জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আদালতকে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ চেয়ে আবেদন
১৫ মে ২০২৩ ১৬:৩৯
ঢাকা: সুপ্রিমকোর্টসহ সারা দেশের আদালত চত্বরে ফলদ গাছের কাঁচা ফল সংগ্রহে বিধি-নিষেধ আরোপ করে পশুপাখিদের প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের নিশ্চয়তায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ মে) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম আরিফ মন্ডল এই আবেদন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো আবেদনের অনুলিপি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সচিব, পরিবেশ সচিব, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরাবরে দেওয়া হয়েছে।
আবেদনে আইনজীবী এসএম আরিফ মন্ডল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ বাংলাদেশের সমস্ত আদালত চত্বরে বিভিন্ন ফলদ গাছ রয়েছে। ঋতু বিশেষে ফুলে-ফলে আদালত চত্বরে সুগন্ধ বিরাজ করে। গাছে গাছে ফুল ফোঁটার পর থেকে ফল পাকা অব্ধি বুলবুলি, টিয়া, কাক, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। আর বানর, কাঠবিড়ালী, বাদুর, শিয়ালের মতো পশুদের আদালত চত্ত্বরে পাকা ফলের সুমিষ্ট গন্ধে গাছের আশেপাশে বিচরণ করতে থাকে। আর এভাবেই দিনের পর দিন পশুপাখিরা ফলগুলো পাকার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। সপ্তাহের বিচারিক কার্যক্রম চলাকালীন দিনগুলোতে বিচারপ্রার্থী আইনজীবী ও বিচার সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের পদচারণার কারণে গাছে গাছে পাখিদের কিচিরমিচির সীমিত থাকে। কিন্তু রাত হলেই নির্জন আদালত চত্ত্বরে পশুপাখিরা তাদের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে পায়। এভাবেই আদালত চত্বরের গাছে বসবাসকারী পশুপাখিদের জীবনচক্র চলতে থাকে। পশুপাখিরা সাধারণত পাকা ফল খেয়ে জীবনধারণ করে। অনেক সময় দেখা যায় চত্বরে গাছের কাঁচা ফলগুলো আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে রাত্রিবেলা হারিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে আদালত প্রাঙ্গণে উন্মুক্তভাবে বেড়ে ওঠা পশুপাখিগুলো তাদের ন্যায্য প্রাকৃতিক খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের খাদ্যচক্রের ব্যাঘাত ঘটছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আদালত চত্ত্বরে গাছের ফলমূলগুলো সংশ্লিষ্ট পশুপাখিরা যাতে একচ্ছত্রভাবে খাবার হিসেবে খেতে পারে। তা নিশ্চিত করা আমাদেরই দায়িত্ব। দেশের নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত বিদ্যমান পরিবেশ বিষয়ক আইনগুলো কার্যকর করতে সময় সময় বিভিন্ন আদেশ, রায় নির্দেশনা দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জীব সম্পদের খাদ্যচক্র নিশ্চিত করা আমাদের বিচার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরও দায়বদ্ধতা আছে। আদালত চত্বরে বেড়ে উঠা পশুপাখির জীবন যাতে অযাচিত হুমকির সম্মুখীন না হয় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।
আইনজীবী আরিফ মন্ডল আবেদনে বলেন, জীব বৈচিত্র রক্ষণাবেক্ষণে আদালত চত্ত্বরকে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ বা ‘বিশেষ এলাকা’ ঘোষণা করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। জাতীয় পরিবেশ নীতি-২০১৮ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রজাতিগত ও প্রতিবেশ বৈচিত্র সংরক্ষণে আমাদের কার্যকর পদক্ষপ গ্রহণ করা উচিত। জীববৈচিত্র্যের ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আদালত চত্ত্বরে সতর্কতামূলক নীতি গ্রহণ করা আবশ্যক। ‘বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন-২০১৭’ এর ধারা- ৩২ অনুযায়ী দেশের সকল আদালত চত্বরকে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যগত স্থান হিসেবে ঘোষণা করার দাবি রাখে। এর ফলে আদালত চত্ত্বরে গাছে বসবাসকারী প্রাণীগুলো টিকে থাকবার সক্ষমতা অর্জন করবে। আদালত প্রাঙ্গণ সংশ্লিষ্টদের গাছ থেকে কাঁচা ফল অপরিকল্পিতভাবে আহরণ থেকে বিরত রাখা আবশ্যক।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এবং জেলা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আদালত চত্ত্বরে গাছের পাকা ফল প্রাকৃতিকভাবে পশু পাখিরা যাতে খেতে পারে তা সঠিকভাবে তদারকি করতে হবে। এর ফলে এ চত্বর সংশ্লিষ্ট প্রাণীদের খাদ্যচক্রে কিছু অংশে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
এতে আরও বলা হয়, সঠিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে আদালত চত্ত্বরকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বান্ধব চতুর ঘোষণর লক্ষ্যে আদালত প্রাঙ্গণের ফলাদি গাছেই সংরক্ষণপূর্বক পশুপাখিদের খাদ্যচক্র নিশ্চয়তার সঠিক নির্দেশনা আবশ্যক।
প্রতিবেশ বৈচিত্র রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের খাদ্যচক্র বাধাহীনভাবে রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সকল জেলার আদালত চত্ত্বরে ফলাদি আহরণে বিধি-নিষেধ আরোপের আদেশ দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন এই আইনজীবী।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