‘মাঠের কথা মাঠে থাকবে, আমরা থাকব জনতার সঙ্গে’
১৭ মে ২০২৩ ১৮:২৩
ঢাকা: নির্বাচনে ভোট চুরি নিয়ে বিরোধীপক্ষের সমালোচনায় কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এগুলো মাঠের কথা। মাঠের কথা মাঠে থাকবে, আমরা থাকব জনতার সঙ্গে। জনতার পাশে থাকব, জনগণের ভাগ্য পরিববর্তন করব। তাদের জন্য আমরা কাজ করে যাব। জনগণের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করে তাদের ভোটের মাধ্যমেই তো আমরা সরকারে এসেছি। কাজেই মানুষের আস্থা-বিশ্বাসটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র শক্তি। জনগণই হচ্ছে আওয়ামী লীগের একমাত্র বন্ধু।
বুধবার (১৭ মে) দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গণভবনে দলের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা ১১টার পর গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরাসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন।
সরকারের টানা মেয়াদে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের প্রসঙ্গ তুলে আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শুধু উন্নয়নশীল দেশ নয়, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সেটাও আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি। খুব স্বাভাবিকভাবে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে তাদের ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলবে আমাদের অর্জনগুলো নসাৎ করতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেস্টি (সততা) থাকলে আর পারপাসটা (উদ্দেশ্যটা) যদি সততার সঙ্গে হয় তাহলে যেকোনো জায়গায় সাফল্য আনতে পারে- এই কথাটা সবসময় মনে রাখি।। লক্ষ্য একটাই, দেশের মানুষের জীবনটা উন্নত করা, তাদের ভাগ্য পরিববর্তন করে দেওয়া। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সেই হাসি ফোটানোটাই একমাত্র কর্তব্য এবং সেটা আমরা করে যাচ্ছি। আজ যখন একজন গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ঘর দিই তখন তার মুখের হাসি আর চোখের পানি একাকার হয়ে যায়। আমার মনে হয়, এর থেকে বড় পাওয়া বা সার্থকতা আর কিছু নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্র- যেটা নিয়ে অনেকেই কথা বলে। ভোটের অধিকার; বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার কবে ছিল? পঁচাত্তর সালের পর থেকে যেভাবে ভোট চুরি, ভোট নিয়ে ও মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা হয়েছে। বরং আওয়ামী লীগের নানা পদক্ষেপের ফলে আজ বিভিন্ন সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচন পদ্ধতিটা গণমুখী হয়েছে। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এই স্লোগানের মাধ্যমে মানুষকে ভোট সম্পর্কে সচেতন করা- এটা তো আওয়ামী লীগেই করেছে। এটা তো আর কারও না।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে আইন করে দেওয়া, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নানামুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতটুকু নির্বাচন পদ্ধতিকে সংস্কার করে নিয়ে আসা বা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন- এগুলো তো আওয়ামী লীগেরই করে দেওয়া। তারপরও যখন কেউ আমাদের গণতন্ত্র ও ভোটের ছবক দিতে আসে, সেখানে আর বলার কিছু থাকে না। বরং যারা ভোট চোর ছিল, ভোট ডাকাত ছিল- তারাই এখন গণতন্ত্র চায় আর ভোটের অধিকারের কথা বলে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। জনগণের কল্যাণেই কাজ করে যাবে। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতার যে স্বপ্ন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তোলা, সেটা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের নির্দিষ্ট সংখ্যক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিনিয়র নেতারা শুরুতে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ সময় দলের নেতাদের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিভিন্ন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রসঙ্গত, ৪৩ বছর আগে দলের ঐক্যের প্রতীক হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসেন। ১৯৮১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে তিনি স্বদেশের মাটিতে ফেরেন। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশে অবস্থান করার কারণে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
১৫ আগস্টের ঘটনার পর দিশাহীন বিভক্ত আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বভার কাঁধে নিয়ে দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে এই দীর্ঘ ৪৩ বছরের পথচলায় নিজ আলোয় যাত্রার জয়রথ ছুটিয়ে বিশ্বসভায় বাংলাদেশের স্থান পাকাপোক্ত করে চলেছেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম