে কোন পোনা আমদানি নিষিদ্ধ রয়েছে। চিংড়ির যে পরিমাণ পোনার চাহিদা রয়েছে দেশের সরবরাহ দিয়েই তা মেটানো সম্ভব। আমরা চেষ্টা করছি, চিংড়ি খাতকে আরও উন্নত করতে আমরা সব ধরণের সহায়তা অব্যাহত রাখবো।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারি অনুষদের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোগমুক্ত চিংড়িটি আমাদের দেশেরই চিংড়ি, তবে তা রোগমুক্ত। আমেরিকার একটি ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করে চিংড়িটিকে রোগবালাইমুক্ত করা হয়েছে। সরকার দেশের কয়েকটি হ্যাচারিতে তা উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। দেশে বঙ্গোপসাগর থেকে মা ও বাবা চিংড়ি এনে হ্যাচারিতে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়, এতে চিংড়িতে অনেক রোগ থেকে যায়। ওই পোনা দিয়ে চাষ করলে এক সময় অনেক চিংড়ি মারা যায়। হোয়াইট স্পট ভাইরাসে আক্রান্ত চিংড়ি চাষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে, বাংলাদেশেও তা শুরু হয়েছে।’
রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদনে প্রকল্প: দেশে নির্দিষ্ট রোগবালাইমুক্ত চিংড়ির পোনা বা স্পেসিফিক প্যাথোজেন ফ্রি (এসপিএফ) উৎপাদনে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ এর অধীনে এসপিএফ হ্যাচারি ও নার্সারি তৈরির কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পের অধীনে ৫টি সাধারণ হ্যাচারিকে এসপিএফ হ্যাচারিতে উন্নীত করা হচ্ছে। ৮ টি সাধারণ নার্সারিকে এসপিএফ নার্সারিতে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় চলমান ওই প্রকল্পের অধীনে এসব হ্যাচারি ও নার্সারিকে সহয়তা দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পটির উপ প্রকল্প পরিচালক মনিষ কুমার মণ্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ফান্ড দেই। ওনারা (হ্যাচারি ও নার্সারির উদ্যোক্তা) বাস্তবায়ন করে। যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার বিপরীতে আমরা মনিটরিং করি। এটি বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তার প্রকল্প। ফলে সব কিছুই সঠিকভাবে তদারকি করা হয়।’
প্রকল্পের লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে ৩৬ হাজার রোগমুক্ত মা চিংড়ি তৈরি করা। ১৬৭ কোটি জীবানুমুক্ত পোস্ট লার্ভা (পিএল) তৈরি ও ১০ মেট্রিক টন পলি কীট (মা চিংড়ির খাবার) তৈরি করা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পলি কীটের বড় অংশ আমদানি হচ্ছে। দেশে সফলভাবে পলি কীট উৎপাদন করা গেলে আরও বেশি গুণগত চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা তৈরিতে প্রকল্পের ম্যাচিং গ্র্যান্ট ২৬ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২১১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে ২৬ কোটি টাকা, বাকি টাকা ব্যয় করতে হবে হ্যাচারি ও নার্সারির ওইসব উদ্যোক্তাদের। এসব হ্যাচারি ও নার্সারি নির্বাচন করা হয়েছে বিভন্ন মানদণ্ড বিবেচনায়। চিংড়ি নিয়ে এই প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের আগস্টে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজ চলবে।
যেসব হ্যাচারি ও নার্সারিকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো হল- ফিশট্যাক হ্যাচারি লিমিটেড, গোল্ডেন একুয়া শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেড, এমকেএ হ্যাচারি, এআরসি শ্রিম্প হ্যাচারি, বেঙ্গল বে হ্যাচারি, বলাকা হ্যাচারি লিমিটেড, বোরাক শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেড, কাজী এসপিএফ নার্সিং পয়েন্ট, কপোতাক্ষ্ম শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেড, মাসুম শ্রিম্প হ্যাচারি লিমিটেড, ব্লু স্টার হ্যাচারি অ্যান্ড নার্সারি, দেশ বাংলা হ্যাচারি এসপিএফ হ্যাচারি, এসআলম নার্সিং পয়েন্ট, বাধাবন এসপিএফ নার্সিং পয়েন্ট ও চিত্রা এসপিএফ নার্সিং পয়েন্ট।
