Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড় থেকে এখনও সরাতে হচ্ছে লোকজনকে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ মে ২০২৩ ১৭:২৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবের মধ্যে প্রাণহানি এড়াতে এখনও পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে আরও ১০০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

রোববার (১৪ মে) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা অভিযানে নগরীর লালখান বাজারের মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতি থেকে বাসিন্দাদের সরানো হয় বলে জানান জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম।

অভিযানে এনডিসি ছাড়াও জেলা প্রশাসনের বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জামিউল হিকমাহ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলালসহ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের টিম অভিযানে অংশ নেয়।

এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুইদিন ধরে আমরা মাইকিং করে বারবার বাসিন্দাদের পাহাড় থেকে সরে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করছি। তারপরও অনেকে পাহাড়ে রয়ে গেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকায় আমরা গত (শনিবার) রাত থেকে বাসিন্দাদের অপসারণ শুরু করেছি। আজ ১০০ পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৬০টি ঘর চিহ্নিত করে কাউন্সিলরকে বলা হয়েছে বিকেলের মধ্যে তাদের সরিয়ে নিতে।’

অভিযানে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ খাড়া পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা ঘরে বাসিন্দারা বসবাস করে আসছিল। এসব ঘর অতি বৃষ্টিতে চরম ঝুঁকিপূর্ণ।

এর আগে, শনিবার রাতে নগরীর নগরীর আকবর শাহ থানার ফয়’সলেক সংলগ্ন ঝিল পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ১৫০ পরিবারকে সরিয়ে নেয় জেলা প্রশাসন। নগরীর পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রায় ছয় হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার তথ্য দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এর আগে, শুক্রবার (১২ মে) সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ২৬ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে একযোগে মাইকিং শুরু করে জেলা প্রশাসন। এসব পাহাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি পরিবার বসবাস করে বলে সংস্থাটি তথ্য দিয়েছে।

নগরীর আকবর শাহ থানার ফয়’সলেক সংলগ্ন তিনটি ঝিল, শান্তিনগর, লালখান বাজারের মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, পোড়াকলোনি পাহাড়, আমিন জুট মিল পাহাড়, টাংকির পাহাড়, ভেড়া ফকিরের পাহাড়, বার্মা কলোনির পাহাড়ে শনিবার সকাল থেকে মাইকিং করতে দেখা গেছে। সেখান থেকে কিছু কিছু পরিবারকে ভ্যানগাড়িতে করে রান্নার সরঞ্জাম, বিছানা, আসবাবপত্র নিয়ে সরে যেতে দেখা গেছে।

জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনারদের (ভূমি) নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক টিম, সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকরা পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৫৮। পাহাড়গুলোর মধ্যে সরকারি ১৬টি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০টি। এর মধ্যে রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত বিভাগ, বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থা পাহাড়ের মালিকানায় আছে।

২০১৯ সালে সরকারিভাবে গঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি চট্টগ্রাম নগরীতে ১৭টি পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য চিহ্নিত করেছিল। প্রতিবছর বর্ষায় অবৈধ বসতি উচ্ছেদে পাহাড়ে অভিযান চালানো হলেও ক্রমশ অবৈধ বাসিন্দা বাড়ছে।

২০০৭ সালে পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে বড় ধরনের মর্মান্তিক বিপর্যয় ঘটে। ওই বছরের ১১ জুন নগরীর কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, সেনানিবাসের লেডিস ক্লাব সংলগ্ন লেবুবাগান, বায়েজিদ বোস্তামী, লালখান বাজারের মতিঝর্ণা পাহাপড়সহ সাতটি স্থানে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মারা যায় শিশু-নারী ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের ১২৭ জন।

পাহাড় ধসে ২০০৮ সালে মারা যায় ১২ জন। ২০১১ সালে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ১৭ জন, ২০১২ সালে মারা যায় ২৩ জন। এভাবে প্রতিবছরই পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়।

সারাবাংলা/ইআ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর