Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

থ্যালাসেমিয়ায় চিকিৎসা অপ্রতুল, খরচ জোগাতে হিমশিম পরিবার


৮ মে ২০১৮ ১৯:০৭

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: দেশে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ৪৪ শতাংশের পরিবারেরই মাসিক আয় ১০ হাজার টাকার নিচে। অথচ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় মাসে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। সরকারিভাবেও কম করচে এই রোগের চিকিৎসার সুবিধা নেই। ফলে আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে গিয়েই নিঃস্ব হতে হচ্ছে তাদের পরিবারকে।

চিকিৎসকরা বলছেন, থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনো প্রতিষেধক বা সহজলভ্য স্থায়ী চিকিৎসা নেই। কেবল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেই এই রোগের নিরাময় সম্ভব। তবে তার খরচ অনেক বেশি। তাছাড়া ডোনারের অভাব ও বিভিন্ন ধরনের জটিলতার কারণে এই চিকিৎসাসেবা নেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়।

এর বাইরে এই রোগের চিকিৎসাও জটিল ও ব্যয়বহুল। রক্তশূন্যতা পূরণের জন্য রোগীদের প্রতিমাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। এছাড়া এদের শরীর থেকে ক্ষতিকর লৌহ বের করার জন্য যেসব ওষুধ খেতে হয়, সেগুলোও বেশ দামি। ফলে নিম্ন আয়ের পরিবারে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী থাকলে তার চিকিৎসার খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হয় পরিবারকে।

থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে সাড়ে সাত বছরের মুশফিকা খাতুন মিতুকে রক্ত দিতে নিয়ে এসছেন আব্দুল মালিক মিন্টু। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিন্টু জানালেন, ছয় মাস বয়সে মিতুর থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। তখন থেকেই তাকে নিয়মিত রক্ত দেওয়া হচ্ছে, খেতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে চলেছে তার ওষুধের পরিমাণ, কমে আসছে রক্ত দেওয়ার সময়ের ব্যবধান।

মেয়ের চিকিৎসায় এরই মধ্যে জমি বিক্রি করেছেন মিন্টু, বিক্রি করেছেন স্ত্রীর গয়নাও। মেয়েকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলার আশায় কলকাতাতেও নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কখনও হিসাব করিনি। তবে এ পর্যন্ত ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন আর কোনো টাকা-পয়সাই জমা নেই।

বিজ্ঞাপন

আব্দুল মালিক মিন্টু বলেন, সব রোগীর অভিভাবক বা পরিবার সচ্ছল না। সচ্ছলরাও একসময় রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারেন না। এই রোগের চিকিৎসায় খরচ ক্যান্সার বা কিডনির চিকিৎসার মতোই। সবার পক্ষে তো এত খরচ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এ কারণেই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য সরকারিভাবে কম খরচে চিকিৎসা চালুর আবেদন জানান তিনি।
থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেশে অপ্রতুল জানিয়ে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. মো. আব্দুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ ‍মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা হয়। কিন্তু সে সুবিধা খুবই অপ্রতুল। খরচও অনেক।’

ডা. আব্দুর রহিম বলেন, ‘যে পরিবারের মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা, সেই পরিবারের জন্য একটি শিশুর পেছনে পাঁচ হাজার টাকা করে ব্যয় করাটা স্পষ্টতই অসম্ভব। শিশুর চিকিৎসাতেই এত টাকা খরচ হয়ে গেলে ওই পরিবার চলবে কিভাবে? এত খরচের জন্যই বেশিরভাগ থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসা হয় না। অনেকটা চিকিৎসা ছাড়াই তাদের মৃত্যুবরণ করতে হয়।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘সরকারি যে দুয়েকটি হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা করানো হয়, সেগুলোতেও এই রোগীদের অন্যান্য রোগীর মতো করেই সেবা দেওয়া হয়। কিছু বেসরকারি ও এনজিও হাসপাতাল এ ক্ষেত্রে কিছু সহায়তা দিচ্ছে। তবে এত খরচ বহন করা বেশিরভাগ পরিবারের পক্ষেই সম্ভব না। তাই সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকারিভাবে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে ওষুধ ও রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে।’

থ্যালাসেমিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনজুর মোরশেদও জানালেন, জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা অন্য হাসপাতালগুলোতেও থ্যালাসেমিয়া নিয়ে আলাদা কোনো বিভাগ নেই। তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে এ রোগের চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো জায়গাই নেই। এ রোগের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সুবিধা তৈরি করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, পাশাপাশি সচেতন করতে হবে রোগীদেরও।’ সরকারিভাবে কম খরচে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে না পারলে বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসার বাইরে থেকেই প্রাণ হারাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/এমআইএস

থ্যালাসেমিয়া

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর