চট্টগ্রাম ব্যুরো: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আরও ঘনীভূত হয়ে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে। তাই জানমালের ক্ষতি কমাতে উপকূলীয় এলাকা, সাগর তীরবর্তী জেলে পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে নগরীর উত্তর কাট্টলীর রাণী রাসমণি ঘাট ও পতেঙ্গার আকমল আলী রোডের বেড়িবাঁধসংলগ্ন জেলা পাড়ায় গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়।
জেলেপাড়ার বাসিন্দা সরস্বতী জলদাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল রাতে প্রশাসনের লোকজন এসে আমাদের নিরাপদে সরে যেতে বলে গেছেন। তাই মধ্যরাত থেকে আমরা ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে আপাতত বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। আশ্রয়কেন্দ্র অনেক দূরে। এত জিনিস নিয়ে ওইখানে যাওয়া সম্ভব নয়।’
পাখি জলদাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে ৮ লাখ, ১০ লাখ করে দেনা-পাওনা আছে বোটগুলোতে। কার বোট কে ছেড়ে যাবে। আমরা আমাদের পরিবারকে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় পাঠিয়ে নিজেরা বোট পাহারা দিচ্ছি। আপাতত বেড়িবাঁধের উপর অস্থায়ী ক্যাম্প করে থাকছি। প্রশাসন থেকে সকালে খাবার দিয়েছে। দুপুরে ও রাতেও দেবে বলে শুনেছি।’
গীতা জলদাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি এলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কই যাবো? ঘূর্ণিঝড় এলে নিরাপত্তার আত্মীয়-স্বজনের ঘরে যাবো। আপাতত পরিবার নিয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছি।’
আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে এরই মধ্যে দুই সমুদ্র বন্দরে ৮ মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর এই সমুদ্র বন্দরের আওতায় রয়েছে উপকূলীয় ১১ জেলা।
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এসব জেলার মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে।
শুক্রবার (১২ মে) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের ১৩তম বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাত মোকাবেলায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ১ হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চাল-বিস্কুটসহ শুকনো খাবার মজুদ রেখেছে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
১ হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে নগরী ও জেলায় মোট ৫ লাখ এক হাজার ১১০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে জেলা প্রশাসন। সিটি করপোরেশন ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে, যাতে প্রায় এক লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে বলে দাবি সংস্থাটির।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ পরবর্তী তাৎক্ষণিক তৎপরতার জন্য ৮ হাজার ৮৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপকূলবর্তী এলাকা পরিদর্শনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক
নগরীর উপকূলবর্তী পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ জেলেপল্লীর জনগণকে সরাতে এসব এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
শুক্রবার (১২ মে) রাতে জেলেপল্লী এলাকার জনগণকে তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুপুরের মধ্যে আকমল আলী ঘাট, রাণি রাসমনি ঘাট ও পতেঙ্গা এলাকার উপকূলবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৪-৫ হাজার জেলে পরিবারকে নিরাপদে অপসারণের কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ উপকূলবর্তী জেলে পরিবারের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।