জানতে চাইলে এমকেএ হ্যাচারির মালিক মঈন উদ্দিন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, আমরা ৩ থেকে ৫ টি হ্যাচারি রোগমুক্ত এসপিএফ চিংড়ির পোনা উৎপাদন করছি, বিপরীতে আরও ৪০ টি হ্যাচারি সমুদ্র থেকে মা চিংড়ি আহরণ করে চিংড়ির পোনা উৎপাদন করছে। এর অধিকাংশই রোগযুক্ত থাকে। এই মা চিংড়ি রোগযুক্ত কিনা তা শুধু পিসিআর টেস্ট করে শনাক্ত করা যায়।
যদিও আইনে প্রতিটি হ্যাচারিকে পোনা রোগমুক্ত এই প্রত্যয়ণপত্র দেওয়ার কথা, কিন্তু তা অনুসরণ করা হয়না। ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত যখন বাংলাদেশে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ, তখন চোরাইপথে অবৈধভাবে রোগযুক্ত নপ্লি আসছে। মা চিংড়ি ডিম ছাড়ার পর সেটি যখন ফুটে তাই নপ্লি। ২২ থেকে ২৪ দিন পর ‘নপ্লি’ থেকে চিংড়ির পোনা হয়। আর ওই রোগযুক্ত ‘নপ্লি’ ব্যবহার করে বাংলাদেশে চিংড়ি চাষে রোগের বিস্তার ঘটছে।
ভারতেও কিন্তু সমুদ্র থেকে মা চিংড়ি ধরা নিষিদ্ধ। অথচ আসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার উদ্দেশ্যে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষিদ্ধকালীন সময়ে রোগযুক্ত ‘নপ্লি’ বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। সরকার রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদনে নানাভাবে সহায়তা করলেও আবার তার মৎস্য আইন-২০১০ এর সঠিক প্রয়োগ না করায়, প্রায়ই রোগযুক্ত মা চিংড়ি যেমন সংগ্রহ হচ্ছে, আবার রোগযুক্ত চিংড়ির পোনাও দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
এসপিএফ পোনার বিস্তার ঘটাত প্রতিটিকে হ্যাচারিকে পিসিআর টেস্ট করে করে রোগমুক্ত সার্টিফেকেট দেওয়া বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে ভারত থেকে চোরাই পথে রোগযুক্ত নপ্লি আনা বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের সব আইন আছে, আইনের সঠিক প্রয়োগ কর হলা কৃষকরা রোগমুক্ত পোনা পাবে এবং দেশে চিংড়ির উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যাবে।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের বেঙ্গল বে হ্যাচারির মালিক সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, দেশে দুই ধরণের চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। মিষ্টি পানির গলদা চিংড়ি, লোনা পানির বাগদা চিংড়ি। দেশে বাগদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনে ৬০ টির মতো হ্যাচারি রয়েছে, তারমধ্যে কক্সবাজারে ৩২ টি হ্যাচারি চালু আছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এখনও রোগমুক্ত এসপিএফ চিংড়ির পোনা উৎপাদন শুরু করিনি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা শুরু করতে কাজ চলছে। কক্সবাজারের কয়েকটি হ্যাচারিকে সরকার সহায়তা করছে, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায়। কিন্তু প্রকল্পের অধীনে যে টাকা আমাদের দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা আমাদের খরচ করতে হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণে। সে কারণে রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা উৎপাদনে অনেকে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তারা যে টাকা দিচ্ছে, তা হ্যাচারি করার জন্য যথেষ্ট নয়।
