মোখায় বড় ক্ষতের ছাপ সেন্টমার্টিনে, ক্ষতিগ্রস্তরা ব্যস্ত সংস্কারে
১৬ মে ২০২৩ ১২:৫৪
কক্সবাজার: অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা গভীর ক্ষতের ছাপ রেখে গেছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ ও কক্সবাজারের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সেন্টমার্টিনে। দ্বীপটির সর্বত্রই ছড়ানো রয়েছে ঝড়ের ক্ষত চিহ্ন। ক্ষতিগ্রস্থরা সব হারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সংগ্রাম শুরু করেছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঝড়ে ভূক্তভোগী মানুষদের সহায়তায় তাৎক্ষণিক খাদ্য বিতরণসহ সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিন সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে দেখা যায়, দ্বীপের সর্বত্রই বিরাজ করছে মোখা তান্ডবের ক্ষতের চিহ্ন। সেন্টমার্টিন বাজারে থাকা তিনশতাধিক দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাউনি উড়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে অংশ বিশেষ। এ ছাড়া দ্বীপের এক হাজার ২০০টি বসত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে ব্যাপক সংখক গাছ। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ব্যস্ত সময় কাটছে সংস্কার কাজে।
সেন্টমার্টিন বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, তার মুদির দোকানের অর্ধেক অংশ ভেঙ্গে গেছে। উড়ে গেছে টিন। যা মালামাল ছিল তাও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যা আছে তা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
কোনারপাড়ার কটেজ মালিক আবু তালেব জানান, কটেজের ১০ কক্ষের টিন উড়ে গেছে। একটি অংশও ভেঙ্গে গেছে।
আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটির বাজার হয়ে পশ্চিম পাড়ার সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্ট জুড়ে রয়েছে গাছ ভেঙ্গে যাওয়ার অস্থিত্ব। যদিও এর মধ্যে সড়ক থেকে গাছ কেটে চলাচল উপযোগি করা হয়েছে। তবে সড়কের দুই পাশে অবস্থিত আধা পাকা ঘর, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ছোট্ট মানের কটেজ আংশিক বা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।
পশ্চিম পাড়ার সৈয়দ আলম নামে এক জেলে জানান, সাগরে মাছ ধরে জীবিকা পরিচালনা করেন তিনি। স্ত্রী তিন সন্তান নিয়ে সংসার। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। ফিরে এসে দেখেন ঘরটি ভেঙ্গে গেছে।
কোনাপাড়া এলাকার শফি আলম নামে এক যুবক জানান, পুরো দ্বীপ এখন শ্রীহীন হয়ে উঠেছে। আগের অবস্থায় ফিরতে আরও অনেক সময় লাগবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের এক হাজার ২০০ ঘর ও কটেজ ভেঙ্গে গেছে। তার মধ্যে এক হাজার বসত ঘর। দ্বীপের দুই হাজারের বেশি গাছ ভেঙ্গে গেছে। দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, মাঝেরপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচের রয়েছেন। জেলা প্রশাসক দ্বীপ পরিদর্শনে এসে শুকানো খাবার বিতরণ করেছেন। একইসঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের এক হাজার ঘর, টেকনাফের অন্যান্য উপক‚লীয় এলাকায় তিন হাজার ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ হয়েছে।
সোমবার বিকেল ৫টার সেন্টমার্টিন পরিদর্শনে এসে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, প্রাথমিকভাবে দ্বীপের মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবারের (আজ) মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হবে। দুপুরের পর থেকে পুর্ণঃবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়ে মুল আঘাত হয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। এর বাইরে টেকনাফ উপজেলায় কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজীর সাঈফ আহমেদ বলেন, ‘ঝড়ের আঘাতে দ্বীপের প্রকৃতিগত ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় পরিবেশ-প্রতিবেশ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
সারাবাংলা/ইআ