চট্টগ্রামে প্রস্তুত ১১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক
১২ মে ২০২৩ ১২:৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাত মোকাবেলায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ১ হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চাল-বিস্কুটসহ শুকনো খাবার মজুদ রেখেছে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন।
১ হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে নগরী ও জেলায় মোট ৫ লাখ এক হাজার ১১০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে জেলা প্রশাসন। সিটি করপোরেশন ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে, যাতে প্রায় এক লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে বলে দাবি সংস্থাটির।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ উপজেলা ছাড়াও নগরীতে ৭৫ হাজার ২০০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপজেলার মধ্যে উপকূলবর্তী এলাকা বাঁশখালীতে সবচেয়ে বেশি ১২২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে ৯৭ হাজার ৬০০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে ১১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে ৯২ হাজার ৮০০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন।
ফটিকছড়িতে ১১ হাজার ২০০ জনের জন্য ১১২টি, হাটহাজারিতে ৩ হাজার ৬০০ জনের জন্য ১৮টি, মীরসরাইয়ে ৬৮হাজার জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৮৫টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৬ জাচার ৫১০ জনের জন্য ২১৭টি, রাউজানে ১৬০০ জনের জন্য ২টি, সীতাকুণ্ডে ২০ হাজার জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ২৫টি, বোয়ালখালীতে ৬ হাজার ৪০০ জনের জন্য ৮টি, চন্দনাইশে ৪ হাজার ৮০০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৬টি, পটিয়ায় ৫০ হাজার ৪০০ জনের জন্য ১২৬টি, সাতকানিয়ায় ৩২০০ জনের জন্য ৪টি, আনোয়ারায় ৪৬ হাজার ৪০০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৫৮টি, লোহাগাড়ায় ৫৪০০ জনের জন্য ২৭টি এবং কর্ণফুলীতে ১০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে ৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ পরবর্তী তাৎক্ষণিক তৎপরতার জন্য ৮ হাজার ৮৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এনডিসি মো. তৌহিদুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতার জন্য ৬০৮ মেট্রিকটন চাল, সাড়ে ৩ মেট্রিকটন টোস্ট বিস্কুট, ৩ দশমিক ৪ মেট্রিকটন ড্রাই কেক, ৩০ হাজার প্যাকেট বক্স ওরস্যালাইন ও ৬০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের রেসকিউ বোট ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতির বিষয়ে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বড় বড় স্কুলগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রেখেছি। ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা প্রায় এক লাখ মানুষকে সরিয়ে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে রাখতে পারব। যেহেতু সিগন্যাল আগের মতো আছে, আমরা এখনও মাইকিং শুরু করিনি। আগামীকাল (শনিবার) সকাল থেকে মাইকিং শুরুর প্রস্তুতি আছে। লোকজনকে সরে যেতে অনুরোধ করা হবে। এরপরও কেউ সরে না গেলে আমরা তাদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাব।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বুধবার (০৯ মে) সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নগরীর দামপাড়ায় শাখা কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার কথা জানানো হয়। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯ জরুরি সেবা নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবেলায় আরবান মেডিকেল টিম, আরবান ভলান্টিয়ার ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সড়কবাতি নির্বিঘ্ন রাখার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
পানি সরবরাহ বজায় রাখার জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ৫টি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে নগরীতে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে, গ্রাহকদের অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা ৫টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। তাৎক্ষণিক যে কোনো প্রয়োজনে গ্রাহকদের ৫টি নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করেছে ওয়াসা।
দামপাড়া প্রধান কার্যালয় ফোন নম্বর ১৬১১৮/০৯৬০১২৫০০৮০০, মড–১ আগ্রাবাদ ফোন নম্বর–০২৩৩৩৩২৫২৫২, মড –২, মেহেদীবাগ ফোন নং–০২৩৩৩৩৬৭৯৭৩, মড –৩, কালুরঘাট বুস্টার ফোন নম্বর–০২৪১৩৮৮০০৬, মড–৪ , জুবিলী রোড ফোন নং–০২৩৩৩৩৫৬৭৬৮।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদফতর ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়ার পরই ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় মূল কার্যক্রম শুরু হবে।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