তাদের শর্ত পূরণে বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরিতেই একজন লোক রাখতে হচ্ছে। প্রথম কিস্তি হিসাবে ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে, কিন্তু তাদের শর্ত পূরণে ৮০ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির টাকা এখনও নিইনি, আমার মতো অনেকেই নেয়নি। আমাদের দ্বিতীয় কিস্তি হিসাবে ৫০ লাখ টাকা দিবে, তার জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি লাগবে, এটা কোন ধরণের সহায়তা তা বুঝি না।
রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা বিপননে আসছে এসিআই: এদিকে রোগবালাইমুক্ত চিংড়ির পোনা বিপননে আসছে এসিআই। প্রতিষ্ঠানটি সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জে উপজেলায় রোগবালাইমুক্ত উন্নত মানের চিংড়ির পোনা বিপনন করতে যাচ্ছে। পোনা বিক্রয়ের আগে ও পরে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে চাষীদের দেয়া হবে বিশেষ সেবা। দেশের চিংড়ি চাষকে আরও বেগবান করে রফতানি বাড়াতে এসিআই এগ্রিবিজনেস এই উদ্যোগ নিয়েছে। এসিআই এগ্রোলিংক ও এমকেএ হ্যাচারির যৌথ উদ্যোগে চিংড়ির পোনা বিপনন করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজারে বিদ্যমান পোনার যেখানে মৃত্যুহার ৭০ শতাংশ সেখানে এই পোনার মৃত্যুহার মাত্র ১০ শতাংশ। এর ফলে দেশে চিংড়ির উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রফতানি আয় বাড়ার নতুন সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে এসিআই এগ্রি বিজনস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চিংড়ি রফতানি করছি প্রতিমাসে ২ মিলিয়ন ডলার। আমরা চিংড়ি পোনা উৎপাদনে নতুন ইন্ড্রাস্ট্রি করছি। সামনে আমরা চিংড়ির পোনা বিপণন করবো। সামনের মাস থেকে আড়াই থেকে তিন সেন্টিমিটার বাচ্চা দিতে পারবো, যার মরটালেটি মাত্র ১০ শতাংশ। যেখানে ট্রাডিশনাল্লি মর্টালিটি হয় ৭০ শতাংশ। এতে দেশের চিংড়ি চাষে নতুন দিগন্ত তৈরি হতে পারে।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সামগ্রিক চিংড়ি চাষে মানসম্মত পোনা নিশ্চিত করতে এসিআই এগ্রোলিংক ও এমকেএ হ্যাচারি যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে। এই যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজার থেকে ব্ল্যাক টাইগার চিংড়ির এসপিএফ পিএল উৎপাদন করে যথাযথ জৈবিক নিরাপত্তা ও আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার করে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় বিপনন করা হবে।
আবহাওয়া উপযোগী এই নির্দিষ্ট পোনা পরবর্তীতে চিংড়ি চাষিদের মাঝে সরবরাহ করা হবে। শুধু তাই নয়, এই পোনা বিক্রয়ের আগে ও পরে দেয়া হবে বিশেষ সেবা। এসিআই এগ্রোলিংক কর্মীরা চাষীর পুকুরের অবস্থা বিবেচনা করে বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী ও পরামর্শ দেবে। এতে করে চাষিরা সঠিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করতে পারবেন। এসিআই এগ্রোলিংক আশা করছে, এই প্রযুক্তি ও বিশেষ সেবার মাধ্যমে চিংড়ির উৎপাদনশীলতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও এসিআই এগ্রোলিংক চিংড়ি চাষী সমিতির মাধ্যমে চিংড়ি চাষের উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তরকরণ, চুক্তিচাষ, চিংড়িবীমা ও চাষীদের কাছ থেকে চিংড়ি ক্রয় করার পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। এর ফলে চাষীদের পাশাপাশি এসিআই এগ্রোলিংক তার চাহিদা অনুযায়ী চিংড়ি সরবরাহ পেয়ে লাভবান হবে।
চাষ থেকে শুরু করে বাজারে সরবারহ এই পুরো প্রক্রিয়াটি হবে ট্রেসেবেল বা অনুসরণযোগ্য, যার মাধ্যমে ভোক্তার আস্থা বাড়বে, গতিময় হবে রফতানি খাত এবং সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশের চিংড়ি শিল্প। রোগবালাইমুক্ত চিংড়ির পোন বিপননে এসিআই এগিয়ে আসায় দেশের চিংড়ি চাষে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনইউ