‘দাবি না মানলে রাজনৈতিক ঝড় আসবে’
১৩ মে ২০২৩ ২২:৫৬
ঢাকা: নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে সামনে ‘রাজনৈতিক ঝড়’ আসবে বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১৩ মে) বিকেলে নয়াল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
গায়েবি মামলায় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি।
দুপুর ২ টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও ১২টার মধ্যেই বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। দুপুর ২টা নাগাদ ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড় পর্যন্ত সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হন।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঝড় আসছে, উত্তাল সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসছে এই বাংলাদেশের বুকে। আজ শুধু প্রাকৃতিক ঝড় আসছে, সেটা মনে করার কারণ নেই; রাজনৈতিক ঝড়ও আসছে। এই রাজনৈতিক ঝড় এদেশের মানুষের হৃদয় থেকে নিঃসরণ হয়ে তা সমস্ত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, যারা সরকারে আছেন, যারা সরকার চালাচ্ছেন, এখনও সময় আছে, আপনারা মানুষের ভাষা বুঝতে শিখুন, আপনারা মানুষের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন, চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করে তত্ত্ববধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। একথা আমরা বার বার বলেছি, আবারও বলছি-পদত্যাগ চাই। যদি সেইভ এক্সিট চান তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ সমস্ত রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। কথা খুব পরিষ্কার। এটা দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না, হতে দেব না। সাফ কথা।’
তিনি বলেন, ‘আজ এদেশের কিছু বাকি নেই। অর্থনীতি ধবংস হয়ে গেছে, কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা দুর্নীতি করে অর্থ পাচার করে বিদেশে তাদের সম্পদ গড়ে তুলছে, বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা হয়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধবংস করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বাংলাদেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য যদি একটা বাসযোগ্য আবাসভূমি নির্মাণ করতে হয় তাহলে ফের একাত্তর সালের মতোই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
বানোয়াট মামলায় কেউ বিভ্রান্ত হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে আসামি করে আওয়ামী লীগ আরেকটা নতুন মামলা দিয়েছে ৪৭ বছর পরে। কেন? আপনারা যে আন্দোলন করছেন, জনগণ যে আন্দোলন করছে এই আন্দোলনকে ডায়ভার্ট করার জন্য, বিভক্ত করার জন্য এই সমস্ত ফন্দি-ফিকির শুরু করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসবে কোনো লাভ হবে না। এই সমস্ত ধানাই-পানাই করে লাভ হবে না। ফুটবল খেলায় ক্যারি কাটা বল নিয়ে এদিক-ওদিক করে গোল দেওয়া। ওই বল দিয়ে ক্যারি কাটা করে গোল দেওয়া যাবে না। গোল দেবে এবার জনগণ। সেই সময়ের জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি। আগামী দিনে জনগণের বিজয় নিশ্চিত হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকের সমাবেশ প্রমাণ করে এদেশের মানুষ এই সরকারের বিদায় চায়। এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করে, দুর্নীতি করে, অর্থ পাচার করে দেশকে ধবংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আজ বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষ তার ভোটের অধিকার চায়। গণতন্ত্র ধ্বংসকারী সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে চায়।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ইদানিং একটা কথা বেশি করে বলছেন যে, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, তারা ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি ভিন্নপথে ক্ষমতায় আসার কথা কখনও চিন্তা করে না। কখনও ভিন্নপথে ক্ষমতায় আসেও নাই। জনগণ আজ এটা জানে যে, আপনারাই (আওয়ামী লীগ) ভিন্ন পথে ক্ষমতায় পাকাপোক্ত করতে চান। জনগণ এও বুঝে গেছে যে, মানুষ যখন চরম দুর্ভোগে তখন ৪৮ বছর পর কেন জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে মামলা করা হয়েছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা আগামী দিনে ভোট চুরির জন্য দেশে-বিদেশে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। মিথ্যাচার করে বিদেশিদের গ্রহণযোগ্যতা আদায়ের চেষ্টা করছে। যুক্তরাজ্য সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর কোনো দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক হয়নি। কিন্তু সরকার বাংলাদেশের হাইকমিশনকে দিয়ে একটি মিথ্যা প্রেসরিলিজ প্রচার করেছে, যা সঠিক নয়। আমরা বলতে চাই, এভাবে মিথ্যাচার করে বিদেশিদের কাছে থেকে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যাবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন০ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল মালেক রতন, মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, রকিবুল ইসলাম বুকুল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম