Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘টাকার জন্য কী জীবন দিয়া দিমু!’

ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ মে ২০২৩ ০৯:১১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে উত্তাল সাগর। যে কারণে গভীর সাগর থেকে উপকূলে এসেছে শত শত মাছ ধরা ট্রলার। যদিও প্রজনন মৌসুম হওয়ায় গভীর সাগরে অবশ্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় সমুদ্রে ট্রলারের আনাগোণা কম। তারপরও ইতোমধ্যেই প্রায়ই পাঁচ’শ ট্রলার নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে নগরীর ফিশারিঘাটে।

গতকাল শুক্রবার (১২ মে) বিকেলে নগরীর ফিশারিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে মাছ ধরার ট্রলার। জেলেরা ব্যস্ত মাছ ধরার জাল ঠিক করতে। কেউ কেউ আড্ডায় মত্ত, আবার কেউ ব্যস্ত রাতের খাবার তৈরিতে।

বিজ্ঞাপন

নোয়াখালির রামগতি এলাকার বাসিন্দা মো. আব্বাস। তিনি যে ট্রলারে কাজ করেন তার নাম এফভি আকলিমা-২। দু’জন মাঝি ও জেলেসহ মোট ২১ জন ট্রলার নিয়ে অপেক্ষায় আছেন, কখন ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত কমবে এরপর আবার সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারবেন।

মো. আব্বাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে যাই আমরা যদি ঘূর্ণিঝড়ে জীবন দিয়ে ফালাই আমাদের বউ-ফোলারে কে দেখবো? টাকার জন্য কী জীবন দিয়া দিমু! এর জন্য আমরা চলে আইছি এইখানে। আমাদের বহুত আত্মীয়-স্বজন এই সাগরে মাছ ধরতে যাই জীবন হারাইছে। আমরা নিজেরাও যদি জীবন দি ফালাইলে আমাদের পরিবারকে কে দেখবো?’

‘আমার ফ্যামিলির মধ্যে আমি একাই টাকা কামানোর লোক আছি। ঘরে আমার অসুস্থ বউ। মা-বাবাও অসুস্থ। আমি মরি গেলে তাদের কি হবে? সরকার যদি আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াইয়া দিতো তাহলে জীবনটা কোনোমতে চালাইতে পারতাম’, বলেন তিনি।

তার সঙ্গে থাকা অন্য জেলে মো. শাহজাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাগরে থাকা মাঝিরা কল দিছিলো। ওইখানে নাকি লার (ঢেউ) বাইড়ছে। আবার আবহাওয়াও ভালা না। তাই সাগরে থাকা যেসব ট্রলার আছিলো প্রায় সবাই ফিরে আইছে। আর যারা আসতে পারে নাই ইতারাও পথে। উপকূলের কাছাকাছি চলি আইতেছে। সাগরে মাছ পাই না। সিংগেলের (সতর্ক সংকেত) মধ্যে ওইখানে থাকি কোনো লাভ আছেনি। জান বাঁচানো তো ফরজ। যতদিন সিংগেল থাকবে ততদিন এখানেই আমাদের থাকতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

ফিশারিঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ওসমান গণি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমুদ্র ধীরে ধীরে উত্তাল হচ্ছে বলে শুনেছি। চট্টগ্রাম থেকে যেসব ট্রলার মাছ ধরতে সাগরে গিয়েছে বেশিরভাগই ফিরে এসেছে। অন্যন্য জেলার ট্রলারও এখানে এসেছে। যারা আসতে পারেনি তারা কাছাকাছি উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে রওনা দিয়েছে।’

আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে, এরই মধ্যে দুই সমুদ্র বন্দরে ৮ মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর এই সমুদ্র বন্দরের আওতায় রয়েছে উপকূলীয় ১১ জেলা।

ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এসব জেলার মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে।

শুক্রবার (১২ মে) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের ১৩ তম বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাত মোকাবেলায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ১ হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চাল-বিস্কুটসহ শুকনো খাবার মজুদ রেখেছে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

১ হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে নগরী ও জেলায় মোট ৫ লাখ এক হাজার ১১০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে জেলা প্রশাসন। সিটি করপোরেশন ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে, যাতে প্রায় এক লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে বলে দাবি সংস্থাটির।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ পরবর্তী তাৎক্ষণিক তৎপরতার জন্য ৮ হাজার ৮৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ছবি: শ্যামল নন্দী, ফটোকরেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা।

সারাবাংলা/আইসি/এমও

উত্তাল সাগর ঘূর্ণিঝড় মোখা ফিশারিঘাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর