‘নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে’
১৫ মে ২০২৩ ১৫:২১
ঢাকা: অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে সরকারি কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে। জাতীয় স্বার্থকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে।
সোমবার (১৫ মে) দুপুরে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২৭, ১২৮ এবং ১২৯তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ১৪ বছরে বাংলাদেশটাকে পরিবর্তন করতে পেরেছি। যারা কখনো আমাদের স্বাধীনতা চায়নি তাদের অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে, চলবে। আমি তা কখনো পরোয়া করিনি। নিজের জীবনের জন্য আমার তো কোনো মায়া নেই। আমার একটাই কাজ, বাংলাদেশকে গড়ে তুলে দিয়ে যাব। বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে একটা সুন্দর জীবন দেব।
তিনি বলেন, ‘একজন মা যেমন একটি সংসারকে আগলে সবার ভালো দেখতে চান, আমি কিন্তু সেই মানসিকতা নিয়ে দেশটাকে পরিচালনা করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এখান থেকে যেন আর আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয়- সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
আইন ও প্রশাসন কোর্সের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বেতন-ভাতা যা কিছু সব জনগণের কাছ থেকে আসে। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করা সকলের কর্তব্য। এই কথা মনে রেখে সবসময় চলতে হবে।’
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের ডিজিটাল সেন্টারসহ সরকারের নানামুখী উদ্যোগগুলোর দিকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে যেন মানুষ মুক্তি পায়। কারণ এগুলো সমাজকে নষ্ট করে। একটা পরিবারকে ধ্বংস করে। সেই দিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। আমি চাই, আপনারা সেদিকে দৃষ্টি দেবেন।’
পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে অপচয় সাধন নীতি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা মেয়াদে নানামুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগ তুলে ধরেন। প্রশাসন ও আইন ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তাদের আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার এই নবীন ছেলেমেয়েরাই হবে আগামী দিনের মূল কারিগর। পরবর্তী সময়ে যারা আসবে তারাও একইভাবে এগিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে ১৪ বা ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ কী ছিল? আর ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কী পরিবর্তন হয়ে যায়নি? অবকাঠামো, শিক্ষা-দীক্ষা বা ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহারে সবদিক থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নত। বিরাট একটা পরিবর্তন আমরা নিয়ে এসেছি। এটা যেন ব্যাহত না হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি ২৯ বছর থেমে ছিল। আজ বাংলাদেশটাকে আমরা একটা জায়গায় আনতে পেরেছি। আমি এসেছি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। আমি এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পদ্মা সেতু করেছি। করতে পেরে দেখিয়ে দিয়েছি আমরা দুর্নীতি করি না। কিন্তু আমাদের সাহস আছে। আমরা কাজ করতে পারি। আমার দেশকে গড়তে পারি। আমি মনে করি, ওই একটা সিদ্ধান্তই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই এখন আমাদের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে একটু ভেবেচিন্তেই করে। কারণ, এই বাঙালিকে ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙালি জেগে উঠলে কিন্তু অসাধ্য সাধন করে ফেলতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করি যে, দেশের জনগণের সেবা করাটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ। আজকের যে বাংলাদেশ, এর গতিধারাটা যেন অব্যাহত থাকে আমার এটুকুই দাবি। এই গতি যেন থেমে না যায়।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম