Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এগিয়ে এসেছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’, মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ মে ২০২৩ ১০:৫৪

কক্সবাজার: শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এগিয়ে এসেছে কক্সবাজারের দিকে। আবহাওয়া অধিদফতর এরইমধ্যে মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কক্সবাজারের প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে।

শনিবার (১৩ মে) থেকে জেলার সব সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা লোকজনকে কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে আসতে পারবেন। জেলায় সিসিপির ৮ হাজার ৬০০ জন এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পও ঝুঁকিতে রয়েছে, সেখানেও ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড় মোখা তুলনামূলকভাবে সেন্টমার্টিনে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। নেভি, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ সেন্টমার্টিনে ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। তাই সেখানের সরকারি স্থাপনাগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এমন তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।

শুক্রবার (১২ মে) রাত ৯টা পর্যন্ত এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী তাদের স্থাপনা এবং ওষুধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। জরুরি যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাস্তায় গাছপালা পড়ে থাকলে সেগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য বনবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।’

সভায় জানানো হয়, দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২৫ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ৫.৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩.৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩.৪ মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্রও।

বিজ্ঞাপন

সভায় আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা বর্তমানে কক্সবাজার থেকে ৯০০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার থাকতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, যেহেতু বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতিমুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার সব আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।’

সভায় বলা হয়, জেলায় ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারের ধারণা ক্ষমতা মোট ৫ লাখ ৫৯৯০ জনের। এছাড়া ১৩ মে শনিবার সকাল থেকে মেডিকেল দল, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, পুলিশ, নৌ পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবাইল নাম্বার- ০১৮৭২৬১৫১৩২।

সভায় বাাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন মেজর ফাহাদ। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্পর্কে আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে আমরা ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। এ সংক্রান্ত আমাদের যোগাযোগ সেল খোলা হয়েছে। আমরা আমাদের টিমের সাথে যোগাযোগ রাখবো এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত রয়েছে।’

সভায় পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। দুর্যোগকালীন লোকজনকে সহায়তা এবং সহযোগিতা করতে হয়েছে। লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।’

সভায় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান, সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ খান খলিলুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামানসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এমও

কক্সবাজার ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর